– দু’জনের পারস্পরিক সম্মতি (consent) থাকলে যা কিছু করো কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সম্মতি না থাকলে সেটা রেইপ।
– আবার ১৮ বছরের নিচে বয়স হলে সম্মতি দিলেও সেটা রেইপ। কারণ যার বয়স ১৮ বছরের নিচে তার সম্মতি দেয়ার মতো পরিপক্কতা আসেনি।
আচ্ছা যদি দু’জনের বয়স ১৮ বছরের কম হয়? তাহলে সেটা কী? পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে রেইপ?
২০০৩ তে অ্যামেরিকার ইউটাহতে এমন হয়েছিল। মিউচুয়ালে ‘রেইপ’ বলা যায়! গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড। ছেলের বয়স ১২, মেয়ের বয়স ১৩। বাচ্চাও হয়েছিল। পরে মামলা হয়। দু’জনকে একই সাথে অভিযুক্ত করা হয় ভিকটিম এবং ধর্ষক হিসেবে। শেষমেষ ছেলেটা বিচারে অপরাধী সাব্যস্ত হয়, মেয়েটা খালাস পায় [১]। একই যাত্রায় ভিন্ন ফল কেন, তার কোন ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।.আরো কিছু প্রশ্ন চিন্তা করা যাক, কী বলেন?
১৭ বছর পর্যন্ত যে কাজ করলে কোন দায়বদ্ধতা নেই, কেন ১৮ বছর হবার পর ম্যাজিকালি সেটা বদলে যাবে? যদি বিজ্ঞানের কথা বলেন, ১৭ বছর ছয় মাসের একটা মেয়ে আর ১৮ বছর ১ দিনের একটা মেয়ের মধ্যে তফাত কী? শারীরিকভাবে? মানসিকভাবে? .আর ১৮ সংখ্যাটা বাছাই করা হলও বা কীভাবে? ১৮ কেন? ১৯ না কেন? ১৭ না কেন? ২৩ না কেন? ?
এটা কি বিবর্তনের ফসল? নাকি খেয়ালখুশি মতো বেছে নেয়া একটা সংখ্যা?.আবার পশ্চিমা সেক্সোলজির রথী-মহারথী যাদের প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী আজ আমাদের স্কুলগুলোতে ‘যৌন শিক্ষা’ ক্লাস হয়, তাদের বক্তব্যের দিকে তাকালে এই ১৮ আর এই ধর্ষন তত্ত্বের কোন ভিতই পাওয়া যায় না। এদের ইজমা হল, শিশুরা জন্ম থেকেই যৌন জীব। জন্মের পর থেকেই শিশুরা যৌনতা সম্পর্কে সচেতন, যৌনতায় সক্রিয় এবং যৌনসুখ অর্জনে সক্ষম। জন্মের পর থেকেই একজন শিশুর মধ্যে যৌনতার ধারণা ও বোধ থাকে [২]। তাহলে ১৮ হবার আগ পর্যন্ত একজন মানুষ ‘সম্মতি’ দিলেও সেটা গ্রহণ করা হবে না কেন? ১৮ বছরের নিচের লোকেরা কি মানুষ না? তাদের কি অধিকার নেই?
আরেকটা দিক থেকে ব্যাপারটা দেখা যায়। পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যেকোন কাজকে হালাল বানানোর বিষয়টা এসেছে হার্ম প্রিন্সিপাল থেকে। যদি কোন কাজ কারো আনন্দ বৃদ্ধি করে এবং অপরের ক্ষতি না করে তাহলে সেটা জায়েজ। ‘যা করছে করুক, কারো ক্ষতি তো করছে না!’ এ যুক্তি দিয়েই সমলিঙ্গের সাথে যৌনতার সাফাই গাওয়া হয়।
যদি তাই হয় তাহলে ১৬ বছরের ছেলে আর ১৮ বছরের মেয়ে যদি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে কিছু করে তাহলে সেটাকে ধর্ষন কেন বলা হবে? ছেলেটা আনন্দ পেয়েছে নাকি তার ক্ষতি হয়েছে এটা কে ঠিক করবে? এই কথা বলার অধিকার কার? আচ্ছা বলুন তো, আজকের পৃথিবীতে এমন কয়জন ১৬ বছর বয়েসী ছেলে পাওয়া যাবে যারা নিজের পছন্দের কোন মেয়ের সাথে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হওয়া ‘মেলামেশা’কে, ধর্ষন তো দূরের কথা, নিজের ক্ষতি মনে করবে? ছেলেটা যদি জোর গলায় দাবি করে তার ক্ষতি হয়নি, তাও কেন মেয়েটাকে ধর্ষক সাব্যস্ত করা হবে?
