বহুবিবাহ এবং সমসাময়িকতা


বহুবিবাহের ব্যাপারে মুবাহ এবং মুস্তাহাব হবার মত আছে। ইমাম, ফক্বিহ ও আলিমগণ এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। যারা মুবাহ বলেছেন তারাও বলেছেন যদি পুরুষ সন্তুষ্ট না হয় অথবা নিজের ব্যাপারে গুনাহর আশঙ্কা করেন তাহলে বহুবিবাহ করতে পারেন। বহুবিবাহের নানা পযিটিভ ইফেক্টের আলোচনা করতে গিয়ে এর মাধ্যমে ইয়াতিম, বিধবাদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব পালনের বিষয়টা এসেছে।

অথচ বহুবিবাহকে মুবাহ – প্রমানের জন্য এমন অনেক লেখা দেখলাম যেখানে “বহুবিবাহের মাধ্যমে ইয়াতিম ও বিধবাদের ব্যবস্থা হয়। সাহাবিদের (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন) সময় অনেক জিহাদ হত, তাই সমাজে অনেক ইয়াতিম ও বিধবা থাকতেন – তাই তখন বহুবিবাহ দরকার ছিল, এখন পরিস্থিতি ভিন্ন…” – এমন কথা বলা হচ্ছে। যেন ইয়াতিম ও বিধবা বিবাহের শর্তেই কেবল বহুবিবাহ জায়েজ আছে। যেন এটা সোশাল ওয়েলফেয়ার জাতীয় একটা বিধান। এটা পোস্টমর্ডানিস্ট আর ডিকনস্ট্রাকশানিস্ট চিন্তার একটা বাস্টার্ডাইযড ভারশান। একথার অর্থ হল এসেনশিয়ালি –

“বহুবিবাহের প্রচলন একটা সোশাল কনস্ট্রাক্টের মতো, যা একটা নির্দিষ্ট সময়ে, একটা নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে প্রযোজ্য। কিন্তু সাধারণভাবে ইসলামে বহুবিবাহ “জাস্ট জায়েজ” – এবং অসংখ্য শর্তসাপেক্ষে। যেই শর্তগুলো বর্তমানে উপস্থিত নেই।”

এই একই কথা জিহাদ, ইসলামি রাষ্ট্র, শরীয়াহ শাসন, মুরতাদের শাস্তি, কাফির-মুশরিকের (“সংখ্যালঘু”) অধিকার – এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ওপরের লাইনগুলোতে জাস্ট বহুবিবাহের জায়গায় এই শব্দগুলো বসিয়ে দেখুন – এগুলো মর্ডানিস্ট-মডারেট মুরজিয়া,মুরতাদ আর যিন্দিকদের মুখস্থ ধরাবাঁধা কথা।

এই কারণেই র‍্যান্ড এটা নিয়ে আগ্রহী – যে লাইন অফ থিংকিং থেকে – “বহুবিবাহ জায়েজ কিন্তু বর্তমানে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) প্রযোজ্য না” – এই কনক্লুশান আসে, সেই সেইম লাইন অফ রিযনিং দিয়ে জিহাদ, শারীয়াহ, ইসলামি রাষ্ট্র, আল ওয়ালা ওয়াল বারার – কে তামাদি বানানো যায়।

বহুবিবাহের ইস্যু একটা লিটমাস টেস্ট। কেউ ফক্বিহদের ভ্যালিড অপিনিয়ন অনুযায়ী মুবাহ বা মুস্তাহাব মনে করলে আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু সমসাময়িকতা (অর্থাৎ পশ্চিমা সভ্যতার বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির, সমাজ অথবা আমাদের নিজেদের চিন্তাচেতনার সাথে খাপ না খাওয়া), প্রেক্ষাপট, পারিপার্শ্বিকতা এসবের দোহাই দিয়ে, “আমার মনে হয়, কিন্তু, যদি”-র বাজার খুলে, রুয়াইবিদাহদের ব্যাখ্যা পুঁজি করে নিজের হাওয়ার ওপর ভিত্তি করে এটাকে “জাস্ট জায়েজ” প্রমানের চেষ্টা আল্লাহর দ্বীনের সাথে খেলতামাশা করা।

অ্যাপিয়ারেন্স অফ ইন্টেলিজেন্স আর সত্য – এ দু’য়ের মধ্যে অনেক, অনেক পার্থক্য। লেখার উপস্থাপনা কিছুটা চটকদার হলেই আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। “ভালো লেখাকে” সত্য কথা ধরে নেই। এটা বিশুদ্ধ মূর্খতা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *