ইরাকের গভর্নর ইমাম আবু হানিফাকে কাযী বানাতে চাইলো। কিন্তু আবু হানিফা তার অধীনে চাকরি করতে অস্বীকৃতি জানালেন। সরকারি পদ গ্রহণে অস্বীকৃতির কারণে ইমাম আবু হানিফার ওপর নির্যাতন শুরু হয়। একপর্যায়ে গভর্নর বললো, তাঁকে গিয়ে বলো প্রস্তাব মেনে নিলে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে। হয় তিনি পদ গ্রহণ করুন, নতুবা চাবুক মারা অব্যাহত থাকবে। আবু হানিফা বললেন, “তুমি ফিরে যাও এবং তাকে বলো, আল্লাহর কসম, সে যদি আমাকে ওয়াসিলের কোনো মসজিদের দরজা গুনতে বলে, আমি সেটাও করব না।”
মিহনাহর সময় মু’তাযিলাদের একজন এসে ইমাম আহমাদকে বললো, আপনি একবার আমার কানে ফিসফিস করে বলুন, কুরআন সৃষ্ট, যাতে আমি খালিফাহর কাছে আপনার জন্য সুপারিশ করতে পারি। ইমাম আহমাদ বললেন – তুমি একবার আমার কানে বলো যে, কুরআন অসৃষ্ট, যাতে আমি আল্লাহ্র কাছে তোমার জন্য ক্ষমা চাইতে পারি।
শাইয়খ ওয়ালিদ আস-সিনানিকে চারবার মুক্তির অফার দেয়া হয়েছিল। শুধু একটা কাগজে সাইন করতে হবে। শায়খ প্রতিবার প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিচের ভিডিওতে ৭৫ মিনিটের সাক্ষাৎকারে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে উপস্থাপক তাঁকে কনভিন্স করার চেষ্টা করেছে- কথা দাও, তুমি যা বলছো এগুলো আর বলবে না। আমরা দু’জন এখান থেকে একসাথে হেঁটে বের হবো।
শায়খ ওয়ালিদ বলেছেন, বন্দ্বীত্ব থেকে মুক্তি সবাই চায়। কিন্তু আমি মরে গেলেও আমার অবস্থান থেকে সরবো না।
ইন্টারভিউর এই সেটআপ ৭১ টিভি যারা দেখেছেন তাদের চেনার কথা। একজন আলিম বা দা’ঈকে এনে নানা ভাবে কথার মারপ্যাঁচে ফেলে অপ্রস্তুত বা অপমান করার চেষ্টা। কিন্তু যেটা অপরিচিত ঠেকতে পারে তা হল শায়খের অ্যাটিটিউড। সরকার এবং মিডিয়া, কাউকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দেননি। শুরুতে মিসওয়াক করা থেকে শুরু করে, উপস্থাপকের কথা থামিয়ে তার গোত্র নিয়ে প্রশ্ন করা – পুরো সময় জুড়ে কখনো অপ্রতিভ না, অ্যাপলোজেটিক না। কোন শব্দের খেলা নেই, কোন আমতা আমতা ব্যাখ্যার চেষ্টা নেই। মাথাব্যাথা নেই সুশীলদের সামনে নিজেকে ‘সফিসটিকেইটেড’ প্রমাণ করার। সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহর কথা বলেছেন। স্পষ্টভাবে হক্ব উচ্চারণ করেছেন কোন নিন্দুকের নিন্দার পরওয়া না করে।
আমাদের দেশে সুশীলতা, পড়াশোনা, “চিন্তার গভীরতা’ মাপার যে মাপকাঠি আছে, সেটা খুব কঠিন কিছু না। ধরাবাঁধা কিছু অবস্থান গ্রহণ করে কিছু বুলি আওড়ে গেলে কালচারড হয়ে যাওয়া যায়। ‘মডার্ন’ হওয়া তো আরো সোজা। পশ্চিমের বুদ্ধিজীবিতার স্ট্যান্ডার্ডও আকাশছোয়া কিছু না। নির্দিষ্ট কিছু বিষয় আছে, কিছু কথাবার্তা আছে, কিছু অ্যাপ্রোচ আছে, এগুলো গ্রহণ করলেই নিজেকে খুব প্রেসেন্টেবল করা যায়। আর এখন ‘ব্যালেন্সড ইসলামিস্ট’ হওয়া সম্ভবত সবচেয়ে সোজা। সবকিছুকে ইজতিহাদি, কিংবা ব্যাখ্যাসাপেক্ষ বলে, লেফটিস্ট স্টাইলে পশ্চিমা পলিসির কিছু সমালোচনা করে তারপর কিভাবে লিবারেল ফ্রেইমওয়ার্কের সাথে সঙ্ঘর্ষে না জড়িয়ে ইসলাম ‘পালন’ করা যায়, সেই পথ বাতলে দিলেই হল। কিন্তু কঠিন হল, নিজের আদর্শের ওপর অটল থাকা। কাফিরদের চিন্তার এই স্ট্যান্ডার্ডকে পরোয়া না করা। কুরআন এবং সুন্নাহকে নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া। এবং শত বিরোধিতার মোকাবেলায় কোন রকম কাটছাট না করে হক্বকে আকড়ে ধরে রাখা।
আরোপিত ঐ স্মার্টনেস, অন্যকে মুগ্ধ করার চেষ্টা কিংবা “ইন্টেলেকচুয়াল ডেপথ’, সফিসটিকেইটেড ওয়ার্ল্ডভিউ – এগুলোর প্রতি আমাদের অনেক দুর্বলতা কাজ করে। এগুলোর কারণে অনেক সময় সত্যকে বুঝেও আমরা স্বীকার করতে চাই না। কিন্তু এগুলো অর্জন করা সোজা। একটা নতুন ভাষা শিখতে যতোটুকু সময়-শ্রম দিতে হয় তার এক-চতুর্থাংশ কিংবা আরো কম দিয়ে এই “গভীরতা” অর্জন করা যায়। খুচরো, তুচ্ছ জিনিস। আলটিমেটলি মূল্যহীন।
কিন্তু এই মানুষটার চাঁছাছোলা, সোজাসাপ্টা কথার মধ্যে এমন কিছু আছে যেটা দশকের পর দশকেও অর্জন করা যায় না। ইমানের শক্তি, ‘ইযযার গভীর অনুভূতি, আর আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো মুখাপেক্ষী না হবার প্রশান্তি। প্রথমবার যখন ইন্টারভিউটা দেখেছিলাম বারবার একথাটা মনে হচ্ছিল।
সময় থাকলে ইন্টারভিউটা দেখে ফেলতে পারেন। মূল আরবীতে, ক্যাপশনে ইংলিশ সাবটাইটেল। ইংলিশ সাবটাইটেলের জন্য ভিডিও সেটিংস এ গিয়ে CC অন করুন।