যা করছে করুক, কারো ক্ষতি তো করছে না – তাই না?
১৮ বছরের এই ম্যাজিক রুল আমাদের দেশে আমদানী করা হয়েছে পশ্চিম থেকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল পশ্চিমে যদিও এখনো ১৮ বছরের নিয়ম কাগজে কলমে আছে, সেই সাথে এই নিয়মও আছে যে- যদি কোন ১০ বছর বয়সী মেয়ে মনে করে সে ‘ভুল দেহে জন্ম’ নিয়েছে তাহলে সে পিউবার্টি ব্লকার থেকে শুরু করে, টেস্টোস্টেরোন ট্রিটমেন্ট, ম্যাসটেকটোমি – সব কিছু নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
অদ্ভূত বৈপরীত্য!
১৮ হবার বহু আগেই নিজের দেহকে আমূল বদলে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত সে নিতে পারে। এইটুক পরিপক্কতা আবার তার আছে। কিন্তু ১৮ এর আগে কনসেন্ট দেয়ার ক্ষমতা সে রাখে না। নিজের লিঙ্গ বদলে ফেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সে দিতে পারে, কিন্তু কার সাথে শোবে সেই সিদ্ধান্ত সে দিতে পারবে না?
কী বিচিত্র বিশৃঙ্খলা। যেকোন মানুষ, যেকোন সুস্থ মানুষ যদি বসে, অল্প একটু সময় চিন্তা করে তাহলে এই বিচিত্র নৈতিকতার অ্যাবসার্ডিটি বুঝতে পারবে। একই সাথে বাংলাদেশের লিবারেল মিশনারীরা আসলে কতো নিচু মানের ভাসাভাসা, সস্তা কথাবার্তাকে গভীর জীবনবোধ, অধিকার আর মানবতা বলে চালিয়ে দেয় তাও বোঝা যাবে। এই সব নিয়ম, এই সব নীতি হল মানুষের খামখেয়ালির ফসল। এর মধ্যে কোন যুক্তি নেই, কোন সামঞ্জস্য নেই, সমন্বয় নেই। নো রাইম অর রিসন।
সুস্থ বিবেক এই সব ‘নীতি’ আর ‘নৈতিকতা’ প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু ব্যক্তিপর্যায়ে এবং সামষ্টিকভাবে আজ আমরা সত্য থেকে এতোটাই দূরে সরে গিয়েছি যে, এই বিশৃঙ্খলা আর অসভ্যতাকে আমাদের কাছে সভ্যতা মনে হচ্ছে। সত্যিকারের দিকনির্দেশনা, সত্যিকারের পরশপাথর, পরম মানদণ্ড আল ফুরকানকে হাতের কাছে অবহেলা ভরে ফেলে রেখে আমরা বর্বরদের অনুকরণে স্বপ্ন দেখছি নিজেদের উন্নতির।
[১] Girl, 13, charged as sex offender and victim, The Salt Lake City Tribune, Dec 5 2006
[২] Alfred Kinsey, 1948. Sexual Behavior in the Human Male,Alfred Kinsey, 1953. Sexual Behavior in the Human Female,John Money, 1993. Development of paraphilia in childhood and adolescence (1993)