নবীকে ﷺ ভালোবেসে কী লাভ?


অনেকে বলে, ‘নবীকে ﷺ ভালোবেসে কী লাভ, যদি তুমি তাঁর কথাই না শুনো? যদি তাঁর আদেশ-নিষেধ না মানো?’

আমি বলি, লাভ আছে! অনেক লাভ আছে যদি কোন মুসলিমকে শরীয়াহর বিধান মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এমন কথা বলা হয়, তাহলে আমার আপত্তি নেই। আল্লাহ ও রাসূল ﷺ-এর আনুগত্য করতে উৎসাহিত করার জন্য এমন বলা যেতে পারে। কিন্তু আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন যে লড়াই চলছে সেটা খোদ ইসলামের প্রশ্নে লড়াই। এ পরিস্থিতিতে এধরনের বক্তব্য সঠিক না।

আমি এখানে ফ্রান্সের পণ্য বয়কট নিয়ে কথা বলছি না। বয়কট হল রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সমর্থনে এগিয়ে আসার অনেক উপায়ের মধ্যে একটা উপায়। অনেক মুসলিম হয়তো এটুকুও করতে পারবেন না। কিন্তু আজ যা হচ্ছে, এর পেছনে কাফেরদের উদ্দেশ্য কী, সেটা আমাদের বুঝতে হবে। কাফেররা, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের শত্রুরা চায় রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সম্মানের বিষয়টা আমরা হালকা করে দেখি। তারা চায়, রাসূলুল্লাহ ﷺ -কে নিয়ে তাদের হাসিতামাশা করার চেষ্টাকে আমরা তুচ্ছ করে দেখি। বাকস্বাধীনতা আর ব্যাক্তিস্বাধীনতার বুলিতে মজে আমরাও তাদের সাথে একই কাতারে অবস্থান নেই। কোন মুসলিম এটা মেনে নিতে পারে না।

আমরা সব মুসলিমের প্রতি দুটি আহবান করছি। প্রথমত, ইমানের সর্বনিম্ন দাবিটুকু পালন করে, নিজেকে চিরন্তন আগুন বাচানোর জন্য আল্লাহ ও তাঁর নবী ﷺ-কে মহিমান্বিত করুন, ভালোবাসুন। তাঁদের শত্রুদের প্রত্যাখ্যান করুন। বিদ্বেষপোষণ করুন। আল্লাহ ও রাসূল ﷺ-এর শত্রুদের মিত্র হওয়া থেকে, তাদের কাতারে অবস্থান নেয়া থেকে বিরত থাকুন। এটা ইমানের সর্বনিম্ন দাবি। আপনি অবাধ্য বান্দা, মদপানকারী, সুদখোর। আপনি পর্দা করেন না, আপনি পিতামাতার অবাধ্য – আপনার যে গুনাহই থাকুক না কেন এতোটুকু আপনাকে করতেই হবে। এটা ইমানের দাবি। .‘আমি তো গুনাহগার, আমি এসব করে কী লাভ হবে’ – এধরনের কথা বলবেন না। আপনার লাভ হল, এটুকু করে আপনি ইমানের সর্বনিম্ন দাবিটুকু পূরণ করবেন। কুফর থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন, এবং মুমিনদের দলভুক্ত হবেন। এটুকু করার মাধ্যমে আপনি এই আয়াতের বক্তব্যের অন্তর্ভুক্ত হবেন –

…নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করা ক্ষমা করবেন না। এটা ছাড়া অন্য সব যাকে ইচ্ছে মাফ করবেন… (তরজমা, সূরা আন-নিসা, ৪৮)

রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর একজন সাহাবী ছিলেন। মদ পান করার কারণে তাঁকে বেশ কয়েকবার শাস্তি দেয়া হয়েছিল। বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। তাঁকে শাস্তি দেয়া হত। তারপর তিনি আবার মদ পান করতেন। একদিন তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য আনা হল। উপস্থিত মুসলিমদের একজন বলে উঠলেন,

‘আল্লাহ তার ওপর অভিশাপ করুন! কতোবার তাকে নিয়ে আসা হয়েছে!’ রাসূল ﷺ প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘তাকে অভিশাপ দিও না। আল্লাহর কসম! সে আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালোবাসে।’ (বর্ণনাটি বুখারিতে আছে, হাদিস নং ৬৭৮০)

দেখুন, গুনাহগার হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ ও রাসূল ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসা তাঁর কাজে এসেছিল। এটা আমার কথা না, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কথা। তাই নবী ﷺ-এর প্রতি গুনাহগার মুসলিমের ভালোবাসায় কী লাভ – এ প্রশ্ন করবেন না। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসার বিষয়টা ছোট করে দেখবেন না।

দ্বিতীয়ত, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ভালোবাসাকে শরীয়াহ মেনে চলার চালিকাশক্তিতে পরিণত করুন। নবী ﷺ-এর শিক্ষা মেনে চলার চেষ্টা করুন। নিজের গুনাহগুলো দূর করার চেষ্টা করুন। আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। নবী ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসা, নবীপ্রেমের আবেগ কীভাবে মানুষকে দ্বীনের দিকে ফিরিয়ে আনে, তার একটা উদাহরণ দেই।

কয়েক বছর আগের কথা। আজকের মতো তখনও অবমাননাকারীরা নবী ﷺ-এর বিরুদ্ধে আক্রমন চালাচ্ছিল। আমি তখন একটা খুতবার জন্য প্রস্তুত নিচ্ছিলাম। এমন সময় একটা খবর দেখলাম – “টপ মেলোডির তাওবাহ!”.টপ মেলোডি একটা ওয়েবসাইটের নাম। সাইটটাতে গানবাজনা, নাচ ইত্যাদি হারাম জিনিসের ক্লিপ পাওয়া যেতো। এ খবর দেখে আমি বেশ অবাক হই। ঘটনার সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করি। এ সাইটের দুজন প্রতিষ্ঠাতা ছিল। আমি তাঁদের একজনের নাম্বার যোগাড় করে আমি ফোনে কথাও বলি।

টপ মেলোডির সাইট থেকে সব গান, ভিডিও, সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। সাইটের লোগোর ওপর বড় একটা ক্রসচিহ্ন (X) দেয়া ছিল। আর সাইট কর্তৃপক্ষদের পক্ষ থেকে একটা বক্তব্য দেয়া ছিল। বক্তব্যের শুরুতে লেখা ছিল – .’শীঘ্রই’ ‘নুরুল হিদায়াহ…’অর্থাৎ, সাইটের নাম বদলানো হয়েছে। শীঘ্রই সাইটের নাম টপ মেলোডি থেকে বদলে নুরুল হিদায়াহ করা হবে। নুরুল হিদায়াহ মানে হিদায়াতের আলো।তারপর কুরআনের একটি আয়াত দেয়া ছিল,

‘নিশ্চয় তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াত দিতে পারবে না; বরং আল্লাহই যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন। আর হিদায়াতপ্রাপ্তদের ব্যাপারে তিনি ভাল জানেন।’ (তরজমা, সূরা আল-কাসাস, ৫৬)

এ আয়াতের নিচে লেখা ছিল –

‘সময় এসেছে, গান শোনা বন্ধ করে আমাদের হৃদয়ের কথা শোনার। সম্প্রতি রাসূলুল্লাহর প্রতি যে অবমাননা করা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে সাইটের অ্যাডমিনরা এ সাইটটি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ গান শোনা হারাম। আমাদের রাসূল ﷺ-এর অবমাননা করা হচ্ছে আর আমরা বসে বসে গান শুনছি, ভিডিও দেখছি? এটা কীভাবে সম্ভব? সময় এসেছে আমাদের অন্তরের কথা শোনার। সময় এসেছে আমাদের নিজেদের দিকে তাকাবার। আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করার। ইসলামের জন্য আমরা কী করেছি? নবী ﷺ-এর রক্ষায় আমরা কী করেছি?’

বক্তব্যে আরো লেখা ছিল যে সাইটিতে তখন ১৮০,০০০ সদস্য ছিল। তাঁদের মাসিক আয় ছিল, ৭০০ ডলার। অর্থাৎ লসের কারণে তারা সাইট বন্ধ করেননি। বরং দুনিয়াবি হিসেবে তাদের সাইট সফল ছিল।. বক্তব্যে বলা হয়েছিল, ‘এ অর্জনগুলো আমরা শুধু প্রমান হিসেবে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আমাদের অর্জন যাই হোক না কেন, মহান আল্লাহর রহমতের সাগরের তুলনায়, তাঁর সন্তুষ্টি আর পুরস্কারের তুলনায় এগুলো অণু পরিমাণ মূল্য নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মান, তাঁর প্রতি ভালোবাসার সামনে একগুলোর এক কানাকড়ি মূল্য নেই। হে রাসূল! আপনার জন্য আমাদের জান কুরবান হোক।’

দুয়া করি আল্লাহ ও নবী প্রতি যে ভালোবাসা এই ভাইরা দেখিয়েছেন আল্লাহ যেন তা জন্য এই ভাইদের সম্মানিত করেন, তাঁদের পুরস্কৃত করেন।

ড. ইয়াদ আল-কুনাইবির একটি বক্তব্য অবলম্বনে..

নবী ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসা এমন বিষয় যা মৃতপ্রায় ইমানকে জাগিয়ে তোলে। নবী এর উপর আক্রমন হতে দেখলে মানুষের অন্তরে এমন ইমান জেগে ওঠে, যে ইমানের অস্তিত্ব সম্পর্কে সে নিজেও হয়তো জানতো না। পাথুরে, শেওলা পড়ে যাওয়া কলুষিত অন্তরেও নবীপ্রেমের আবেগ ইমানের প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়। তাই এ বিষয়টিকে তুচ্ছ করবেন না।.দুয়া করি যে ভাইরা আজ নবী ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসায় আল্লাহর কাছে ফিরে আসছেন, নবীর ওপর আক্রমন দেখে কষ্ট পাচ্ছেন। চোখের পানি ফেলছেন, নিজের মুসলিম পরিচয়কে, নিজের ঈমানকে নতুন করে আবিস্কার করছেন, মহান আল্লাহ তাঁদেরকেও সম্মানিত করুন, উত্তম পুরস্কার দিন। তাঁদেরকে পরিপূর্ণভাবে নবী এর সুন্নাহ মেনে চলার তাউফিক দিন। আর আল্লাহর নবী ﷺ-র সমর্থনে এগিয়ে আসা অগ্রপথিকদের আল্লাহ কবুল করুন, তাঁদের কাজে বারাকাহ দিন। তাঁদের জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। .’হে রাসূল! আপনার জন্য আমাদের জান কুরবান হোক।’

#Boycott_French_Products

#OurProphetOurHonour


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *