গ্বুরাবাহ


বিশ্বাস, নৈতিকতা কিংবা আদর্শ না, এখন আমাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে পিয়ার প্রেশার। কোন কাজ সঠিক না বেঠিক, আমরা ঠিক করি সমাজে সেই কাজের গ্রহণযোগ্যতা ওপর ভিত্তি করে। সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আল্লাহ কী বলেছেন, ইসলাম কী বলে, এসবের বদলে আমরা চিন্তা করি “পাছে লোকে কিছু বলে”। পেশাদার মাঝির মতো আমরা হিসেবে করি বাতাস কোন দিকে বইছে, স্রোত কোনমুখী, আর তারপর সেদিকে পাল তুলি। আমাদের সময়ে ভালো-খারাপের নির্ধারক জনমত। যা কিছু অধিকাংশের কাছে গ্রহনযোগ্য তা ভালো। এখানে দিনরাত ভালোমন্দের সংজ্ঞা বদলায়, ভোট গুণতে গুণতে সত্য-মিথ্যার পরিচয় উল্টে যায়।

কাছে আসা ভালো, বন্ধু-আড্ডা-গান ভালো, লিটনের ফ্ল্যাট ভালো, হারিয়ে যাওয়া ভালো, ভ্যালেন্টাইন্স ভালো, লাভ ম্যারেজ ভালো, লিভ টুগেদার ভালো, পতেঙ্গায় পড়ে থাকা দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মুখের লাশও ভালো, ডাস্টবিন, পলিথিন কিংবা কুকুরের মুখে ঠাই পাওয়া মৃত শিশু ভালো, চেতনা ভালো, মাত্রার মধ্যে ঘুষ-দুর্নীতি ভালো, ক্রিকেট ভালো, আইপিএল ভালো, জুয়া ভালো, মাস্তি ভালো, নেশা ভালো, পিনিক ভালো, ইয়াবা ভালো, বাঙ্গালিয়ানা ভালো, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ভালো, ধর্মনিরপেক্ষতা ভালো, আত্মকেন্দ্রিকতা ভালো, সম্পদ-খ্যাতি-ক্ষমতার পেছনে ছোটা ভালো, লোভ ভালো, নীতিহীনতা ভালো, তেলাপোকার জীবন ভালো, কুকুর ভালো, শুয়োর ভালো, হোলি ভালো, পূজা ভালো, ধর্ম যার যার মাস্তি সবার হওয়া ভালো, সব কিছুতে ধর্ম টেনে না আনা ভালো, নিজের মত করে ইসলামকে ব্যাখ্যা করা ভালো, মানবধর্ম ভালো, সব ধর্ম ভালো – শরীরধর্ম আরো ভালো, সেলিব্রিটির আদলে দাড়ি রাখা, কিংবা হিপস্টারদের আদলে গোড়ালির ওপর প্যান্ট পড়া ভালো।

আর যা কিছু সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য না, যা দেখলে মানুষের ভ্রূ কুঁচকে যায়, যা অধিকাংশের কাছে অপরিচিত, অদ্ভূত তা খারাপ। লম্বা দাড়ি খারাপ, বোরকা খারাপ (স্টাইলিশ হিজাব ভালো), নিক্বাব খুব খারাপ, সুন্নাহ পালনের জন্য গোড়ালিও ওপর প্যান্ট রাখা খারাপ, ইসলামকে নিজের প্রথম পরিচয় হিসেবে নেয়া খারাপ, গান না শোনা খারাপ, সিনেমা না দেখা খারাপ, ফ্রি মিক্সিং এড়িয়ে যাওয়া খারাপ, ঘুষ না নেয়া কিংবা ঘুষের চাকরি বর্জন করতে চাওয়া খারাপ, দ্বিমুখী না হওয়া আর ডাবলস্ট্যান্ডার্ড এড়িয়ে যাওয়া খারাপ, মৌসুম অনুযায়ী নিজের আদর্শ বদলে না ফেলা আর নীতি বিসর্জন না দেয়া খারাপ, শারীয়াহর কথা বলা খারাপ, মসজিদের বাইরে ইসলাম আনা খারাপ, ধর্ষন নিয়ে কথা বলা ভালো কিন্তু নারী-পুরুষ-সমাজ-রাষ্ট্রকে ইসলামী নির্দেশনা পালন করতে বলা খারাপ, চিন্তা করা খারাপ, প্রচলিত আর প্রথাকে প্রশ্ন করা খারাপ, এক আল্লাহ – এক বিধানদাতা – এক আইনপ্রণেতা – এক ইলাহকে মানতে বলা খারাপ, দেশের জন্য যুদ্ধ-হত্যা-ধ্বংস ভালো কিন্তু সত্যের প্রতিরক্ষা আর সত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা খারাপ, লজ্জা থাকা খারাপ, বিনয়ী হওয়া খারাপ, আত্মমুগ্ধতা আর আত্ম-প্রচারণা থেকে দূরে থাকা খারাপ, দুনিয়াবিমুখ হওয়া খারাপ, অধিকাংশের মানদন্ডে অনুত্তীর্ণ সবই খারাপ, সভ্যতা-খেয়ালখুশি-ভোগের বিপরীতে দাঁড়ানো সবই খারাপ।

যারা ভালো-খারাপের এ নিত্যপরিবর্তনশীল কাঠামো মেনে নেয় না, যারা সেই ১৪০০ বছর আগের আদর্শ আর জীবনকে আকড়ে ধরে রাখতে চায় – তাঁরা খারাপ। সেই অল্প কিছু লোক অচেনা। তাঁরা অদ্ভূত, তাঁরা অপরিচিত। তাঁরা আমাদের এ ভোগের নগরীতে – এ মদ-মাংস-মাৎসর্য্যের দেবালয়ে -এ মাৎসান্যায়ে গোল বাধানো অনাকাঙ্ক্ষিত, অবাঞ্চিত, অপরিচিত, আগন্তুক।

আমার নবীজি ﷺ বলেন – সুসংবাদ গ্বুরাবাদের (অচেনা, অপরিচিতদের) জন্য।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন – ইসলামের শুরু হয়েছে যখন তা ছিল গ্বারীব (আগন্তুক, অচেনা, অপরিচিত) অবস্থায়।। এটা আবার ফিরে যাবে সে গ্বারীব অবস্থায়। আর সুসংবাদ হচ্ছে গ্বুরাবাদের (অচেনা, অপরিচিতদের) জন্য।” [মুসলিম, কিতাবুল ঈমান ] বলা হলো, “হে আল্লাহ্‌র রসূল (সঃ), কারা গ্বুরাবা?” তিনি ﷺ বললেন, “যারা অপরিচিত/বান্ধবহীন অবস্থায় যখন লোকেরা ইসলামের মধ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, সে সময় এর সংশোধন করবে।” [মুসনাদ আহমদ]

সুসংবাদ গ্বুরাবাদের জন্য।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *