সিরাতুল মুস্তাক্বিম। এই দ্বীন হল সরল পথ। সরল হলেও এই পথ সহজ না। যে মানুষগুলোকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা অনুসরনীয় পথিকৃত হিসেবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন তাঁদের কারো জীবনই সহজ ছিল না। তাওহিদের জন্য, সত্যের জন্য তাদের সকলকেই পরীক্ষিত হতে হয়েছে। আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল ক্বুর’আনে আমাদের জানিয়েছেন –
তোমরা কি মনে করেছ যে, তোমরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমরা এখনও তাদের অবস্থা প্রাপ্ত হওনি যারা তোমাদের পূর্বে বিগত হয়েছে; তাদেরকে বিপদ ও দুঃখ স্পর্শ করেছিল এবং তাদেরকে প্রকম্পিত করা হয়েছিল; এমন কি রাসূল ও তৎসহ বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ বলেছিলঃ কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী। [আল-বাক্বারা, ২১৪]
এটাই তো যৌক্তিক। শক্ত কমিটমেন্ট ছাড়া, ত্যাগ স্বীকার করা ছাড়া অল্প দামি কিছুও তো দুনিয়াতে পাওয়া যায় না। তাহলে কস্ট ছাড়া, ক্বুরবানী ছাড়া সবচেয়ে মূল্যবান পুরস্কার অর্জনের আশা কিভাবে করা যায়?
আমরা অনেক সময়ই বলি আমরা দ্বীনের পথে চলতে চাই, দ্বীনের জন্য কাজ করতে চাই – কিন্তু এর জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করা দরকার তাতে আমরা রাজি না। আমরা ফলাফলটা চাই কিন্তু ফলাফল অর্জনের উপায় আমরা গ্রহন করতে চাই না। আমরা মুখে আকাঙ্ক্ষার কথা বলি, বলি অনুসরণীয়দের অনুসরনের কথা – কিন্তু কথার প্রতিফলন কাজে পাওয়া যায় না। আমরা অনেক কথাই বলি, আমাদের কথা শুনে মানুষ হয়তো আমাদের ব্যাপারে সুধারণাও পোষণ করে, কিন্তু ভার্চুয়াল পারসোনা আর বাস্তবের মাঝে থাকে যোজন যোজনের পার্থক্য।
মজার ব্যাপার হল পার্থিব কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য সময় ও শ্রম দিতে আমাদের আপত্তি নেই। যদি আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাই তাহলে অন্তরে ইচ্ছা পোষণ করা আর মুখে বলাটা যে যথেষ্ট না – পার্থিব প্রাপ্তির জন্য যে প্রস্তুতি গ্রহন করা প্রয়োজন এটা আমরা বুঝি। আযদি গাড়ি চালাতে চাই তাহলে আমাকে গাড়ি চালানো শিখতে হবে এটা আমরা সবাই বুঝি। অটোম্যাটিক চাওয়া মাত্র আমার কাছে গাড়ি আসবে না, গাড়ি চালানো স্কিলও আসবে না – এই সত্য আমাদের কাছে স্পষ্ট। শুধু মুখে ব্যবসা নিয়ে সারাদিন কথা বলা, হালাকা করা বা আড্ডাবাজি করা, অথবা ফেইসবুকে লেখালেখি করার মানে যে আদতে ব্যবসা করা না – সেটা দুনিয়ার সাথে হোক কিংবা আল্লাহর সাথে – এটাও আমরা বুঝি। শুধু বুঝি না যে দ্বীনের কাজের ক্ষেত্রে কথা বলা, আড্ডাবাজি করা, সোশালাইযিং করা, স্ট্যাটাস লেখা, আর মুখে ইচ্ছা পোষণ করা যথেষ্ট না। কোন জিনিসটা আমাদের আটকে রাখে আমাদের কথাকে কাজে পরিণত করা থেকে? ইমানদারের জন্য এটা নিঃসন্দেহে একটি ব্যাধি। আর আমাদের মাঝে এই ব্যাধি ছড়িয়ে আছে মহামারীর মতো।
আর কোন কাজ আমাদের আটকে থাকে না, কিন্তু ব্যস্ততার কারনে আটকে থাকে শুধু দ্বীনের কাজগুলোই। প্রথমে বড় তারপর ছোট।