শ্বেতসন্ত্রাসের ছায়া


শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা আমাদের সাথে তাদের দ্বন্দ্বকে উপস্থাপন করে সভ্যতার সংঘাত হিসেবে। ইসলামকে তারা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে। এ ধরনের মানুষের সংখ্যা পশ্চিমা বিশ্বে দিন দিন বাড়ছে। লিবারেল পশ্চিম যা-ই বলুক না কেন, এ স্রোতের গতি ফেরানো যাবে না। যত দিন যাবে অর্থনৈতিক সংকট এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ব্যর্থতা পশ্চিমের জনগণকে তত বেশি করে ঠেলে দেবে অভিবাসন বিরোধিতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং পপুলিযমের দিকে।

এর সাথে যুক্ত করুন অর্থনীতির বিষয়টা। পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট যখন আসবে (এবং নিশ্চিতভাবেই তা আসবে ) তখন তা পশ্চিমা বিশ্বে রাতারাতি তৈরি করতে পারে এক বিশাল বেকার শ্রেণি–যারা মধ্যবিত্ত, শ্বেতাঙ্গ এবং ক্রুদ্ধ। লিবারেল আদর্শের ঐক্য, বহুত্ববাদ, সম্প্রীতির বড় বড় বুলিগুলো ফাঁকা পকেটে আর খালিপেটে তাদের কাছে অর্থহীন মনে হবে। নিজেদের চাকরিগুলো ছিনিয়ে নেয়ার জন্য তারা দায়ী করবে চোখের সামনে হেঁটে বেড়ানো রংবেরঙের অভিবাসীদের, এবং তাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ থাকবে ‘বর্বর’, ‘সন্ত্রাসী’, ‘আগ্রাসী’ মুসলিমদের ওপর। অর্থনৈতিক সংকট কীভাবে বিভিন্ন ধরনের সংখ্যালঘু এবং ভিনদেশিদের প্রতি জনবিদ্বেষ তৈরি করে তা নিয়ে বেঞ্জামিন ফ্রিডম্যানসহ বিভিন্ন অর্থনীতিবিদরা আলোচনা করেছেন। এ ধরনের বিদ্বেষের ফলে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ থেকে ইতিহাসজুড়ে বারবার জন্ম নিয়েছে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা, অরাজকতা, সন্ত্রাস এবং যুদ্ধ।

অর্থনৈতিক সংকটের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক মেরুকরণ, সামাজিক অস্থিরতা এবং আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকে চরমপন্থার মিশেল জন্ম দিতে পারে এক নিখুঁত রুদ্র ঝড়ের। সেই ঝড় মোকাবেলা করার ক্ষমতা লিবারেলিযমের ফাঁপা আদর্শের নেই। যখন পেটে লাথি পড়বে, সবকিছু ভেঙে পড়তে শুরু করবে তখন সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির বাণী দিয়ে উন্মত্ত জনতার স্রোত থামানো যাবে না। আজকের পশ্চিম হলো গতকালের দাসপ্রথা, বর্ণবাদ, উপনিবেশবাদী পাইকারি খুন আর স্প্যানিশ ইনকুইযিশানের গর্বিত উত্তরাধিকারী। ‘অপর’কে দানব হিসেবে উপস্থাপন, হত্যা, পাইকারি খুন, ব্যাপক মাত্রায় ধ্বংস–এগুলো এ সভ্যতার মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আমরা যতই চাই না কেন, আজ হঠাৎ করে এ বৈশিষ্ট্যগুলো বদলে যাবে না।

ইসলামের সাথে পশ্চিমের যুদ্ধের তীব্রতা যত বাড়বে, পশ্চিমের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির যত অবনতি হবে, ততই বাড়বে মুসলিমদের প্রতি তাদের ঘৃণা ও সহিংসতা। মুসলিম হিসেবে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত ইতিহাস এবং চলমান ঘটনাপ্রবাহ থেকে। পশ্চিমকে খুশি করা আর তাদের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা অর্থহীন, জাতিসংঘ এবং ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের’ ওপর ভরসা করা নিরেট পাগলামি। সেই সাথে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে আমরা এ আগ্রাসনের প্রতিরোধ করব। সময় ফুরিয়ে যাবার আগেই চোখ থেকে পশ্চিমা ঠুলি সরিয়ে আমাদের খুঁজতে হবে শ্বেতসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অগ্রবর্তী বাহিনীকে। আমাদের বুঝতে হবে আগ্রাসী শত্রুর বিরুদ্ধে কারা আমাদের ফার্স্ট লাইন অফ ডিফেন্স।

দিগন্তে কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে আর মাটিকে গ্রাস করে নিচ্ছে শ্বেতসন্ত্রাসের ছায়া।

চিন্তাপরাধ বইয়ের ‘শ্বেত সন্ত্রাস’ প্রবন্ধ থেকে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *