মেয়েলী পুরুষ সেলিব্রিটিদের উত্থানের পেছনে সিআইএ – চীনের অভিযোগ!


হঠাৎ করে শুনলে অদ্ভূত কোন কন্সপিরেসি থিওরির মতো মনে হলেও, কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেয়ার মতো না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনে শিল্পের ব্যবহারের অনেক উদাহরণ আছে ইতিহাসে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় শিল্পকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল সিআইএ। জ্যাকসন পোলক সহ ‘অ্যামেরিকা মডার্ন আর্ট’ –এর অনেক রথী-মহারথীদের কাজের অর্থায়ন এবং প্রচারণার পেছনে ছিল সিআইএ-র হাত। এছাড়া গত ১০/১২ বছরে আমরা দেখেছি ট্র্যান্সজেন্ডার আন্দোলনের ব্যাপক বিস্ফোরণ। খুব অল্প সংখ্যক মানুষের একটা ফ্রিঞ্জ মুভমেন্টের দাবিদাওয়ার ওপর ভিত্তি করে বদলে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন দেশের আইন। মিডিয়া, এস্টাবলিশমেন্ট এবং ওয়ার্ল্ড অর্ডারের মাধ্যমে অ্যামপ্লিফাই করা হচ্ছে এই অল্প সংখ্যক মানুষের কন্ঠস্বরকে। এটা শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ঘটছে না বরং জাতিসঙ্ঘ-এর মতো সংস্থাগুলোও এ এজেন্ডা পুশ করছে।

সেই সাথে নিরন্তর চলছে পুরুষত্বের ধারনার ওপর আক্রমণ। পুরুষত্বকে সেকেল, তামাদি এবং বিষাক্ত হিসেবে উপস্থাপন করার প্রবণতা থার্ড ওয়েভ ফেমিনিস্ট ডিসকোর্স থেকে বের হয়ে এসে এখন রাজত্ব করছে ম্যাস মিডিয়াতে। বাদ দিয়ে দেয়া হচ্ছে খোদ জেন্ডারের ধারণাকেই। চেষ্টা চলছে আধুনিক পপ কালচারের সব মেইল আইকন/পুরুষ হিরোকে নারী রূপে নতুনভাবে সামনে আনার।

পাশাপাশি গত ১০-১৫ বছরে বিশ্ব জুড়ে উত্থান ঘটেছে মেয়েলী (অথবা অ্যান্ড্রোজিনাস) পুরুষ সেলিব্রিটিদের। ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হয়েছে পুরুষের সৌন্দর্য ও আত্মপরিচয়ের নতুন এক ক্যারিকেচার। এধরনের সেলিব্রিটিরা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে K-Pop ইন্ডাস্ট্রি থেকে। K-Pop এর হার্টথ্রবদের চেহারা, পোশাক, আচরণ এবং আচরণের পাশাপাশি লাইফস্টাইলের অনেককিছুই একজনের পুরুষের আচরণ, ব্যবহার এবং সামাজিক ভূমিকার ব্যাপারে ট্র্যাডিশানাল ধারণাগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক। জাপান, কোরিয়া, চীনের মত জায়গাগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে এ নতুন ট্রেন্ড।

পাশাপাশি পশ্চিমেও পরিবর্তন আনার চেষ্টা চলছে আদর্শ পুরুষের ধারনায়। হাঙ্কদের জায়গা এখন দখল করে নিচ্ছে টুইঙ্ক-রা (The hunks are being replaced by twinks)। যেভাবে ষাটের দশক থেকে ব্যাপকভাবে নারীর ট্র্যাডিশানাল ভূমিকাকে আক্রমণ করে ‘আধুনিক নারী’র এক কাঠামো ম্যাস মিডিয়ার মাধ্যমে প্রমোট করা হয়েছিল, অনেকটা সেভাবেই এখন চলছে পুরুষ থেকে পুরুষত্বকে বাদ দিয়ে ‘আধুনিক পুরুষ’ তৈরির প্রজেক্ট।

