জাতে ওঠার পন্ডশ্রম


ভারতীয় অভিনেতা ইরফান খান মারা গেছে। বলিউডের নিবিষ্ট দর্শক বাংলাদেশীদের কাছে ইরফান খান পরিচিত নাম। হয়তো দেশী নির্মাতার সিনেমায় অভিনয়ের কারণে অনেকে তার প্রতি কিছুটা টানও অনুভব করে। অভিনেতা ইরফান খানকে নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। আরো হবে। আমি মানুষ ইরফান খানকে নিয়ে দুটো কথা বলি।

অন্য অনেক মুসলিম নামওয়ালা ভারতীয় অভিনেতার মতো ইরফান খানও তার পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে হিন্দুস্তানের মেজরিটি হিন্দুদের খুশি করার চেষ্টা করেছে। কখনো মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা পূজো করেছে। কখনো পুরোহিতের পরামর্শে নিজের নামের বানান বদলেছে।

পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম নিয়েও সে নানান আপত্তি আর অভিযোগ তুলেছে। ঈদুল আযহায় পশু যবেহ করা নিয়ে আপত্তি তুলেছে। মনের পশু বড় পশু টাইপ, যুক্তি দিয়েছে। রমাদ্বানে রোযা রাখার বিরুদ্ধে বলেছে। সেই সাথে এখনকার সময়ে নিরীহ মুসলিম হবার ওয়াজিব আমল, সন্ত্রাসবাদের জন্য মুসলিমদের দোষারোপ করার কাজটাও করেছে। কিন্তু এতোকিছুর পরও বেঁচে অবস্থায় সে তাদের মন পায়নি। তারা কখনো তাকে নিজেদের একজন মনে করেনি। সবসময় ‘অপর’ ভেবেছে। সন্দেহের চোখ দেখেছে। আর মৃত্যুর পর তারা উৎসব করেছে। তাকে শূয়োর বলে গালাগালি করেছে। যাদের বোঝার ক্ষমতা আছে তাদের জন্য এখানে শেখার অনেক কিছু আছে।

আমাদের অনেকের মধ্যে একটা ধারণা আছে যে কাফিররা ইসলামকে বোঝে না তাই মুসলিমদের ঘৃণা করে। আমরা মনে করি ঠিকঠাক বোঝানো গেলে সবাই বুঝি মুসলিম হয়ে যাবে। কিংবা আমরা যদি মনমতো ব্যাখ্যা করে ইসলামকে ‘আধুনিক সময়ের উপযোগী’ করে তুলি তাহলে বোধহয় মানুষ আমাদের মেনে নেবে। আমাদের মধ্যে অ্যাকসেপ্টেড হবার একটা তীব্র তাড়না কাজ করে।

মাদ্রাসা থেকে আসা অনেকে ভার্সিটি পড়ুয়াদের কাছে অ্যাকসেপ্টেড হতে চায়। প্র্যাকটিসিং হবার পর সমাজের কাছ থেকে ব্যাকডেইটেড ডাক শোনার ভয়ে অনেকে ‘আমিও আধুনিক’ প্রমাণে ব্যতিব্যস্ত হয়। অনেকে হিন্দুত্ববাদীদের কাছে নিজেদের নিরামিষ মুসলিম প্রমাণ করতে চায়, আবার অনেকে সাদা চামড়ার কাছে নিজেদের ‘মডারেট’ প্রমাণে ইসলামকে বদলায়। ওদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার তাড়নায় আমরা নিজেদের ভেঙ্গেচুড়ে বদলাই। অন্য মুসলিমদের খাটো করি। গালি দেই, বিশ্বাসঘাতকতা করি। আমরা নিজেদের কাফিরদের দলে ভাবতে পছন্দ করি। ঐ দলে জায়গা পাবার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা করি। নিজের ঐতিহ্য, নিজের পরিচয় নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি। ইসলামকে মনমতো বিকৃত করি। ওদের চোখে দুনিয়াকে দেখতে শিখি। আমরা ভাবি, আমরা যদি আমাদের মুসলিম পরিচয় ভুলে থাকি তাহলে ওরা মনে হয়ে ভুলে থাকবে।

কিন্তু দিনশেষে সবটুকু পণ্ডশ্রম। ওরা কখনো মেনে নেয় না। মেনে নেবেও না। ওরা ভুলে না, ভুলবেও না। দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষটির ব্যাপারে ওদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখুন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ব্যাপারে সঠিক যে তথ্যগুলো কাফিরদের সামনে আছে, সেগুলোও তারা ঘৃণা করে। তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ –কে ঘৃণা করে, তাঁর শিক্ষাকে ঘৃণা করে। কুরআনের হুকুমকে ঘৃণা করে। সাহাবাদেরকে (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) ঘৃণা করে। তারা আল্লাহ্‌ ও রাসূলের কথা মানতে রাজি না। যদি দুনিয়ার বুকে শ্রেষ্ঠ মানুষ, শ্রেষ্ঠ মুসলিম তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে আমি-আপনি কী এমন করতে পারি যাতে তারা আমাদের গ্রহণ করে নেবে?

কাফিরকে সন্তুষ্ট করা, তার সাথে খাপ খাইয়ে চলা, তার মন পাওয়ার চেষ্টা করা ইসলামের দিক থেকে ভুল তো বটেই, বুদ্ধিবিবেচনার দিক থেকেও অর্থহীন। এটা এমন ইনভেস্টমেন্ট যেখানে কখনো সফলতা আসবে না। বার বার ছাড় দিতে হবে, নিজেকে অপমানিত করতে হবে, আল্লাহ্‌র সাথে নাফরমানী করতে হবে, কিন্তু সৃষ্টি তবু সন্তুষ্ট হবে না। পরিপূর্ণভাবে কুফরকে গ্রহণ করা ছাড়া আর কিছুতে কুফফার সন্তুষ্ট হয় না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *