[ক]
১.
Incest এর বাংলা করা হয় ‘অজাচার’, ‘অগম্য-গমন’। শব্দগুলো অপরিচিত। অনেকের কাছে হয়তো দুর্বোধ্য। সহজভাবে বলা যায় ইনসেস্ট হল পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যৌন সম্পর্কে; যেমন ভাইবোন, পিতা ও কন্যা, মা ও ছেলের মধ্যে যৌনসম্পর্ক। ধরুন, কিছু মানুষ দাবি করা শুরু করলো তারা ইনসেস্ট করতে চায়। এই চাওয়াটা নিয়ন্ত্রণ করার কোন উপায় তাদের নেই। নিজেদের এই দিক বদলানোর কোন উপায় তাদের জানা নেই। এটা তাদের সত্ত্বার অংশ। তারা নিজেদের নাম দিল অজাচারকামী। অজাচারকামী হবার কারণে তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়। মানুষ তাদের গালি দেয়, ঘৃণা করে, একঘরে করে রাখে। অজাচার করার সময় কখনো ধরা পড়লে পিটুনিও দেয়। অজাচারকে অপরাধ মনে করা হয়। আইনী অনুযায়ী সাজা হয়। এটা অমানবিক।
ওরাও মানুষ। ওরা তো ক্ষতি করছে না। যা করার পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে করছে। প্রেম তো কোন সীমা মানে না। ওদের কী দোষ? তাই অজাচারকামীদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা যাবে না। এর এর বিরুদ্ধে সবার রুখে দাড়াতে হবে। অজাচারকামীদের অন্য দশটা মানুষের মতো মেনে নিতে হবে। অজাচারকে ডিক্রিমিনালাইয করতে হবে। মিডিয়াতে এজন্য প্রচারণা চালাতে হবে। এই মানুষগুলো নিজেদের নাম দিল ইনসেস্ট রাইটস অ্যাকটিভিস্ট। উদ্দেশ্য অজাচারকে আইনীভাবে স্বীকৃতি দেয়া, এবং অজাচারের অধিকার আদায় করা। তারা এর জন্য আন্দোলন করবে। কারণ এটা অজাচারকামীদের মানবিক অধিকার। যারা অজাচারকামী না তাদেরও উচিত অজাচারকামকে মেনে নেয়া। অজাচার করার অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয়া। একে অপরাধ মনে করা যাবে না। তাদের অন্য সবার মতো মনে করতে হবে।
অজাচারকে ডিক্রিমিনালাইয করা হল। সমাজে অজাচারকে মেনে নেয়া হল। ওরা প্রকাশ্যে অজচারের কথা বললো। মিডিয়াতে একে গ্লোরিফাই করা হল। তারপর একসময় অজাচারকামীরা বিয়ের অধিকারের জন্য আন্দোলন শুরু হলো। ভাই চাইলে বোনকে বিয়ে করে সংসার করবে। মা চাইলে ছেলেকে বিয়ে করবে। বাবা চাইলে মেয়েকে। এক্ষেত্রে কোন আইনী বাঁধা তারা মানতে রাজি না। এমন বিয়েকে আইনী বৈধতা দিতে হবে। সেটাও দেয়া হল। অজাচারকে অনৈতিক বলাকে সাব্যস্ত করা হলো ঘৃণ্য কিছু হিসেবে। তারপর ওরা আসলো বাচ্চাদের জন্য। শুরু হল স্কুলের কারিকুলামে অজাচার নিয়ে শেখানো। সেক্স এজুকেইশান ক্লাসে বলা হল স্বামী-স্ত্রীর যৌনতার মতোই ভাই ও বোন কিংবা মা ও ছেলের যৌনতাও স্বাভাবিক। বিভিন্ন ছবি, ক্লিপস আর গল্প দিয়ে অজাচারের পক্ষে সবক দেয়া হল স্কুলের শিশুদের।
২.
ওপরের অংশটা আবার পড়ুন। তবে এবার অজাচার আর জায়গায় শিশুকাম বা পেডোফিলিয়া বসান। পেডোফিলিয়া স্বাভাবিক। পেডোফিলিয়া কিছু মানুষের আত্মপরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য ও প্রধান অংশ। এটা নিয়ন্ত্রণ করার কোন ক্ষমতা তাদের নেই। তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য করা উচিত না। ঘৃণা ছড়ানো উচিত না। পেডোফাইলরাও মানুষ। তাদের পেডোফিলিয়ার অধিকার দেয়া উচিত। যারা পেডোফাইলদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায় তাদের থামানো দরকার। পেডোফাইলদের বিয়ের অধিকার দেয়া উচিত। মিডিয়াতে একে স্বাভাবিক হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। স্কুলে বাচ্চাদের শেখাতে হবে পেডোফাইল স্বাভাবিক এক ধরনের যৌনতা। কিংবা পেডোফিলিয়ার বদলে বিস্টিয়্যালিটির কথা চিন্তা করুন। পশুকাম। কিছু মানুষ পশুকামী। এটাই তাদের পরিচয়। এটা বদলানোর কোন উপায় তাদের নেই। তাদের পশুকামের অধিকার দিতে হবে। পশুকে বিয়ে করার অধিকার দিতে হবে। তাদেরও বিরুদ্ধে বৈষম্য করা যাবে না। তারা তো পশুকামী হওয়া বেছে নেয়নি। তারা কেন সাফার করবে?
ইনসেস্ট, পেডোফিলিয়া কিংবা বিস্টিয়্যালিটির ব্যাপারে এমন কোন আন্দোলন শুরু হলে, এবং এমন আইন পাশ হতে শুরু করলে কেমন লাগবে আপনার? আচ্ছা অনুভুতির ব্যাপারটা আপাতত বাদ থাক। একজন মুসলিম হিসেবে এধরণের আন্দোলনের ব্যাপারে আপনার অবস্থান কেমন হওয়া উচিত? যারা এই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী, যারা এই আন্দোলনের সমর্থক এবং যারা এই ধরনের আইন পাশ করে কিংবা করার অঙ্গীকার করে, যাদের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হল এই আন্দোলনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা – তাদের ব্যাপারে একজন মুসলিম হিসেবে আমার অবস্থান কী হওয়া উচিত?
বারা – বিদ্বেষ, সম্পর্কচ্ছেদ, শত্রুতা। ঠিক?
আমি পারলে তাদের বাঁধা দেব। বাঁধা দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে মুখে বলবো। মুখে বলতে না পারলে অন্তরে ঘৃণা করবো তাই না? যে মা এবং ছেলে একসাথে শুতে চায়, এবং বিশ্বাস করে যে আসলেই এ আকর্ষনের ওপর তাদের কোন নিয়ন্ত্রন নেই – তাদের ব্যাপারে হয়তো আমি সহানুভূতিশীল হতে পারি। হয়তো। কিন্তু যে একাজটাকে অধিকার মনে করে, একে আইনী বৈধতা দিতে চায়, মিডিয়ার মাধ্যমে এটা প্রচার করতে চায়, শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলাম বদলে দিয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে আমার সন্তানদের সেটা শেখাতে চায় তার সাথে কোন অবস্থাতেই শত্রুতা এবং সম্পর্কচ্ছেদ ছাড়া আর কোন অবস্থান নেয়ার সুযোগ আমার নেই। সে প্রকাশ্যে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের। আর যে মুসলিম ইনসেস্ট রাইটস, পেডোফিলিয়া রাইটস কিংবা বিস্টিয়্যালিটি রাইটস অ্যাকটিভিস্টদের সমর্থন করে, তাদের সাথে একতা পোষণ করে, তাদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করে সে প্রকাশ্যে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের মিত্র হিসেবে গ্রহণ করে। এমন করার কোন সুযোগ কোন মুসলিমের নেই।
এটুকু কি পরিষ্কার?
আশা করি এটুকু পর্যন্ত কারো দ্বিমত হবার কথা না।
৩.
এতক্ষণ ওপরে যা যা বললাম, তা হল অ্যামেরিকায় LGBT Movement বা সমকামী অধিকার আন্দোলনের সারসংক্ষেপ। ওপরের ইনসেস্ট, পেডোফিলিয়া এবং বিস্টিয়্যালিটির উদাহরণগুলো হয়তো কারো কারো কাছে অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে। কিন্তু এই উদাহরণগুলো বেছে নেয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে। পেডোফিলিয়ার কথাই ধরুন। একটা সময় পর্যন্ত পেডোফাইল অধিকার কর্মীরা সমকামী অধিকার আন্দোলনের অংশ ছিল। NAMBLA (North American Man Boy Love Association) এর ইতিহাস খুজে দেখুন। এবং সমকামীদের মতো তাদের আরগুমেন্টেরও একটা বড় ভিত্তি ছিল অ্যালফ্রেড কিনসির গবেষণা। সম্প্রতি পেডোফাইলদের পক্ষেও (‘Minor Attracted Person) আস্তে আস্তে এমন আন্দোলন আবারো শুরু করার চেষ্টা হচ্ছে। এ ব্যাপারে দেখতে পারেন – ‘আপেক্ষিক নৈতিকতা ও পেডোফিলিয়া’ [1]
একইভাবের পশুকামের উদাহরণ দেয়ারও যৌক্তিক কারণ আছে। কারণটা হল আল্লাহর রাসূল ﷺ, হাদীসে পুরুষে পুরুষে পায়ুকাম আর পশুর সাথে যৌনাচারের কথা একসাথে বলেছেন। রাসূলুল্লাহ বলেছেন – ‘আল্লাহর অভিশাপ ঐ ব্যক্তির ওপর যে কোন জন্তুর সাথে সঙ্গম করে। আল্লাহর অভিশাপ ঐ ব্যক্তির ওপর যে ক্বওমে লূতের অনুরূপ (অর্থাৎ সমকামিতা) করে। [ তরজমা, সূত্র মুসনাদ ইমাম আহমাদ, সহীহুল জামি’ লিল আলবানী]। লক্ষ করুন রাসূলুল্লাহ ﷺ এখানে বলেছেন ঐ ব্যক্তির ওপরে আল্লাহর অভিশাপ। ঐ কাজের ওপর অভিশাপ বলা হয়নি। চিন্তা করুন যারা শুধু এই কাজটা করে তারা অভিশপ্ত। যারা এই কাজটাকে বৈধতা, প্রচার ও আইনী ভিত্তির জন্য কাজ করে, যারা একে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাদের অবস্থান কোথায়?
আর ইনসেস্টের উদাহরণ দেয়ার কারণ হল, যেই লিবারেল যুক্তিগুলো দিয়ে সমকামের পক্ষে অ্যাডভোকেসি করা হয়, তার প্রত্যেকটি ইনসেস্টের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। হার্ম প্রিন্সিপাল অনুযায়ী দুটোই জায়েজ। ফান্ডামেন্টালি, সমকামি অধিকার আন্দোলন , ইনসেস্ট, বিস্টিয়ালিটি কিংবা পেডোফাইল অধিকার আন্দোলনের কোন পার্থক্য নেই।
প্রপাগ্যান্ডা এবং লোডেড টার্মিনোলজির ব্যবহারের কারণে সমকামি অধিকার আন্দোলন নামের এই শয়তানি এজেন্ডার বাস্তবতা বোঝা আমাদের জন্য অনেকটাই কঠিন হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের সামাজিক ও মিডিয়া প্রোগ্রামিং এর কারণে নিজের অজান্তেই আমরা এসব আলোচনায় কিছু ব্যাগেজ নিয়ে আসি। তাই এখানে আমি এমন কিছু উদাহরণ আনলাম, যেগুলোর ব্যাপারে হোপফুলি আমাদের চিন্তাভাবনা এখনো অবশ হয়ে যায়নি।
পাঠক চাইলে ইনসেস্ট, পেডোফিলিয়া কিংবা বিস্টিয়্যালিটির বদলে এখানে যিনার অধিকার, ইচ্ছেমতো গর্ভপাতের অধিকার, গাঁজা খাবার অধিকার, আত্মহত্যার অধিকার (assisted suicide)-কেও উদাহরণ হিসেবে চিন্তা করতে পারেন। এসব ‘অধিকার আন্দোলনে শামিল হওয়া ইজতিহাদি বিষয়, হারাম-হালাল, ইমান-কুফরের বিষয় না রাজনৈতিক বিষয়, নৈতিকভাবে সমর্থন করি না কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করি – এ ধরনের দুর্বল রেটোরিক কেন ডিপলি প্রবলেম্যাটিক তা আশা করি সহজেই বুঝতে পারবেন। সমকামিতা সঙ্ক্রান্ত আলোচনায় আমরা এ সমস্যাগুলো ধরতে পারি না কারণ অবচেতনভাবেই এ ব্যাপারটাকে আমরা ‘মানবিকতার’ সাথে মিলিয়ে চিন্তা করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
৪.
এবার দুজন মানুষের কথা চিন্তা করুন। দুজনই পরিচিত ইসলামী ব্যাক্তিক্ত্ব, শায়খ হিসেবে। প্রথমজন ইনসেস্ট রাইটস অ্যাকটিভিস্টদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। তাদের র্যালিতে যায়। অন্য মুসলিমদের বলে তাদের সাথের ঐক্য করতে। বলে কিছু মুসলিমদের উচিত কিছু ইনসেস্ট রাইটসের পক্ষে অবস্থান নেয়া। সাথে সে এটাও বলে যে ইনসেস্ট আসলে ইসলামে বৈধ না। কিন্তু সমাজে আমরাও মযলুম, অজাচারকামীরাও মযলুম। দুই দলই বিভিন্ন সিস্টেম্যাটিক ডিসক্রিমিনেইশান এবং ঘৃণার স্বীকার। তাই যালিমদের বিরুদ্ধে আমাদের উচিত ঐক্যবদ্ধ হওয়া। ‘তোমার অজাচারকে আমি সমর্থন করি না, কিন্তু তোমার অজাচারের অধিকারের জন্য আমি আন্দোলন করবো’- এই জাতীয় কথাবার্তা।
সে আরও বলে, যেইসব কাফের রাজনীতিবিদ এবং তাগুত ক্ষমতায় গেলে ইনসেস্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের পক্ষে সবচেয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলে, তারা মুসলিমদের অধিকারের ব্যাপারেও লিবারেলিযমের জায়গা থেকে কিছু কথা বলে। তাই আমি সক্রিয়ভাবে এমন রাজনীতিবিদদের সমর্থন করি। আমি তাদের জন্য প্রচারণা চালাবো। অন্য মুসলিমদের তাদের সমর্থন করতে বলবো।
দ্বিতীয় জন। ইনসেস্ট অ্যাক্টিভিস্টদের র্যালিতে যায় না। সে ইনসেস্ট রাইটস আন্দোলনের সাথে যুক্ত না। সেও বলে ইনসেস্ট ইসলামে বৈধ না। এবং একজন মুসলিম হিসেবে আমাকে বলতেই হবে যে ইসলামে এটা অপছন্দীয় একটা কাজ। কিন্তু তারপর সে বলে- তবে ইনসেস্ট রাইটসের পক্ষে কাজ করা যাবে কি না, ইনসেস্ট অ্যাক্টিভিস্টদের সাথে রাজনৈতিক ঐক্য করা যাবে কি না, জোট করা যাবে কি না – সেটা আসলে একটা ইজতিহাদি ব্যাপার। এখানে মতপার্থক্যের সুযোগ আছে। কোন সুনির্দিষ্ট সঠিক উত্তর এখানে নেই। প্রথমজন যা করছে সেটা আমি করবো না। এর কিছু কিছু বিষয়ে আমার দ্বিমতও থাকতে পারে।
তবে সে যা করছে, তা প্রশংসনীয়। এটা তার ইজতিহাদ, এবং মুসলিমদের মধ্যে এমন ব্যক্তি আরো দরকার। এমন ব্যক্তিদের সমালোচনা করা উচিত না। প্রশ্নহীনভাবে বিরোধিতার করাটা আসলে একধরনের কট্টর চিন্তাভাবনা। বাস্তবতাবিচ্ছিন্নতা। আমাদের আরো ম্যাচিউর হতে হবে। কারণ এটা হারাম-হালালের প্রশ্ন না। আকিদা আর ইমান-কুফরের প্রশ্ন না। এটা হল রাজনৈতিক প্রশ্ন। মা আর ছেলে মিলিত হবে, বিয়ে করবে মুসলিম হিসেবে এটা আমি নৈতিকভাবে সমর্থন করি না, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে আমি এর বিরোধী না। [2]
মানুষ প্রথমজনকে গালি দেয়, কারণ সে সরাসরি ইনসেস্ট রাইটসদের কর্মীদের সাথে গিয়ে ঐক্য করার কথা বলে। কিন্তু দ্বিতীয়জনের প্রশংসা করে। মানুষ ভাবে সে ইসলামের ‘ট্র্যাডিশানাল, অর্থোডক্স’[3] অবস্থান তুলে ধরছে। অথচ একটা স্পষ্ট বিষয়কে ‘ইজতিহাদি’ বলে, একটা পরিষ্কার বিষয়কে ঘোলাটে করে দিয়ে সে অ্যাকচুয়ালি প্রথম জনের কাজকে বৈধতা দিচ্ছে। প্রথমজনের কাজের ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে। সে কিন্তু বলছে না প্রথমজন যা করছে তা ভুল। সে প্রথমজনকে সতর্ক করছে না, নাহি আনিল মুনকার করছে না। সে শরীয়াহর জায়গা থেকে প্রথমজনের কাজটাকে হারামও বলছে না। সে বলছে না ইনসেস্ট রাইটস অ্যাক্টিভিস্টদের সাথে ঐক্য করা, এক হয়ে কাজ করার অর্থ আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের সাথে ঐক্য করা। এটা শুধু না হারাম, ক্ষেত্রেবিশেষে এটা কুফরও হতে পারে।
বরং সে বলছে এটা এমন একটা বিষয় যেখানে ইজতিহাদের সুযোগ আছে। এটাকে একগুঁয়ের মতো হারাম বলা যাবে না। কারণ এটা তো ‘হারাম-হালালের বিষয় না, আকিদাহ আর ইমান-কুফরের বিষয় না, রাজনীতির বিষয়’। তাই ভিন্নমতের সুযোগ আছে। মুসলিমরা চাইলে এমন রাজনৈতিক জোটের অংশ হতে পারে যা ইনসেস্ট অধিকার, পশুকাম অধিকার কিংবা পেডোফাইল অধিকারের পক্ষে কাজ করে। এটা শার’ঈ ভাবে বৈধ, কারণ এটা একটা ইজতিহাদি ইস্যু!
প্রথমজনের অবস্থানটা নজর কাড়ে বেশি। বেশিরভাগ সমালোচনা হয় তাকে নিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয়জন যা করে সেটা দীর্ঘমেয়াদে প্রথমজনের চেয়ে ক্ষতিকর। সে একটা আলোচনার কাঠামোকে বদলে দেয়। যেটা নুসুস থেকে স্পষ্ট, ক্লিয়ার কাট হারাম এবং ক্ষেত্রেবিশেষে কুফর এর প্রশ্ন সেটাকে সে ইজতিহাদি বিষয় বানিয়ে দেয়। সে প্রথমজনের কাজের বৈধতা দেয়ার থিওরেটিক্যাল ফ্রেইমওয়ার্ক তৈরি করে। মুসলিমদের সাইযেবল একটা অংশ প্রথমজনের সমালোচনা করে, আর দ্বিতীয়জনের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো গিলে খায়।
৫.
ওপরের উদাহরনের প্রথমজন হল উমার সুলাইমান, এবং দ্বিতীয়জন হল ইয়াসির ক্বাদি। কাল আমার পোস্টের পর অনেকে বিভিন্নভাবে বলেছেন যে উমার সুলাইমান খারাপ, কিন্তু ইয়াসির ক্বাদি ভালো। সে ইসলামের অবস্থান তুলে ধরেছে। সে সমকামি আন্দোলন সমর্থন করে না। ইত্যাদি। ইংরেজিতে একটা এক্সপ্রেশান আছে, গাছের দিকে তাকাতে গিয়ে বন মিস করা (Missing the forest for the the trees.) খুটিনাটির দিকে তাকাতে দিয়ে মূল ছবিটা খেয়াল না করা। আমাদের এই দুই ইসলামী ব্যক্তিত্বের বক্তব্য পর্যালোচনার ক্ষেত্রে ভক্ত-শ্রোতা-দর্শকদের ক্ষেত্রে এ জিনিসটা বেশ নিয়মিত ঘটছে বলে মনে হচ্ছে।
যেহেতু ইয়াসির ক্বাদি সরাসরি আন্দোলনে অংশগ্রহণের কথা বলছে না, সমকামিতাকে হারাম বলছে তাই মানুষ ধরে নেয় সে ইসলামের ‘ট্র্যাডিশানাল’ অবস্থান তুলে ধরছে। বা সে ভুল কিছু করছে না। কিন্তু সে যে আসলে পুরো আলোচনাটাকে সেক্যুলারাইয করছে, ইতিপূর্বে য অচিন্তনীয় ছিল এমন একটা ধারণাকে নরমালাইয করছে, এবং আলোচনাকে একটা নির্দিষ্ট দিকে ঠেলে দিয়ে উমার সুলাইমানের মতো লোকদের জন্য এই অভিশপ্ত সমকামী অ্যাক্টিভিস্টদের সাথে ঐক্য করার দরজা খুলে দিচ্ছে সেই বিগার পিকচারটা অনেকের চোখে ধরা পড়ে না। আমি আসলে আশাও করি না যে ইয়াসির ক্বাদির একজন অ্যাভারেজ ভক্ত, কিংবা নিয়মিত শ্রোতা এ ব্যাপারটা নিজে নিজে ধরতে পারবে। যদি পারতো তাহলে সে ক্বাদির শ্রোতা হতো না। বাট নানদালেস, একটু সময় নিয়ে যদি দূরে সরে এসে ব্যাপারটা শুরু থেকে ধাপে ধাপে চিন্তা করে আসা যায়, তাহলে ইন শা আল্লাহ্ বিষয়টা এখন অনেকে বুঝতে পারবেন। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।
[খ]
নিজেদের ‘মুসলিম থিংক ট্যাংক’ হিসেবে দাবি করা অ্যামেরিকান ইয়াক্বিন ইন্সটিটিউট থেকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় LGBTQ And Islam Revisited শিরোনামের একটি আলোচনা। মূল লেখক, জনাথন ব্রাউন যুক্তি দেখায় – যদিও ইসলামে সমকামিতা হারাম, কিন্তু বর্তমান অ্যামেরিকান বাস্তবতায় অ্যামেরিকার মুসলিমদের উচিৎ LGBTQ অধিকার আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়া। কারন অ্যামেরিকার ভবিষ্যতের ব্যাপারে সমকামি অধিকার আন্দোলন এবং মুসলিমরা একটা কমন ভিশন শেয়ার করে। তাই অ্যামেরিকার মুসলিমদের উচিৎ বিভিন্ন সমকামি অধিকার এর পক্ষে অবস্থান নেয়া ও মেনে নেয়া।
এর আগে এবং পরে, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন উপলক্ষে সমকামি অধিকার আন্দোলনের পক্ষে কথা বলে, এবং তাদের সাথে একান্ত্বতা ঘোষণা করে ইয়াক্বিন ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট, সেলিব্রিটি দা’ই উমার সুলাইমান। বেশ কয়েক বছর ধরে অ্যামেরিকার লিবারেল-বামপন্থীদের সাথে মিলে ‘অ্যাক্টিভিযম’ চালিয়ে যাচ্ছে সুলাইমান। সেই সাথে ইসলামাইয করার চেষ্টা করছে লিবারেল-বাম ঘেষা বিভিন্ন চিন্তাকে। কেইস ইন পয়েন্ট – সমকামি অধিকার সংক্রান্ত এই পুরো বিতর্ক।
