‘আসল পুরুষ’


বিলবোর্ডটা এমন একটা জায়গায় আগে থেকে সতর্ক না থাকলে এড়িয়ে যাবার আর কোন উপায় নেই। বিশাল বিলবোর্ড। একজন পুরুষ ও একজন নারী। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে। মহিলা অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে। হাতে ধরা একটা মেডেল। বিলবোর্ডের ডান কোণায় লেখা…

‘আসল পুরুষ’।

কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, ভ্রু-প্লাক করা, টাইট জিন্স আর টাইট টি-শার্ট পড়া, একে অপরের গায়ের উপর হেলান দিয়ে বসে কিছু ছেলের ছবি। সবচেয়ে সুন্দরী ছেলেকে বাছাই করার জন্য কোন এক টিভি চ্যানেলের সুন্দরী প্রতিযোগিতার “মেনয” ভার্শান। একেবারে ফ্রন্ট পেইজ অ্যাডভারটাইযমেন্ট। এই সুন্দরী প্রতিযোগিতার স্লোগান হল,

‘প্রমাণ করো তুমিই হিরো’।

এই হল আমাদের কাছে পুরুষত্বের সংজ্ঞা। আজ পুরুষের সফলতার মাপকাঠি হল তার শয্যাসঙ্গীর সংখ্যা। আর কতো জন একজন নারীকে শয্যাসঙ্গী হিসেবে পেতে চায় তা হল নারীত্বের সফলতার মাপকাঠি। ইন ফ্যাক্ট নারী আর পুরুষ পরিচয়ের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্যও এখন আর নেই। সেই একই শরীরী হিসেবনিকেশের পাল্লায় তুলে বিচার করা হয় দুজনকেই। কেউ দাতা, কেউ গ্রহীতা, কেউ ক্রেতা, কেউ বিক্রেতা, কেউ ব্যবহারকারী, কেউ ব্যবহৃতা, কেউ কামুক, কেউ কামের লক্ষ্য – পার্থক্য এইটুকুই। আমরা পুরুষ ও নারীর জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও সার্থকতাকে আজ এই গণ্ডির মাঝে আবদ্ধ করেছি।

অ্যাথলেট, অ্যাক্টর কিংবা মিউযিশিয়ান – আমাদের কাছে পুরুষত্বের রোলমডেল হল ড্রাগ অ্যাডিক্ট, দায়িত্বজ্ঞানহীন, উড়নচণ্ডী, বহুগামী, নানা ধরনের, নানা আঙ্গিকের মনোরঞ্জনকারীরা। আমাদের কাছে পুরুষত্বের রোল মডেল নিজ সন্তানের জন্মদাত্রীকে স্বীকৃতি না দেওয়া মেসি-রোনালদো, ব্যভিচারী টাইগার উডস, কিশোরসুলভ অঙ্গভঙ্গি আর আচরণের পঞ্চাশোর্ধ ব্র্যাড পিট- সালমান খান, কিংবা লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে নেংটি পড়ে মারামারি করা WWE কিংবা MMA অ্যাথলেটরা।

শারীরিক ভাবে পুরুষ হওয়া আর সত্যিকার অর্থে, চিন্তা-চেতনায়, আচরণে একজন পুরুষ হবার মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। নিছক Male হওয়া মানেই Man হওয়া না। নিজে ছোট ভাইয়ের টি-শার্ট গায়ে দিয়ে, উচ্চস্বরে হাঁকডাক করে, উদ্ভট অঙ্গভঙ্গি কিংবা নাচানাচি করে, মঞ্চে ক্যাটওয়াক করে, ভ্রু-প্লাক করে পত্রিকার ফটোশুট করে, পঞ্চাশ পেরিয়ে যাবার পরও পনেরো বছরের কিশোরের মতো আচরণ করে আমাদের সমাজ-সভ্যতার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী “হিরো” কিংবা “আসল পুরুষ” হওয়া গেলেও সত্যিকার অর্থে পুরুষত্ব অর্জন করা যায় না, Man হওয়া যায় না।

আর যদি আমরা এ সমাজ-সভ্যতার মাঝে সত্যিকারের হিরোদের, সত্যিকারের পুরুষদের খুঁজি সে খোজাও ব্যর্থ হবে। মেসি-রোনালদো, রুনি-রৌশান, পিট-পটার, বন্ড-বেকহাম, কিংবা সাকিব-মুস্তাফিজদের মধ্যে না, যদি আসল বীরত্ব, পুরুষত্বের প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে আমরা জানতে চাই তাহলে আমাদের তাকাতে হবে মুস’আব, আবু দুজানা, ইক্বরামা, খালিদ, সা’দদের জীবনীর দিকে – রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন। যদি সত্যিকারের পুরুষত্বের উদাহরণ আমরা খুঁজি তাহলে আমাদের তাকাতে হবে নুর আদ-দ্বীন, সালাহ আদ-দ্বীন, তারিক বিন যিয়াদ, উমার মুখতার, আর মুহাম্মাদ বিন কাসিমদের দিকে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *