চিরন্তন যুদ্ধ


বিভিন্ন ব্লকবাস্টার সিনেমা, বেস্টসেলার নভেল এমনকি ছোটকালের শোনা রূপকথাগুলোর মধ্যে একটি কমন থিম দেখতে পাবেন। ভালো ও মন্দের চিরন্তন যুদ্ধ। ইসলামও আমাদের কাছাকাছি ধরনের একটা ধারণা দেয়। তবে মানুষের কল্পনায় গড়ে ওঠা গল্পের সাথে ইসলামের জানানো এ সত্যের কিছু পার্থক্য আছে। ইসলাম ভালো ও মন্দের এ লড়াইকে চিরন্তন বলে না। এর শুরুটা আমাদের পিতা আদম আলাইহিস সালাম -এর সৃষ্টির সময় থেকে। আর এ লড়াই চলবে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত। মানব ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকে আমাদের প্রকাশ্য শত্রু নিরন্তর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তার উদ্দেশ্য– আমাদের মধ্য থেকে যত বেশিজনকে সম্ভব তার সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া। নানাভাবে মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে, সত্য থেকে বিচ্যুত করা। যুগে যুগে মানুষ ও জিনজাতির অনেকেই এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আর-রাজীম ইবলিশের অনুসারী হয়েছে।

অন্যদিকে আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল যুগে যুগে তাঁর বান্দাদের মাধ্যমে আমাদের সামনে সুস্পষ্টভাবে সত্যকে উপস্থাপন করেছেন। আমাদের সতর্ক করেছেন এ যুদ্ধের বাস্তবতা এবং আখিরাতের পরিণতি সম্পর্কে। অবহিত করেছেন মানব অস্তিত্বের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে। একইসাথে কীভাবে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব তার পুঙ্খানুপুঙ্খ দিকনির্দেশনা তিনি আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং একদিকে বিতাড়িত শয়তান এবং মানুষ ও জিনজাতির মধ্যেকার তার অনুসারীরা যুদ্ধ করছে আমাদের সত্য পথ থেকে বিচ্যুত করতে। অন্যদিকে আর-রাহমানের বান্দারা যুদ্ধ করছেন আমাদের আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল-এর আনুগত্য ও সত্যের ওপর দৃঢ় ও অবিচল রাখতে।

আর-রাহমানের এ বান্দাদের মধ্যে অগ্রগামী হলেন নবি ও রাসূল আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালামগণ। আর মূল যে বিষয়টির শিক্ষা দিয়ে আল্লাহ তাঁদের পাঠিয়েছেন তা হলো তাওহিদ, যার স্তম্ভ হলো দুটি। কুফর বিত তাগুত ও ঈমান বিল্লাহ। সকল তাগুত, সকল মিথ্যা উপাস্যকে প্রত্যাখ্যান করা ও এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ -কে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা। এটিই হলো মানবজাতির ওপর প্রথম ফারযিয়্যাত, প্রথম দায়িত্ব।

আল্লাহ্‌ আয্যা ওয়া জাল বলেন,
প্রত্যেক জাতির কাছে আমি রাসূল পাঠিয়েছি (এ সংবাদ দিয়ে) যে, আল্লাহর ইবাদত করো আর তাগুতকে বর্জন করো। অতঃপর আল্লাহ তাদের মধ্যে কতককে সৎপথ দেখিয়েছেন, আর কতকের ওপর অবধারিত হয়েছে গোমরাহী, অতএব জমিনে ভ্রমণ করে দেখো, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণতি কী ঘটেছিল! (সূরা আন-নাহল, ৩৬)

এবং তিনি বলেন,
অতএব, যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, অবশ্যই সে মজবুত রশি আঁকড়ে ধরে, যা ছিন্ন হবার নয়। (সূরা আল-বাকারাহ, ২৫৬)

যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছু ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করে, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্তার আনুগত্য করে তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ করাও এই তাওহিদের অংশ। আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল বলেন,

তোমাদের জন্য ইব্রাহীম ও তাঁর অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তাঁরা তাঁদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদাত করো তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের অস্বীকার করি; তোমাদের ও আমাদের মধ্যে শুরু হলো শত্রুতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য, যদি না তোমরা এক আল্লাহয় ঈমান আনো। (সূরা আল-মুমতাহিনা,৪)


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *