মজার ব্যাপার হলো, হালের ট্র্যান্সজেন্ডার মুভমেন্টের (LGBT এর** T**) পক্ষে দেয়া যুক্তিগুলো দিয়ে খুব সহজে সমকামিতার পক্ষে দেয়া যুক্তিগুলো খণ্ডন করা যায়।
সমকামিতার পক্ষে বহুল ব্যবহৃত একটি যুক্তি হলো মানুষ জন্মগতভাবেই সমকামী হয় (‘born this way’)। আবার অনেকে বলার চেষ্টা করে একটি বিশেষ জিন (the gay gene) এর কারণে কিছু মানুষ সমকামী হয়ে জন্মায়। অর্থাৎ তারা দাবি করে সমকামীদের যৌনতা নির্ধারিত বায়োলজি দ্বারা।
আবার দেখুন ট্র্যান্সজেন্ডার উন্মাদনার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলা হচ্ছে যৌনতা, লৈঙ্গিক পরিচয় এসব পরিবর্তনশীল। কোনো কিছুই পাথরে লেখা না। নারী হয়ে জন্মানো মানুষ একসময় পুরুষ হতে পারে, যে নারীদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করত, একসময় সে আকর্ষণ বোধ করতে পারে পুরুষের প্রতি। এগুলো খুবই স্বাভাবিক।
যদি আসলেই তা-ই হয়, তাহলে নিশ্চয় সমকামিতাও জন্মগত হতে পারে না। জন্মগত লিঙ্গ আর যৌনতাকেই যদি অস্বীকার করা হয়, তাহলে আর জন্মগত সমকামিতা বলে কী থাকে? ঠিক একইভাবে ‘সমকামী জিন’ বলেও কোনোকিছু থাকতে পারে না। কারণ, ট্র্যান্সজেন্ডার আন্দোলনের পক্ষে দেয়া যুক্তি অনুযায়ী সমকামিতা, উভকামিতা, পশুকামিতা, কিংবা নারী-পুরুষের স্বাভাবিক যৌনতা–কোনো কিছুই জিনগত না, বায়োলজিকালি নির্ধারিত না। এগুলো সবই বদলাতে পারে। যার অর্থ একজন সমকামী, একসময় বের হয়ে আসতে পারে সমকামিতা থেকে। আর এটা যদি সাধারণভাবে ঘটতে পারে, তাহলে নিশ্চয় চিকিৎসার মাধ্যমেও কাউকে সমকামিতা থেকে বের করে আনা সম্ভব।
অর্থাৎ ট্র্যান্সজেন্ডার উন্মাদনার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে সমকামিতার পক্ষে চালানো নিজেদের প্রপাগ্যান্ডাকেই খণ্ডন করে বসে আছে মিলিট্যান্ট সেক্যুলারিযম। তাদের এক কথা আরেক কথার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
এ কারণে সেকেন্ড ওয়েব ফেমিনিস্টদের অনেকেই ট্র্যান্স-অ্যাক্টিভিস্টদের ওপর খুব ক্ষেপা। কারণ ট্র্যান্স আন্দোলন নারীত্বের (এবং পুরুষত্বের) সংজ্ঞা এবং অর্থকেই আক্রমন করে বসেছে। অন্যদিকে ট্র্যান্স-অ্যাক্টিভিস্টরা এই ধরণের ফেমিনিস্টদের TERF বলে (Trans Excluding Radical Feminists) বলে আক্রমন করছে। অসংলগ্ন ধ্যানধারণা ও মতাদর্শের মধ্যে সাংঘর্ষিকতার এই প্যাটার্ন বারবার দেখা যায়।
এই অর্থহীন যৌন-মানসিক বিকৃতির জট ইসলামের আলোতে খোলা খুব সোজা। আমরা জানি, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ফিতরাহর (natural disposition) ওপর। মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হলো বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। সমকামিতা জন্মগত না, স্বাভাবিকও না; বরং একটি যৌন-মানসিক বিকৃতি। জীবনের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে প্রতিটি মানুষ বয়ঃপ্রাপ্ত (বালেগ) হয় এবং তখন থেকে সে অর্জন করে যৌনতায় সক্রিয় হবার সক্ষমতা। অঞ্চল, আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে এই বয়সের মধ্যে কিছু পার্থক্য হয়; কিন্তু কোনো শিশুই যৌন-জীব হিসেবে জন্ম নেয় না।
একইভাবে আমরা জানি আল্লাহ ভুল করেন না। কাজেই ভুল করে, ছেলের দেহে মেয়ে বা মেয়ের দেহে ছেলে আটকা পড়েছে–এ ধরনের কোনো কিছু হওয়া সম্ভব না। হয় এটা মানসিক রোগ, বিকৃতি, বাহ্যিক কোনো ফ্যাক্টরের প্রভাব (শৈশবের যৌন-মানসিক নিপীড়ন, শক, ট্রমা ইত্যাদি) অথবা সিহর বা জ্বিন শায়াত্বিনের প্রভাব।
আর যারা সত্যিকার অর্থে শারীরিকভাবে ইন্টারসেক্স (মোট জনসংখ্যার ০.০১৮%), তাদের হুকুম হাদিস থেকে স্পষ্ট এবং এটা তাদের জন্য একটি পরীক্ষা।কিন্তু যখনই আপনি পরম মানদণ্ডকে ছেড়ে আপেক্ষিকতার গলিতে ঢুকে পড়বেন, কোনো কূলকিনারা পাবেন না।
আপেক্ষিক নৈতিকতা আর সামাজিকতাকে নৈতিকতার মানদণ্ড হিসেবে নেয়ার অনেক নেতিবাচক ফলাফলের মধ্যে একটা হলো পশ্চিমের আজকের এই যৌন অবক্ষয়। সমকামিতা, ট্র্যান্সজেন্ডার আর শিশুকামিতা নিয়ে উন্মাদনা। যৌনতা এবং যৌনবিকৃতি এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে শক্তিশালী, কারণ এ বিষয়গুলো সহজাতভাবে মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে; কিন্তু একই ধরনের বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান পশ্চিমা চিন্তা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অন্যান্য ক্ষেত্রেও।
পশ্চিমা সভ্যতা তাদের উৎকর্ষের চরমে পৌঁছানোর পর এখন আছে অবক্ষয় আর অধঃপতনের পর্যায়ে। প্রত্যেক সভ্যতার এই পর্যায়ে দেখা দেয় নানান ধরনের যৌনবিকৃতি ও সীমালঙ্ঘন। লেইট স্টেইজ ডেকাডেন্স। পশ্চিম এখন ঠিক এ অবস্থায় আছে। অল্প হলেও তাদের মধ্যে কেউ কেউ এটা বুঝতেও শুরু করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা মুসলিমরা এখনো অনিমেষ চোখে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছি পচতে শুরু করা অতিকায় এই কাঠামোর দিকে। অথচ সত্যিকারের দিকনির্দেশনা, সত্যিকারের পরশপাথর, পরম মানদণ্ড আল ফুরকানকে হাতের কাছে অবহেলা ভরে ফেলে রেখে আজও স্বপ্ন দেখছি তাদের অনুকরণে নিজেদের উন্নতির। কী বিচিত্র ইচ্ছা-অন্ধত্ব! কী অদ্ভুত আত্মঘৃণা!