ওয়াজ নিয়ে আপত্তি ও সেক্যুলারিসম


ওয়াজ নিয়ে প্রতিবেদনে যেসব বক্তব্যকে আপত্তিকর ধরা হয়েছে তার কয়েকটা হল –

‘মূর্তি ভাঙা ধর্মীয় কাজ’,
‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাফের’,
‘অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়’
‘গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ধর্মনিরেপক্ষতাবাদ মুশরিকদের কাজ’,
‘শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া, প্রতিমূর্তিতে ফুল দিয়ে নীরবতা পালন করা শিরক’,
‘গণতন্ত্র ইসলামে নাই, ইহা হারাম’ এবং ‘
‘আল্লাহ রাসূলকে গালি দিলে কোপাতে হবে’
‘ইসলামের বিরুদ্ধে আইন করলে কোপাতে হবে’

এ বক্তব্যগুলোর বিরুদ্ধে কোন গ্রাউন্ডে আপত্তি করা হচ্ছে? ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ভিত্তিতে। এগুলো ‘উগ্রবাদী কথাবার্তা ও মনোভাব’ যা ‘অবিরত দেশের তরুণ মুসলিম সমাজে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করছে’।

এ আপত্তির প্রেক্ষিতে কী করা হচ্ছে?
ওয়াজ নিয়ন্ত্রনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

সেটা কি সেক্যুলারিযমের মূলনীতি অনুযায়ী ঠিক আছে?
টেকনিকালি না। যদি আসলেই নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাহলে এতে বাক স্বাধীনতায় এবং ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে।

এটা নিয়ে কি সেক্যুলারিযমের মাথাব্যাথা আছে?
নিজে চিন্তা করুন।

আমি সেক্যুলারিযমের ব্যাপারে কিছু কথা বলি –

সেক্যুলার রাষ্ট্র মূলত ধর্মগুলোর ওপর তার সেক্যুলার মূল্যবোধ চাপিয়ে দেয়। সব ধর্মের অধিকার সংরক্ষণের বদলে সেক্যুলারিযম সব ধর্মকে নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। ধর্মের কোন বিধানের সাথে সেক্যুলার আইন সাংঘর্ষিক হলে প্রতিটি ক্ষেত্রে সেক্যুলার আইন ধর্মকে বাধ্য করে সেই আইন মেনে নিতে। সেক্যুলারিযমের নিজস্ব হারাম-হালালের কনসেপ্ট আছে। সে আপনার ওপর সেটা চাপিয়ে দেবে। নিজের ধর্মের বিধান আপনি ভাঙ্গতে পারবেন কিন্তু সেক্যুলার বিধান ভাঙ্গা যাবে না, মানতেই হবে। আপনি মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান যাই হন না কেন।

অর্থাৎ আদতে এটা ধর্মনিরপেক্ষতা না, বরং স্বতন্ত্র একটা ধর্মের মতো। সেক্যুলার রাষ্ট্র কার্যত বাকি সব ধর্মকে এই নতুন ধর্ম এবং এর ‘পবিত্র গ্রন্থের’ অধীনস্ত করে। যে ধর্মের নাম হল ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, যে ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ হল সংবিধান আর ব্যাবিলনের নমরুদ আর মিশরের ফিরাউনদের মতো যে ধর্মের দেবতা হল সেক্যুলার শাসক ও সংসদ। আর এ কারনেই সেক্যুলার ধর্ম অনুযায়ী রাষ্ট্র ধর্মের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে, ধর্মের বিধান বদলে দিতে পারে, ধর্মকে নতুন করে ব্যাখ্যা করতে পারে। কিন্তু একজন মুসলিম তার ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে সংবিধানের বিরোধিতা করতে পারে না, সেটা অপরাধ। আল্লাহর আইন উপেক্ষা করা যায়, কিন্তু আদালতের রায়ের ব্যতিক্রম করা যায় না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *