আমরা এমন একটা রমাদ্বান শুরু করেছি যা ইউনিক। মাসজিদ বন্ধ, কিংবা রেস্ট্রিকটেড। উমরাহ বন্ধ, তারাউয়ীহ বন্ধ। জনজীবনও স্তব্ধ। এমন কোন কিছু এর আগে আমাদের মোকাবেলা করতে হয়নি। যে পরিস্থিতির মাঝে আমরা আটকা পড়েছি তা বদলানো সামর্থ্য আমাদের নেই। কিন্তু এই সময়টা আমরা কিভাবে কাজে লাগাবো সেটা আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে।
রমাদ্বান ইবাদতের মাস। বিশেষভাবে দুটো ইবাদত -কুরআন তিলাওয়াত এবং ক্বিয়ামুল লাইল – করা এই মাসে খুব সোজা। এই লকডাউনের সময়ে আরো সোজা। শুধু একটু প্ল্যান করে এগোলেই হবে। কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে দৈনিক একটা টার্গেট সেট করে নেয়া যায়। নিয়মিত তিলাওয়াত করেন তারা ইন শা আল্লাহ্ খুব সহজে দৈনিক এক জুয (পারা) করে তিলাওয়াত করতে পারবেন। যারা অতোটা অভ্যস্ত না তারা ডেইলি অর্ধেক জুয এর টার্গেট নিতে পারেন। প্রয়োজনে আরও কমও হতে পারে। নিজের জন্য কঠিন হয়ে যায় এমন টার্গেট নেয়ার দরকার নেই। গুরুত্বপূর্ণ হল ধারাবাহিক হওয়া। ইখলাস থাকা। আমলের কোয়ালিটি ভালো হওয়া। কয়েক দিন করলাম, তারপর আলসেমি – এমন করা যাবে না।
কুরআনের কিছু অংশ মুখস্থ করার জন্যেও আমরা এ সময়টা কাজে লাগাতে পারি। আবারো, খুব বড় টার্গেট নেয়ার দরকার নেই। দৈনিক ২ আয়াত কিংবা ৫ আয়াত মুখস্থ করার টার্গেট নেয়া যেতে পারে। কেউ পারলে আরো বেশি। অল্প মনে হলেও এক মাস এই আমল ধরে রাখতে পারলে ইন শা আল্লাহ্ অনেক অগ্রগতি হবে। তাজউয়ীদ এর ক্ষেত্রে যাদের সমস্যা তারা পরিচিত কোন তালিবুল ইলম বা হাফেয ভাইয়ের সাথে ওয়াটসঅ্যাপ বা যুমে সময় ঠিক করে নিতে পারেন। এক বা আধা ঘন্টা করে দৈনিক কিংবা সপ্তাহে কয়েকদিন এখানে সময় দিলেন।
যারা এটা করতে পারবেন না তারা আরেকটা কাজ করতে পারেন। যে সূরাগুলো মুখস্থ আছে, সেগুলোর তিলাওয়াত শুনবেন। বেশ কয়েকবার। তারপর নিজের তিলাওয়াত রেকর্ড করবেন। মোবাইল/হেডফোনের মাইক যথেষ্ট। তারপর ক্বারীর তিলাওয়াতের সাথে নিজের তিলাওয়াত মেলানোর চেষ্টা করবেন। এখন অনেক কুরআন অ্যাপ আছে, যেখানে আলাদা আলাদা করে আয়াতের তিলাওয়াত শোনা যায়। এমন কোন অ্যাপ ইউয করবেন। গ্রিনটেকের কুরআন অ্যাপ আমার পছন্দের। চেষ্টা করবেন সবসময় একই ক্বারীর তিলাওয়াতের সাথে মেলানোর। এভাবে ইন শা আল্লাহ্ অনেকগুলো ভুল হয়তো সংশোধন করা সম্ভব হবে। তাজউয়ীদ, তিলাওয়াত এগুলো আসলে একজন উস্তাদের কাছে শেখা ছাড়া সঠিকভাবে শেখা যায় না। তবু যাদের কোনভাবেই এখন উস্তাদের কাছে শেখার সুযোগ নেই তারা এভাবে শিখতে পারেন।
ক্বিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় হল সেহরির জন্য কিছু ক্ষণ আগে ওঠা। এবং খুব আয়োজন করে সেহরি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা বাদ দেয়া। আমি একজনের কথা জানি সেহরিতে শুধু খেজুর খান। ৫ মিনিটে খাওয়ার শেষ। ফজরের আযানের এক বা সোয়া এক ঘন্টা আগে উঠলে এবং ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষ করলে তাহাজ্জুদের জন্য অনেক সময় পাওয়া যায়।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যে বিপদ মানুষকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে তা আসলে নিআমাত। যে নিআমাত মানুষকে আল্লাহ্র ব্যাপারে গাফেল (উদাসীন) করে তা আসলে বিপদ। আসুন আমরা এই পরিস্থিতিকে আমাদের জন্য নিআমতে পরিণত করার চেষ্টা করি।
ওয়ামা তাউফিকি ইল্লা বিল্লাহ।