লিবারেল-লেফট যেহেতু সমকামি অধিকারের বিরোধিতা এবং ইসলামোফোবিয়াকে একই স্কেলে, একই অবস্থান থেকে দেখে, তাই ব্রাউন এবং সুলাইমানরাও প্রচার করা শুরু করে যে মুসলিমদের নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সমকামি অধিকারের পক্ষে তাদের অবস্থান নিতে হবে। সুলাইমান এমনও বলেছে যে, যেসব অ্যামেরিকান মসজিদে সমকামিদের দু হাত খুলে বুকে টেনে নেয় না তারা যথেষ্ট অ্যামেরিকান হতে পারেনি।
এ আদর্শিক অবস্থানে সুলাইমানে সহযোদ্ধাদের মধ্যে আছে, সমকামি অধিকার কর্মী ও ফেমিনিস্ট লিন্ডা সারসুর, ‘লেসবিয়ানদের বিয়ের ইমামতি করা’ আনি যনেভেল্ডের মতো মহিলা, মুসলিম আমেরিকান ক’কাস এর মতো ডেমোক্রেটিক দলের সাথে যুক্ত স্পষ্ট কুফর ও রিদ্দা প্রচার করা প্রতিষ্ঠান, এবং ইলহান ওমার ও রাশিদা তাইবের মতো রাজনৈতিকরা।
ইয়াক্বিন এবং উমার সুলাইমানের পক্ষ থেকে ইলহান উমারের মতো ডেমোক্রেট রাজনৈতিকদের পক্ষে জোর প্রচারণা চালানো হয়, হচ্ছে। ব্রুনেই এ শরীয়াহ অনুযায়ী সমকামীদের শাস্তির কথা ঘোষনা করে হলে সেটাকে ‘বর্বর’ আখ্যা দেয় এই একই ইলহান উমার। যেসব দেশ সমকামীদের বিরুদ্ধে শরীয়াহ অনুযায়ী (অথবা অন্য কোন কারনে) শাস্তির বিধান গ্রহন করবে তাদের ওপর স্যাংকশান আরোপ করার জন্য কংগ্রেসে প্রস্তাবও আনে বিভিন্ন সমকামি ও ট্র্যান্সজেন্ডার প্যারেড ও অনুষ্ঠানের নিয়মিত ও উৎসাহী অতিথি ইলহান উমার।
ইসলামের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক এ অবস্থান থেকে সরে আসার জন্য বেশ অনেক দিন ধরে জনাথন ব্রাউন, উমার সুলাইমানসহ বিভিন্ন জনকে ব্যক্তিগতভাবে নাসীহাহ করার পর পাবলিকলি বিষয়টি নিয়ে লেখা শুরু করেন একসময় ইয়াক্বিন ইন্সটিটিউটে কাজ করা আরেকজন মুসলিম দা’ঈ, ড্যানিয়েল হাক্বিক্বাতজু। প্রথম প্রথম লেখা চালিয়ে যান কারো নাম উল্লেখ না করে। কোন ফলাফল না আসায় তিনি সরাসরি ব্রাউন, ইয়াক্বীন এবং সুলাইমানের নাম উল্লেখ করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। এ বিষয়ে তাঁর দুটো লেখার লিঙ্ক নিচে দেয়া হল [4][5]
হাক্বিকাতজু-র মূল পয়েন্টগুলো হল –
১) ব্রাউন, উমার এবং ইয়াক্বীন ইন্সটিউটের মতে কোন সমকামি অধিকারগুলোর পক্ষে অ্যামেরিকান মুসলিমদের অবস্থান নেয়া উচিৎ?
২) LGBTQ অধিকার আন্দোলন কতোটা ভয়ঙ্করভাবে পশ্চিমা মুসলিমদের প্রভাবিত করছে সেটা জানার পরও কেন তারা সক্রিয়ভাবে সমকামিতার স্বাভাবিকীকরণের এজেন্ডার অংশ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে?
