প্রথমে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী “নিহত হল”। আমরা খুব খুশি। তারপর শিবির। চল্লিশ বছর আগের অপরাধের জন্য বিশ-পচিশ বয়সের ছেলেরা গুম হল, হাড়গোড় ভেঙ্গে গেল, “নিহত হল”। আমাদের তেমন মাথাব্যাথা নেই, শিবির মারা গেছে, মানুষ তো আর না। তারপর জঙ্গিরা “নিহত হল”। গর্ব, খুশি আর আবেগে আমাদের চোখে পানি চলে আসলো। আবেগে আমরা দাফনও করতে দিলাম না। মৃতদেহ ফেরত গেল, জংলি-জঙ্গিরা নাম্বার হয়ে লাশকাটা ঘরে শুয়ে থাকলো। সমর্থন আগের চেয়েও বেড়ে গেল। তারপর আসলো তালিকাভুক্ত মাদকব্যবসায়ীদের পর্ব। এবারো আমরা খুশি। মরুক শালারা। এবার তোরাও “নিহত হ”!
এর আগে প্রতিবার “নিহত হয়েছে” এমন কেউ, যার সাথে “আমরা” আইডেন্টিফাই করি না। সন্ত্রাসী, শিবির, জঙ্গি – এরা তো মানুষ না। এদের পরিবার নেই, অধিকার নেই, এদের নিয়ে কথা বলার কিছু নেই, এদের পেছনে দামী আবেগ খরচ করারও অর্থ নেই। এদের স্ত্রী নেই, বাচ্চা নেই, এদের অডিও রেকর্ড নেই যেটা শুনে দুঃখপ্রকাশ করে নিজের মনুষত্য প্রমান করা যায়। এদের মৃত্যুর পর অপরাধ ও শাস্তি, বিচার ও ইনসাফ নিয়ে গভীর দার্শনিক ভাবনায় মগ্ন হয়ে নিজেকে গোপনে বাহবা দেয়া যায় না। এদের নিয়ে চিন্তা, কথা, আবেগ, দুঃখ, কিংবা প্রশ্ন বৃথা। এরা না-মানুষ, প্রায় অস্তিত্বহীন। পত্রিকার শেষ পাতায় কিংবা ভেতরে দু-তিন ইঞ্চির কলাম, চিন্তার ফুটনোট, আড্ডায় কিছু একটা বলে নিজের উপস্থিতি কিংবা চিন্তার অস্তিত্ব জানান দেয়ার রসদ।
বেরসিকের মতো অডিও এসে ঝামেলা পাকালো। কুৎসিত বাস্তবতা নগ্ন হয়ে সব কলুষতা নিয়ে সামনে এসে গেলে, চাইলেও চোখ ফিরিয়ে নেয়া যায় না। সম্ভবত এমনটা না হলে, আর গত ৫-৬ বছরে “না-মানুষ”-দের হত্যার পাশাপাশি বিরোধী দলের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের “নিহত হবার” খবর না আসলে, নিয়ম করে যে আহাউহু এখন হচ্ছে সেটা হতো না।
বিএনপি তো অনেকেই সমর্থন করে। বিএনপি যারা করে এদের তো আমরা দেখি। আমাদেরই মতো, হাত-পা আছে, কথা বলে। চিন্তা করে। আনন্দিত হয়, কষ্ট পায়। কমিশনারদেরও আমরা দেখি। এরাও তো মানুষ। নিরীহ, নির্দোষ মানুষ মারা যাবার কথা শোনা যায়। কী সর্বনাশ! নিরীহ-নির্দোষকেও তো আমরা চিনি! গত পরশুই না বাজারে দেখলাম?
ঝামেলা পাকানো অডিও শুনে আমরা বুঝলাম যারা “নিহত হয়” এদেরও বউ আছে, বাচ্চা আছে, এদেরও রক্ত লাল। গুলি করলে এরা ব্যাথা পায়, মৃত্যু এদের ভীত করে। এরা তো শিবির কিংবা জঙ্গি না। না-মানুষ না। আমাদের মতোই মানুষ। তাই এতোদিনের খুশিত একটু-আধটু ভাটা পড়লো। আমরা মওসুমি “কনসার্নড” হলাম।
নাহ! আসলেই কাজটা ভালো হয় নাই। তাও আবার এই রমজানের মধ্যে…কে জানে বিশ্বকাপ শুরু হবার আগে এ মন খারাপের রেশ কাটবে কি না…