শিল্পকে যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা নতুন কিছু না। এক অর্থে একে হাজার বছরের পুরনো কৌশলও বলা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে অ্যালগরিদম বুস্ট এবং ম্যাস মিডিয়ার সমর্থনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে, নির্দিষ্ট কিছু কন্ঠকে ফুলিয়েফাপিয়ে উপস্থাপনের বিষয়টা সেই পুরনো কৌশলের আধুনিক সংস্করণ বলা যায়। তবে এসবের মাধ্যমে সামাজিক ও নৈতিকতার পরিবর্তনের বিষয়টা ইন্ট্রেস্টিং হলেও, এই ট্রেন্ডের একটা বৃহত্তর সভ্যতাগত তাৎপর্য আছে। পুরুষত্বকে আক্রমণ করা, নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য মুছে দেয়া এবং অবাধ যৌনতার এ প্রবণতাগুলো বহন করে সভ্যতার অবক্ষয় ও পতনের কালের চিহ্ন।

চিন্তাপরাধ থেকে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা এখানে পুনরাবৃত্তি করা যায় –

“প্রত্যেক বড় বড় সভ্যতার মধ্যে এ চক্র দেখতে পাওয়া যায়। সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ে মহিমান্বিত করা হয় পুরুষত্বকে। কিন্তু অবক্ষয়ের পর্যায়ে সমাজ, শিল্প ও সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেতে শুরু করে পুরুষত্বের বদলে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য। রোমান সভ্যতার শুরুর দিকের ভাস্কর্যগুলো যুদ্ধংদেহী, অ্যালফা-মেইল (Alpha Male)। শেষের দিকে জয়জয়কার আঁকাবাঁকাভাবে দাঁড়ানো মেয়েলি ডেইভিডদের।

বিভিন্ন সভ্যতার ক্ষেত্রে এই প্যাটার্নের পুনরাবৃত্তি হয়। অবক্ষয়ের পর্যায়ে এসে সভ্যতাগুলোর মধ্যে পুরুষত্ব, পরিবার, যৌনসংযমের বদলে মহিমান্বিত করা হয় যৌনবিকৃতিকে। হঠাৎ করে বিস্ফোরণ ঘটে সমকামিতা, উভকামিতা, অজাচার, পশুকামিতা, স্যাইডোম্যাসোকিযম, বন্ডেজ, জেন্ডার গেইমসসহ বিভিন্ন যৌনবিকৃতির। বিকৃত আচরণগুলো অর্জন করে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা।

অবশ্য ওই সভ্যতার মানুষ এগুলোকে অবক্ষয় ও পতনের চিহ্ন হিসেবে দেখে না; তাদের কাছে এগুলোকে মনে হয় নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষ আর সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গির ফসল। অ্যারিস্টোক্র্যাটিক, অভিজাত মুক্তচিন্তা। যৌনতার ব্যাপারে এমন মুক্তবাজারি দৃষ্টিভঙ্গিকে তারা সংজ্ঞায়িত করে প্রগতি আর উন্নতির নামে। এটাকেই তারা মনে করে সভ্যতার মাপকাঠি। কিন্তু ঐতিহাসিক দূরত্ব থেকে দেখা যায়, এই সভ্যতা আসলে তার নিজের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।

আত্মপরিচয়ের সংকটে পড়া সভ্যতা এবং এ সভ্যতার নাগরিকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যাচ্ছে নিজ শরীর ও সত্তার ব্যাপারে। এ সভ্যতা নিজের পুরুষত্বকে প্রশ্ন করছে, প্রশ্ন করছে নিজের পরিচয়কে। যা কিছুর মাধ্যমে সভ্যতা একসময় মাহাত্ম্য অর্জন করেছিল, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া তার ছিটেফোঁটা এখনো রয়ে গেছে, কিন্তু অবক্ষয়কালের মানুষ হারিয়ে ফেলেছে এর সাথে সব সম্পর্ক।”

#অবক্ষয়কাল, #চিন্তাপরাধ

আরো দেখুন –

  • Who Paid the Piper? : CIA and the Cultural Cold War, Frances Stonor Saunders
  • Modern Art Was CIA ‘weapon’, Frances Stonor Saunders
  • Welcome To The Age Of The Twink, Nick Haramis, The New York Times
  • Flowerboys and the appeal of ‘soft masculinity’ in South Korea, BBC
  • K-pop boy bands defy traditional idea of masculinity, The Jakarta Post
  • K-pop’s rise in China is fueling fears of a masculinity crisis, Ephrat Livni, Quartzy

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *