মুসলিমদের ব্যাপারে গবেষণা করে অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় থিংক-ট্যাঙ্ক র্যান্ড কর্পোরেইশান জানিয়েছে, মুসলমানরা চার ধরণের হয়ে থাকে। সবাই একই জাতের না।
প্রথম হল, ফান্ডামেন্টালিস্ট, মৌলবাদি মুসলিম। মৌলবাদি হল সেই মুসলিম যে ইসলামকে শুধু ধর্ম মনে করে না, দ্বীন মনে করে। যে মনে করে ইসলাম শুধু কিছু বিশ্বাস, ইবাদত আর আচার-অনুষ্ঠানের নাম না, বরং ইসলাম হল একটি পলিটিকো-সোশিও-একোনমিক সিস্টেম। একটি সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, একটি শাসন ব্যবস্থা। র্যান্ডের মতে যারা এমন মনে করে, এরাই হল পশ্চিমের এক নম্বর শত্রু। যেকোন মূল্যে এদের খতম করতে হবে। ইসলামী মৌলবাদিরাই হল পশ্চিমা সভ্যতা, বিশ্বব্যবস্থা আর সংস্কৃতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
দ্বিতীয় শ্রেণী হল ট্র্যাডিশানালিস্ট। এরা হলেন আমাদের আলিমরা। যারা ক্বলাল্লাহ আর ক্বলার রাসূল নিয়ে আছেন, ফিকহে হানাফি নিয়ে পড়ছেন, বা যারা আহলে হাদিস তারা অন্য কিছু পড়ছেন। এ জাতীয় মুসলিমদের গন্ডি মসজিদ, মাদ্রাসা, শেখা-শেখানো, ফতোয়া, মাসআলা, খুতবা দেওয়া – এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর বাইরে তাদের মধ্যে নিজস্ব অন্য কোন কনসেপ্ট নেই। র্যান্ড বলছে, তাই এরা পশ্চিমা সভ্যতার জন্য হুমকি না।
কিন্তু সাবধান! যদি কখনো এরা ফান্ডামেন্টালিস্টদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে বিশাল ঝামেলা। কারণ ট্র্যাডিশানালিস্টদের সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব আছে। সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো এদের জন্য সহজ। প্রতি জুমাতেই মানুষ তাদের কথা শুনছে। ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান বা জনসমাবেশ করতেও কিন্তু মেলা ঝক্কি। জায়গা ঠিক করো, পোস্টার ছাপাও, এই করো, সেই করো – অথচ মানুষ নিজে থেকেই প্রতি শুক্রবার, গোসল করে, আতর মেখে, সুন্দর করে সেজে, ভালো কাপড় পড়ে, এদের কাছে আসছে। তাই এরা যদি ফান্ডামেন্টালিস্টদের সাথে একসাথে হয়, তাহলে সেটা অনেক বড় বিপদ।
একারণে এ দুটো শ্রেণীকে একে অপরের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। আর যারা ট্র্যাডিশানালিস্ট – আলিম – তাদেরকে নিজেদের মধ্যে মাসলাক-মাযহাব-ফিকহ ইত্যাদি বিভিন্ন তর্কে ব্যস্ত রাখতে হবে। তারা যেন নিজেদের মধ্যেই তর্কাতর্কিতে ব্যস্ত থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
তৃতীয় জাতের মুসলিম হল, মর্ডানিস্ট মুসলিম। এরা হল ঐসব লোক যারা ইসলামের নতুন নতুন ব্যাখ্যা করতে চায়। আর এসব নতুন ব্যাখ্যার পেছনে উদ্দেশ্য থাকে ইসলামকে পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থা, পশ্চিমা সভ্যতার সাথে কম্প্যাটিবল, সামঞ্জস্যপূর্ণ বানানোর চেষ্টা। র্যান্ডের পলিসি সাজেশান হল – এদের সাহায্য করতে হবে, এদের জন্য ফান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। আর বিশেষভাবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এদের প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ সাধারণ মুসলিমদের কাছে এদের তেমন একটা গ্রহনযোগ্যতা নেই। তাই মিডিয়ার মাধ্যমে এদেরকে বেশি বেশি করে মানুষের সামনে নিয়ে আসতে হবে। যাতে তাদের কথা মানুষের কাছে পৌছে যায়।
চতুর্থ হল সেক্যুলারিস্ট। এরা প্রথম থেকেই পশ্চিমের। এরা কাফিরদের পকেটেই আছে। পশ্চিমের শিক্ষা এরা আত্মস্থ করে ফেলেছে, হজম করে ফেলেছে। এরা মনস্থির করে ফেলেছে, শাসনের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম হল ধর্ম, আর ধর্ম হল বিশ্বাস, ইবাদাত আর আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি। এরা তো ওদেরই লোক।
ইসলামের বিরুদ্ধে সভ্যতার সংঘাতে জেতার জন্য, পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি র্যান্ডের প্রেসক্রিপশান হল – মর্ডানিস্ট আর সেক্যুলারিস্ট, এই দুটো শ্রেণীকে সবধরনের সাহায্য করো। আর ফান্ডামেন্টালিস্ট ও ট্র্যাডিশানালিস্ট, এই দুটো দলকে দমন করো। এদেরকে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে রাখো। আর ট্র্যাডিশানালিস্টদের ব্যস্ত রাখো নিজেদের মধ্যেকার ইখতেলাফে, মতপার্থক্যে। এই হল মুসলিমদের ওপর বিজয়ী হবার পলিসি।
—
মাওলানা ইসরার আহমাদ