রক্ষণশীল খ্রিষ্টানদের ইসলামবিদ্বেষ মোকাবেলার জন্য পশ্চিমে বসবাস করা মুসলিম কমিউনিটিরর নেতা এবং বেশ জনপ্রিয় অনেক আলিম ও দা’ঈ বেছে নেন লিবারেলদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নীতি। প্রথম প্রথম এ সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই খুব সূক্ষ একটি চাল মনে হয়েছিল বোধহয়।
লিবারেল বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির কিছু কিছু বয়ানের সাথে ইসলামের অবস্থানের শাব্দিক কিছু মিল আছে। এ শাব্দিক মিলকে ব্যবহার করে লিবারেলদের সাথে যুক্ত হয়ে একদিকে তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মোকাবেলা করা যাবে রেইসিস্ট ডানপন্থীদের। পাশাপাশি তাদের বয়ান ব্যবহার করে লিবারেল পশ্চিমে জায়গা তৈরি করা যাবে ইসলামের জন্য। অন্যদিকে লিবারেলিযমের আবর্জনাগুলো থেকে বেঁচে থাকা যাবে। অর্থাৎ লিবারেল না হয়েও লিবারেলিযমের সুবিধা নেয়া যাবে।
দুঃখজনক কিন্তু অবধারিতভাবেই এ ‘ম্যাস্টার প্ল্যান’ কাজ করেনি। প্রথম প্রজন্মের তাকিয়্যাহ বুঝতে পারেনি পরের প্রজন্ম। শাব্দিক মিলকে পরবর্তীরা আকিদাহর মিল ধরে নিয়েছে। অন্যদিকে লিবারেলিযমকে এক্সপ্লয়েট করতে গিয়ে অনেক দাই এবং স্কলার এমনসব কোণায় ফেসে গেছেন যেখান থেকে নড়াচড়ার কোন উপায় নেই। যেমন লিবারেল মাপকাঠিতে জাতে ওঠার গোলকধাঁধায় পথ হারিয়ে ডাচ এক রেডিওর সাথে সাক্ষাতকারে মুফতি মেনক বলেছে, আমি ধর্মের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। যে কারো অধিকার আছে যে কোন কিছু বিশ্বাস করার। অথবা কিছুই বিশ্বাস না করার। এতে কোন সমস্যা নেই।
এরকম অনেক উদাহরণ আছে।
বাংলাদেশেও বেশ কিছুদিন ধরে এধরণের একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ‘সাংস্কৃতিকভাবে বাঙ্গালী’ অথবা ‘বাংলাদেশী’ এক ইসলাম ধর্ম জাতীয় কিছু একটা সৃষ্টির চেষ্টা। এই ইসলাম বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ এবং চেতনাবাজির প্রায় পুরো বয়ানকেই গ্রহণ করে নেয়। এবং এগুলোর ইসলামীকরণ করে সেক্যুলার, চেতনাবাদি বঙ্গে ইসলামের হয়ে জায়গা তৈরির স্বপ্ন দেখে। অর্থাৎ সেক্যুলার-চেতনাবাদি না হয়েও এগুলোর সুবিধা নেয়ার চেষ্টা। হুজুররা সবই পারে। এই চেষ্টার সমালোচনা করলে ‘ওয়াহ্হাবি’, ‘বেদুইন ইসলামে বিশ্বাসী’ ইত্যাদি কথাবার্তা শুনতে হয়। ইন্ট্রেস্টিং বিষয় হল, এই সেক্যুলার জাতীয়তাবাদ ও চেতনাবাজিকে আকড়ে ধরা এই ‘ইসলাম’-এর সাথে অ্যামেরিকার কালচারল মুসলিম আর গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর ‘উগ্রবাদ মোকাবেলা’ করার ন্যারেটিভের মিল আলৌকিক পর্যায়ের।
আপাতত এই চেষ্টা এ জাতীয় বিভিন্ন হাস্যকর কার্যক্রমের মাধ্যমে সামনে আসছে। তবে আড়ালে-আবডালে অনেক রকম মুভ-মেন্টই চলছে। আবারো ব্যাপক সূক্ষ চাল দেয়া হয়েছে মনে করে, মাছ জেলেকে নিয়ে আপনমনে খুব হাসছে।