দু বছর ধরে ৬-৮ বছরের তিনটি মেয়ের ওপর যৌন নিপীড়ন চালানোর পর শিকাগোর জৌসেফ রোমান দাবি করছে, সে আসলে পেডোফাইল (শিশুকামি) না, ট্র্যান্স-এইজ। ৩৮-বছর বয়সী রোমানের ভাষ্যমতে সে প্রাপ্তবয়স্ক শরীরে আটকে পড়া ৯ বছর বয়সী একটি ছেলে। সে যা করেছে তা শিশুকাম না। অল্প বয়সের প্রেম। অ্যামেরিকার সভ্য কালচার অনুযায়ী ৯ বছরের ছেলে আর ৬-৮ বছরের মেয়ের মধ্য শরীরী প্রেমকে অতোটা বাঁকা চোখে দেখার কথা না। রোমানের কথাগুলো কি সিরিয়াসলি নেয়ার মতো? নিজেই ভেবে দেখুন…তবে তার আগে কিছুটা ব্যাকগ্রাউন্ড।
বেশ কয়েক বছর ধরে পশ্চিমে “ট্র্যান্স-জেন্ডার” অধিকার আন্দোলন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। একটা সময় ছিল যখন পশ্চিমে ইন্টেকচুয়াল টাইপদের মধ্যে পাত্তা পেতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে সমকামি অধিকার আর সমকামি বিয়ের পক্ষে বলতে হতো। একটা সময়। এখন সেটা ওল্ড স্টোরি। হাল আমলে ইন্টেলেকচুয়াল টাইপদের মধ্যে পাত্তা পেতে হলে, সভ্য-মানবিক বিবেচিত হতে হলে, ট্র্যান্স-জেন্ডার অধিকার সমর্থন করতে হয়। বাংলাদেশী ইন্টেলেকচুয়ালরা অবশ্য তাদের স্বভাবসুলভ রীতি অনুযায়ী ১০ বছরের পুরনো ইন্টেলেকচুয়াল ট্রেন্ড কেবল অনুসরণ করতে শুরু করে নিজেদের চিন্তা জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী বিরাট তালেবর, মনে করে যাচ্ছেন। দেশী দুধভাত “ইন্টেলেকচুয়াল হতে ইচ্ছুক”-দের কথা থাক। ট্র্যান্স-জেন্ডার বিষয়টা কী, সেটা খোলাসা করা যাক।
ট্র্যান্স-জেন্ডার হল এমন কেউ, যে ভুল লিঙ্গের শরীরের আটকা পড়ে গেছে। অর্থাৎ একজন ট্র্যান্স-জেন্ডার হল এমন কেউ যে পুরুষ কিন্তু নারীদেহে আটকা পড়ে আছে। অথবা একজন নারী যে পুরুষের দেহে আটকা পড়ে গেছে। লক্ষণীয় বিষয় হল, বায়োলজিকাল হারমাফ্রোডাইট (ট্র্যান্সভেসটাইট, সহজ বাংলায় হিজড়া) আর ট্র্যান্স-জেন্ডারের মধ্যে পার্থক্য আছে। সংক্ষেপে বললে হারমাফ্রোডাইটদের ক্ষেত্রে সত্যিকার ভাবে বায়োলজিকাল কিছু বিষয় থাকে। কিন্তু ট্র্যান্স-জেন্ডারদের ক্ষেত্রে বিষয়টা মানসিক। বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ুন – [http://bit.ly/2nbTEjG, http://bit.ly/2FiZ03e]
ট্র্যান্স-জেন্ডার ট্রেন্ডের অবস্থা এমন, যে এখন ৪/৫ বছর বয়েসী কোন মেয়ে যদি পুতুলের বদলে গাড়ি দিয়ে খেলতে শুরু করে, অথবা কোন ছেলে গাড়ির বদলে পুতুল – তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং সাইকোলজিস্ট তাকে বলছে, সে সম্ভবত ভুল লিঙ্গের শরীরে আটকে পড়া একজন মানুষ। সে সার্জারি করে লিঙ্গ পরিবর্তনের কথা চিন্তা করতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় খরচ ও সহায়তা তাকে দেয়া হবে। শুধু তাই না, কোন ছেলে যদি কাল থেকে নিজেকে মেয়ে দাবি করে, আর আপনি যদি তাকে মেয়ে না বলে ছেলেই বলতে থাকেন তাহলে পশ্চিমের অনেক সভ্য জায়গাতেই তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। [http://bit.ly/2FiZ03e]
এছাড়া ট্র্যান্স-জেন্ডার লোকজন বাইনারি লিঙ্গে সন্তুষ্ট না। শুধু নারী/পুরুষ না, এর বাইরে তারা আরো কয়েক ডজন “জেন্ডার আইডেন্টিটি” আবিষ্কার করেছে। অবশ্য আন-ইন্টেলেকচুয়াল, যাহিরি/আক্ষরিক বুঝের অসভ্য মানুষেরা বলবে এটা মূলত মানসিক অসুস্থতা এবং পশ্চিমা বিশ্বের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধঃপতনের চিহ্ন ছাড়া আর কিছুই না। আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল ভুল করেন না। জেন্ডার মাত্র দুটোই, আর শয়তান এবং জ্বিন-শায়াত্বিন মানুষকে বিভিন্ন ভাবে বিভ্রান্ত করে। বাট দেন এগেইন, যাহিরি/আক্ষরিক বুঝের লোকেরা কখন কী বুজেছে? চোখ বন্ধ করে পশ্চিমা স্ট্যান্ডার্ডকে গ্রহন করে সেটার মধ্যে কলা-কসরত না দেখিয়ে পৃথিবীতে কে কবে তার মাথা খাটিয়েছে।
তো ট্র্যান্স-জেন্ডার বিষয়টা বুঝতে পারলে, “ট্র্যান্স-অন্য-সব-কিছু”ও বুঝতে পারবেন। যেমন ট্র্যান্স-রেইশাল – এমন কেউ যে ভিন্ন জাতিগোত্রের (race/ethnicity) কোন শরীরের আটকা পড়েছে। যেমন আপনি হয়তো দেখতে ডিপজলের মতো, কিন্তু আসলে আপনি সোনালি চুলের ছিপছিপে শরীর আর ঢেউ খেলানো লম্বা চুলের এক ফিনিশ যুবক। ভুল করে এই শরীরে আটকা পড়েছেন। একই ভাবে আছে, ট্র্যান্স-এইবল। এমন কেউ যে আসলে বিকলাঙ্গ – কানা, খোঁড়া অথবা লুলা। কিন্তু একটা সুস্থ-সবল শরীরে আটকা পড়েছেন। কী ভয়ঙ্কর অবস্থা! চিন্তা করা যায়?
একই রকম ভয়ঙ্কর আরেকটা কন্ডিশান হল, ট্র্যান্স-এইজ। আপনি এবার ভুল বয়সের শরীরে আটকা পড়েছেন। আপনার শরীরের বয়স হয়তো ৫৭ বছর, অথবা ৩৮। কিন্তু আসলে আপনি ৯-বছরের একটা ছেলে যে ৩৮ বছরের শরীরে আটকা পড়েছে। তবে তাতে দমে না গিয়ে এক বুক ভালোবাসা নিয়ে ৬-৮ বছর মেয়েদের সাথে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যান্ত্রিক পৃথিবীর পাথর কঙ্কাল হৃদয়ের মানুষগুলো বুঝতে পারছে না। আপনাকে শিশুকামি বলছে।
লাস্ট বাট নট দা লিস্ট – ট্র্যান্স-স্পিশিয। এমন কেউ যে ভিন্ন প্রাণীর দেহে আটকা পড়েছে। যেমন আপনি আসলে একটা কুকুর বা শূকর কিন্তু আটকা পড়েছেন মানুষের দেহে। সত্যি বলতে কি আমার কাছে অন্য সব কিছুর চেয়ে এটাকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। ফেইসবুকে অনেক সম্ভাব্য ট্র্যান্স-স্পিশিয লোকেদের লেখা দেখি। কী অবর্নণীয় দুঃখ চেপে এই প্রাণীগুলো ফেইসবুক চালায়। ভাবলেই মনে হয়, আমার মনে হয় খারাপ লাগা উচিত, তবে কেন জানি লাগে না।
যাই হোক, জৌসেফ রোমান এমনই একজন ট্র্যান্স-এইজ ব্যক্তি (কেউ আবার তাকে মানুষের দেহে আটকা পড়া শূকর ভেবে বসবেন না, প্লিয! এ ব্যাপারগুলো তাদের ইমোশানকে হার্ট করে, কেন বোঝেন না! পার্থক্যগুলো বোঝার চেষ্টা করুন)। সুতরাং তাকে আসলে বিকৃত চিন্তা বা রুচির লোক বলা সমীচিন হবে না। বরং দেশি-বিদেশি ইন্টেলেকচুয়াল হতে ইচ্ছুক-দের উচিত এখন থেকেই কিভাবে এটাকে জায়েজ করা যায় – সেটা সাধারণ বোধ-বুদ্ধি হোক কিংবা ইসলামের মানদন্ডে – তা নিয়ে চিন্তা শুরু করা। তামাদি হয়ে যাওয়া সমকামি লিবারেল এজেন্ডা নিয়ে এখন চিন্তা করে কাজ নেই। তবে এতে যদি ডলার পাবার কোন সুযোগ থাকে সেটা ভিন্ন করা। আফটার অল, অনেক
ট্র্যান্স-বুদ্ধিমান ট্র্যান্স-রিলিজিয়ান লোকজন থাকতেই পারে।
বিঃদ্রঃ এ লেখাটাকে কেউ স্যাটায়ার মনে করবেন না। আমি সিরিয়াস লোক, মজা করি না।