পাপেট মাস্টার


অধিকাংশ সমাজেই একটা অভিজাত শ্রেণী থাকে। এরা হল পিরামিডের ওপরের অংশ, পাপেট মাস্টার। সমাজ রাষ্ট্র, বা সভ্যতার মূল স্টেইকহোল্ডার এবং সুবিধাভোগী। বড় কোন পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি হারাবার থাকে এই শ্রেণীর। এই অভিজাত শ্রেণীর মূল লক্ষ্য থাকে সম্পদ, ক্ষমতা, ও শাসনের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখা ও ক্রমান্বয়ে বাড়াতে থাকা।

মার্ক্সিস্ট ব্যাখ্যা অনুযায়ী এ শ্রেণী ক্ষমতায় টিকে থাকে উৎপাদনের উপকরণ বা পুঁজিকে (capital) নিয়ন্ত্রণ করার কারণে। কিন্তু সমাজ, রাষ্ট্র বা সভ্যতাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু পুঁজি বা টাকা ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা যথেষ্ট না। মূলত প্রকৃত অভিজাত শ্রেণীর ক্ষমতার মূল উৎস হল জনসাধারণের চিন্তার কাঠামোর ও গতিপ্রকৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণ।

এ কাজটা তারা কীভাবে করে? কীভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?মাইন্ড কন্ট্রোল? ব্রেইনওয়াশিং? ম্যাস হিপনোসিস? টেলিপ্যাথি? উত্তরটা আসলে আরো সোজা, সূক্ষ এবং কম গ্ল্যামারাস।

মানুষের চিন্তাকে একটা নির্দিষ্ট খাতে প্রবাহিত করার জন্য খুলির ভেতর কোন মাইক্রোচিপ বসানোর দরকার হয় না। এমনকি পাবলিকলি কী বলা হচ্ছে, সেটাও অতোটা গুরুত্বপূর্ণ না। আপনার শুধু নিশ্চিত করতে হবে, আপনার বাছাই করা কিছু বিশ্বাস, দর্শন ও চিন্তাকে কোন তর্ক-বিতর্ক ছাড়াই মানুষ প্রমাণিত সত্য বা স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে মেনে নেবে। ব্যস। যখন আপনি এ কাজটা করতে পারবেন মানুষের চিন্তা একটা বাক্সের মধ্যে – আপনার তৈরি করা বাক্সের মধ্যে – আটকা পড়ে যাবে। যতোক্ষন কারো চিন্তা আপনার তৈরি করা কাঠামোতে আটকে থাকবে, তার চিন্তা এবং কাজ কার্যত আপনি নিয়ন্ত্রণ করবে।

গণতন্ত্র, সেক্যুলারিযম, রিলেটেভিযম (অপেক্ষবাদ), জাতিরাষ্ট্র, ব্যাংকিং, “সার্বজনীন মানবাধিকার”, “নারী অধিকার”সহ অনেক ধারণাকেই বর্তমানে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এর কোনটাই অবিসংবাদিত সত্য না হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে আদর্শিক অবস্থান নেয়া অনেক দল, আন্দোলন ও ব্যক্তি এ ধারনাগুলোকে সত্য হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। এগুলো মেনে নেয়ার মূহুর্ত থেকে তারাও কার্যত সিস্টেমের অংশে পরিণত হয়েছে। কগনিটিভ পাপেট মাস্টারদের বেঁধে দেয়া ছকে তাদের চিন্তা বাঁধা পড়ে গেছে। তাদের বিরোধিতা পরিণত হয়েছে প্রথাগত প্রথাবিরুদ্ধতায়।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *