সেকশন ৩৭৭ এবং বাংলাদেশে সমকামীতা


ভারতের আদালতের রায়ে যা হয়েছে তা হল আইনিভাবে সমকামকে বৈধতা দেয়া। এটা লিগাইলাইযেইশান। তারপর আসে ব্রড সোশাল এক্সসেপট্যান্স। ব্রিটিশ আমলে, ১৮৬০ সালে সেকশন ৩৭৭ নামে একটি আইন করা হয়েছিল যেটার মূল বক্তব্য ছিল নারীপুরুষের স্বাভাবিক যৌনমিলন ছাড়া বাকি সবধরনের যৌনতা বেআইনি। এই সেকশনের ওয়ার্ডিং বেশ ব্যাপক হলেও মূলত এটি ছিল সমকামিতার ব্যাপারে। ভারতের আদালতের রায়ে এই সেকশন ৩৭৭ কেই বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশকেও কিন্তু এই সেকশন ৩৭৭ বাতিল করতে বলা হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ থেকে অলরেডি ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে সরাসরি এই ব্যাপারে চাপ দেয়া হয়েছে।

সমকামিতার অবাধ প্রচলন এক দিনে হয়না। গত শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত পশ্চিমে সমকামীতাকে একটি যৌন বিকৃতি মনে করা হত। পঞ্চাশের দশকে এটাকে ক্লাসিফাই করা হয় মানসিক অসুস্থতা হিসেবে। ৭০ এর দশকে এসে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে সমকামিতা বিকৃতিও না, অসুস্থতাও না, জাস্ট স্বাভাবিক মানবিক আচরণ। তবুও সমাযে ব্যপক গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। আশি ও নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু হয় মিডিয়া ও সেলিব্রিটিদের মাধ্যমে সমকামিতাকে স্বাভাবিক, সুন্দর এমনকি গ্ল্যামারাস একটি লাইফস্টাইল হিসেবে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া। একইসাথে চলে বিভিন্ন সিনেমা ও টিভি সিরিযের মাধ্যমে বেইসিকালি একটা যৌনবিকৃতি নিয়ে হাইপার ইমোশনাল বিভিন্ন প্রপাগ্যান্ডা। হলিউডের সত্তর, আশি ও নব্বইয়ের দশকের বড় বড় সব নায়কদের দেখুন। প্রায় সবাই সমকামী রোলে অভিনয় করেছে। এসবের পর ওবামার সময়ে এসে সমকামী ‘বিয়ে কে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়।

পয়েন্টটা হল, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা না। “যৌন বিকৃতি” থেকে সমকামি বিয়েকে আইনি বৈধতা দিতে অ্যামেরিকার লেগেছে ছয় দশক। ভারতের কিন্তু এতো সময় লাগছে না। কারণ এরইমধ্যে সমকামিতাকে বিশ্বব্যাপী বৈধতা দেয়ার কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে। যার কারণে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে বলছে সেকশন ৩৭৭ বাতিল করতে। অনেকে মনে করেন বাংলাদেশেও এটা একসময়য় হবে, তবে যখন অধিকাংশ মানুষ একে সমর্থন দেবে তখন। এটা ভুল ধারণা। ভারতের অধিকাংশ মানুষ কিন্তু সমকামীতাকে সমর্থন করে না। তাও ভারতে একে আইনী বৈধতা দেয়া হয়েছে। কারণ গণতন্ত্রে অধিকাংশ মানুষের চেয়ে সমকামী লবি, মিডিয়া, বিদেশী এনজিও এগুলোর ক্ষমতা সবসময় বেশি। বাংলাদেশের সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’কে বাংলা করতে যেমন অধিকাংশের সমর্থনের প্রয়োজন হয়নি, এক্ষেত্রেও তেমন হবে না। গণতন্ত্র দিন শেষে অলিগার্কি। অভিজাততন্ত্র। অভিজাতদের অধিকাংশের সমর্থন আর মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রনের নিশ্চয়তা পেলেই হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে এরইমধ্যে সমকামিতাকে লিগালাইয ও নরমালাইয করার প্রক্রিয়ায় কী কী ঘটেছে ও ঘটছে তার একটা ছোট্ট ও ব্যাপকভাবে অসম্পূর্ণ লিস্ট দেই, তারপর আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন এ নিয়ে কতোটা চিন্তিত হওয়া দরকার।

  • ইউএস এইড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতে বাংলাদেশে সমকামির সংখ্যা ১০,০০০ পেরিয়ে গেছে।
  • বিভিন্ন পত্রপত্রিকার রিপোর্টে উঠে এসেছে এই সমকামীরা বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে একে অপরের সাথে “হুকআপ” করছে। এদের বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, গেটটুগেদার ইত্যাদি হচ্ছে।
  • বাংলাদেশে সমকামী ম্যাগাযিন বের হয়েছে।
  • পুলিশি প্রহরায় সমকামীদের র‍্যালি হয়েছে।
  • ঈদের সময় সমকামিতা নিয়ে নাটক হয়েছে।
  • দেশী বিদেশী অনেক এনজিও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সমকামীতা প্রসারে কাজ করছে। এদের বিভিন্ন সেন্টারে ফ্রি কনডম, লুব্রিকেন্ট ইত্যাদি দেওয়া হচ্ছে। এসব এনজিওর জন্য ফান্ডিং আসছে বিদেশ থেকে।
  • বাংলাদেশের মিডিয়া সেলিব্রিটি ও প্রগতিশীলদের মধ্যে সমকামীতাকে মানবাধিকার বলে প্রচার করার প্রবণতা বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ও বিশেষ করে ইউটিউব সেলিব্রিটিদের অনেকেই একে ‘স্বাভাবিক’ বলে প্রমোট করছে।
  • ১৩ থেকে ২৫ বছর বয়েসী শহুরে গ্লোবালাইযড (অথবা বলিউন প্রভাবিত) কিশোর-তরুনদের মধ্যে ‘সমকামীতা কোন পাপ না, কোন অপরাধ না” এই ধারনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা এতে কোন সমস্যা দেখে না, আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল এর কাছে এব্যাপারটি কতো ঘৃণিত সেটা নিয়ে তাদের কোন চিন্তাই নেই। তাদের বিরোধিতা থেকে থাকলে সেটা বড়জোর ‘আমার ঘিন্না লাগে” বা “এটা আমার জন্য না” জাতীয় সেন্টিমেন্ট পর্যন্তই। বিষয়টি নিজে যাচাই করে দেখুন।
  • পশ্চিমা দা’ইদের বিশাল এক অংশ সমকামী অধিকারের পক্ষে সোচ্চার। তাদের এদেশীয় অনুসারীরা খুব শীঘ্রই এসব “দর্শন” অনুবাদ করে আপনার সামনে হাজির হবে।
  • উচ্ছৃঙ্খল লাইফস্টাইল , যৌনতা সম্পর্কে নৈতিকতার অবক্ষয় এবং উত্তেজক ড্রাগ ইয়াবার ব্যবহারের কারণে মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে বাড়ছে সমকামীতা। এ নিয়ে মিডিয়ার অনেকে মুখ খুলেছেন। সেলিব্রিটি স্বামীর সমকামীতা আসক্তি নিয়ে কান্নাকাটিও করেছে সেলিব্রিটি স্ত্রী-রা।

কাজেই বাংলাদেশে ঠিক কোন পর্যায়ে আছে তার একটি ধারণা হয়তো এখান থেকে পাঠক পাবেন। এমন অবস্থায় ‘দারুল আমানে আছি’ মনে করে বালুতে মুখ গুজে উটপাখির মানহাজের ওপর থাকা, আর সৎ কাজের আদেশ আর মন্দ কাজের নিষেধ এর হুকুম, কোনটা কতোটা গুরুত্ব পাবার দাবি রাখে, ভেবে দেখবেন।

আপনি চোখ বন্ধ করে রাখা মানে কিন্তু বাতি নেভানো না।


সমকামী এজেন্ডা কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে জানতে দেখতে পারেন,
‘সমকামি এজেন্ডা: ব্লু প্রিন্ট’ – https://bit.ly/2wRatVF


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *