বস্তুবাদী পশ্চিমা ব্যবস্থার বাস্তবতা আজ সবার সামনে পরিষ্কার। এই সভ্যতার কাছে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই। বাজার অর্থনীতির সমীকরণ সামান্য পিপিই আর ফেইস মাস্কের পেছনে খরচের গুরুত্ব বোঝে না। কিন্তু যুদ্ধবিমান, মিসাইল আর ড্রোনের পেছনে খরচ হয় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। এ সভ্যতা জীবন বাঁচাতে খরচ করতে চায় না কিন্তু মানুষ মারার প্রযুক্তির পেছনে টাকা ঢালে দিনরাত। মুসলিম ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পেছনে যে টাকা পশ্চিমারা খরচ করেছিল তার অল্প কিছু অংশ যদি তারা জীবন বাঁচানোর পেছনে খরচ করতো তাহলে আজ পরিস্থিতি হয়তো ভিন্ন হতো।
করোনা আমাদের দেখিয়েছে অ্যামেরিকার নেতৃত্বাধীন বিশাল বৈশ্বিক অর্থনীতি আসলে কতোটা ভঙ্গুর। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে ট্রাম্প গর্ব করছিল। প্রবৃদ্ধি আর ওয়ালস্ট্রিটের সম্ভাবনাময় গতিপথ নিয়ে রিপোর্ট করছিল পত্রিকাগুলো। কিন্তু করোনা ভাইরাসের আক্রমনে অ্যামেরিকান অর্থনীতি প্রায় লণ্ডভণ্ড। মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বেকার হয়ে গেছে ৪০ লক্ষ অ্যামেরিকান। আর এতো কেবল শুরু। বিশ্লেষকরা বলছে এই সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। গোল্ডম্যান স্যাক্স বলছে ১৯৩০ এর দশকের পর এমন অবস্থা অ্যামেরিকার অর্থনীতিতে আর আসেনি। হঠাৎ করে অ্যামেরিকান অর্থনীতি আইসিইউ-তে পৌছে গেছে। নিউ ইয়র্কের হসপিটালে কাতরাতে থাকা করোনা রোগীদের মতোই অ্যামেরিকার অর্থনীতিরও এখন ভেন্টিলেটর দরকার।
অর্থনীতিকে বাঁচাতে অ্যামেরিকান সরকার বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যা অ্যামেরিকার মোট জিডিপির ৩০% এর সমান! বিশেষজ্ঞরা তবু বলছে, এতো কিছু করেও হয়তো অর্থনীতির পতন থামানো যাবে না। এক দীর্ঘমেয়াদী মন্দা প্রায় নিশ্চিতভাবেই এখন বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। ইন্ট্রেস্টিং বিষয় হল, গত দুই দশকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অ্যামেরিকা মোট খরচ করেছে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। আর আজ করোনার আক্রমণ থেকে নিজ অর্থনীতিকে বাঁচাতেও অ্যামেরিকা খরচ করছে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ ۚ وَمَا هِيَ إِلَّا ذِكْرَىٰ لِلْبَشَرِ
তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে তিনি ছাড়া কেউ জানে না। আর এ বর্ণনা বস্তুত মানবজাতির জন্য এক সতর্কবাণী। [সূরা আল-মুদাসসির, ৩১]
পাশ্চাত্যের অবস্থার পাশাপাশি আমাদের বাস্তবতাও আমাদের স্পষ্টভাবে বোঝা দরকার। মুসলিম অধ্যুষিত ভূখন্ডগুলোতে করোনার আবির্ভাব আমাদের গুনাহর কারণেই। আমাদের গুনাহ এবং আল্লাহ্র নির্ধারিত পথ ও পদ্ধতি থেকে দূর সরে যাবার কারণেই আজ আমরা এই বাস্তবতার মুখোমুখি। এই বিপর্যয় আসার আগে মুসলিম ভূখন্ডগুলোর অবস্থা কেমন ছিল? আমাদের চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল অশ্লীলতা, অধঃপতন আর অনৈতিকতা। এমনকি পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে পবিত্র যে জায়গা, সেই কাবার আশেপাশেই অশ্লীলতার উৎসব চলছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। একদিকে প্রকাশ্যে নোংরামি চলছিল অন্যদিকে জেলে ছুড়ে দেয়া হচ্ছিল হচ্ছিল সত্যবাদী আলিম, দা’ঈদের আর ইসলামের কর্মীরা। পুরো মুসলিম বিশ্ব জুড়ে কারাগারগুলো আজ আলিম আর আল্লাহ্র পথের পথিকদের দিয়ে পূর্ণ। সেখানে তাদের প্রতিনিয়ত শিকার হতে হয় নির্মম নির্যাতনের। আল্লাহ্র কুরআনে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন –
وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ
তোমাদের ওপর যে বিপদআপদ আসে তা তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল। তিনি তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমাও করে দেন। [সূরা আশ-শূরা, ৩০]
যদি আমরা এই বিপর্যয় থেকে, এই শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহলে আমাদের আল্লাহ্র দিকে ফিরতে হবে। আন্তরিকভাবে তাওবাহ করতে হবে। পবিত্র রমাদ্বান আমাদের সংশোধন ও আত্মশুদ্ধির জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। এ সময়কে আমাদের কাজে লাগানো উচিৎ – ব্যক্তিগতভাবে এবং সামষ্টিকভাবে। আমাদের পরিপূর্ণভাবে ইসলামের দিকে ফিরে আসতে হবে। মানুষকে তাওহিদের দিকে ডাকতে হবে। নির্যাতিত মুসলিমদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। কথা বলতে হবে যুলুমের বিরুদ্ধে, যালিমের বিরুদ্ধে, কুফর ও শিরকের বিরুদ্ধে এবং তাগুতের বিরুদ্ধে। মানুষকে আহবান করতে আল্লাহ্র রাস্তার দিকে।
পুরো পৃথিবী আজ অন্ধকারে আটকা পড়ে গেছে। এ যেন এমন এক অন্ধকার যে অন্ধকারে যুন্নুন আলাইহিস সালাম নিজেকে আবিষ্কার করেছিলেন মাছের পেটের ভেতরে। আর এই অন্ধকার থেকে মুক্ত হবার উপায় হল যুন্নুন আলাইহিস সালাম এর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা –
فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
অতঃপর সে গভীর অন্ধকার থেকে ডেকেছিল, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; আপনি পবিত্র, মহান; আমিতো সীমালঙ্ঘনকারী। [সূরা আল-আম্বিয়া, ৮৭]