সোমবার, ১৮ই জুন ভারতের উত্তর প্রদেশের হাপুরে কাসিম (৪৫) নামে একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, কাসিম ও তার বন্ধু সামাউদ্দিন তাদের ক্ষেতে ঢুকে পড়া একটি গাভী ও তার বাছুরকে তাড়ানোর চেষ্টা করার সময় গুজব ছড়ানো হয় তারা গরু জবাইয়ের চেষ্টা করছে। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়। কয়েক ঘন্টা পর আহত কাসিম মৃত্যুবরণ করেন। তার বন্ধু সামাউদ্দিন গুরুতর আহত অবস্থায় এখন হাসপাতালে।
নিহত কাসিমের শেষ মুহুর্তের একটি রোমহর্ষক ভিডিও মঙ্গলবার ভিডিও শেয়ারিং সাইটগুলোতে আপলোড করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মুমূর্ষু কাসিম পানি চাচ্ছেন। কিন্তু উপস্থিত লোকদের কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না। একজন লোককে বলতে শোনা যাচ্ছে – এটা গো হত্যার উচিৎ শাস্তি।
২০১৮ সালে গো-হত্যার অভিযোগে এখনো পর্যন্ত এধরণের ৬টি সহিংসতার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি ঘটেছে জুন মাসে।
গত ৮ বছরে উত্তর প্রদেশে ১১টি এবং পুরো ভারত জুড়ে ৮৪টি গরু সংক্রান্ত সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
২০১০-১৮ পর্যন্ত ঘটা এসব ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৩৩, এবং আহতের সংখ্যা কমপক্ষে ২৩৫।
নিহতদের মধ্যে ২৯ জন (প্রায় ৮৮%), এবং আহতের প্রায় ৬০% মুসলিম।
৯৮% সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মে ২০১৪ তে বিজেপি ও মোদি ক্ষমতায় আসার পর।
তথ্যসূত্র – http://data.indiaspend.com/hate-crime
আপনি যদি দেশীয় সেক্যুলার হয়ে থাকেন তাহলে এই পরিসংখ্যান নিয়ে আশঙ্কিত হবার তেমন কোন কারণ নেই। ইন্ডিয়ার মতো এতো বিশাল দেশে, পিরিওডিকালি এধরণের কিছু ঘটনা ঘটবেই – এমন ধরে নিতে পারেন। তবে উপমহাদেশ জুড়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও ইসলামবিদ্বেষী আদর্শের উত্থান শেষ পর্যন্ত সেক্যুলারিযমের জন্য ভালো হবে কি না, এটা নিয়ে সামান্য চিন্তা করা যেতে পারে।
আপনি যদি জাতীয়তাবাদী হয়ে থাকেন তাহলেও চিন্তিত হবার তেমন কোন কারণ নেই। সীমান্তের ওপাড়ে কী হচ্ছে, সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তবে সীমান্তবর্তী আসাম থেকে মুসলিমদের বের করে দেয়া হলে সেটা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হবে কি না, এ নিয়ে চিন্তিত হতে পারেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গা রিফিউজিদের ব্যবস্থা করতেই যখন আমাদের হাঁসফাঁস অবস্থা।
আপনি যদি ইসলামপন্থি হন তাহলে চিন্তিত হবার একেবারেই কোন কারণ নেই। উম্মাহর মুরব্বী আলিম-উলামার ওপর ভরসা রাখুন। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছেন, এবং বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার সাথে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন ও করছেন। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট আলিম হযরত মাওলানা মাহমুদ মাদানির একটি বক্তব্য তুলে ধরছি –
“ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টমে রেহনেওয়ালে মুসলমানোমে সাবসে আচ্ছে হাল মে আগার কিসি এরিয়াকা মুসলমান হে, তো ঔ হ্যায় ভারত কা মুসলমান।”
২০১৬ এর নভেম্বরে এই বক্তব্য দেয়ার সময় গো-সন্ত্রাস পরিস্থিতি কেমন ছিল, সেটা জানতে দেখুন – http://data.indiaspend.com/hate-crime
অতএব নিশ্চিন্ত থাকুন, ভরসা রাখুন।
-২১শে জুন, ২০১৮