৩) কেন স্পষ্ট কুফর ও রিদ্দা প্রচার করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সুলাইমান সম্পর্কে বজায় রাখছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের সমর্থন কিংবা প্রশংসা করে বক্তব্য দিচ্ছে?
৪) কেন সমকামিতা সংক্রান্ত পুরো আলোচনাটা তারা এমনভাবে উপস্থাপন করছে যাতে মনে হয় এখানে অপশান হল কেবল দুটো – সমকামি অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয়া অথবা নীরব থেকে কোন পক্ষ না নেয়া। কেন সমকামিতা অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া যাবে না? লিবারেল-লেফটের একটা আদর্শিক অবস্থানকে ইসলামের রঙ দেয়ার চেষ্টা করা কেন?
৫) ইউরোপে অলরেডি কিন্ডারগার্টেনের শিশুদের জন্য LGBTQ শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কিছুদিন আগেই এ নিয়ে আন্দোলন করতে হয়েছে ব্রিটেনের মুসলিমদের অনেককে। অ্যামেরিকাতে ছোট্ট শিশুদের জন্য “ড্র্যাগ কুইন স্টোরি আওয়ার’ চালু করা হয়েছে, যেখানে ছোট্ট শিশুদের বাধ্য করা হচ্ছে ট্র্যান্সজেন্ডারদের সাথে সময় কাটাতে। একজন খ্রিষ্টান দোকানদার, সমকামি পুরুষদের বিয়ের কেক বানাতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, এবং এরকম আরো বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কোন পুরুষ যদি কালকে নিজেকে ‘মহিলা’ দাবি করে তাহলে সে পাবলিক টয়লেটে মহিলাদের অংশে যেতে পারবে, অ্যামেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে আইন করে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সমকামি লবির গত ৩০ বছরের ইতিহাস দেখলে এটা যে কারো কাছে স্পষ্ট হবে যে, এ আগ্রাসন ক্রমান্বয়ে আরো বাড়বে এবং মুসলিমদের ও তাদের শিশুদেরও একসময় এভাবে বাধ্য করা হবে।
এ বিষয়গুলো জানার পরও এই ভয়ঙ্কর এজেন্ডার বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে, ইয়াক্বিন-ব্রাউন-সুলাইমানরা কেন এটা হোয়াইট ওয়াশ করার চেষ্টা করছে?
হাক্বিক্বাতজু-র এ লেখাগুলোর পর ব্যাপক তর্কবিতর্ক শুরু হয়। অ্যামেরিকার সাধারন মুসলিমদের মধ্যে অধিকাংশ তার অবস্থানকে সমর্থন করলেও সেলিব্রিটি ‘স্কলার এবং দা’ই’-দের দিক থেকে শুরু হয় আক্রমন। মূল বিষয়ে আলোচনার বদলে ইয়াক্বিন ইন্সটিউট ও তাদের সাথে যুক্ত লোকেরা হাক্বিক্বাতজুকে ব্যাক্তিগতভাবে আক্রমন করার পথ বেছে নেয়। ‘চাষা’, ‘বিদ্বেষ পোষণ করা সাবেক কর্মচারী’ – সহ বিভিন্ন কিছু তাকে বলা হয়। কেউ কেউ নিয়ে আসে আদাবের কথা। কেন এই ভাবে বলা হল, ঐভাবে বলা হল না?
সুলাইমান নিজে এক প্রবন্ধে হাক্বিক্বাতজু-কে আকারে ইঙ্গিতে খারেজি বলে। অন্যদিকে হাক্বিক্বাতজু-র এবং তার অবস্থান গ্রহন করা অন্যান্যদের ইয়াসির ক্বাদি আখ্যা দেয় ‘নিও-মাদ্বখালি’ (নব্য মাদ্বখালি) বলে। উল্লেখ্য, ব্রাউন এবং ইয়াক্বিনেরও আগে, আল জাযিরার এক অনুষ্ঠানে ক্বাদি বলেছিল, সে রাজনৈতিকভাবে সমকামি ‘বিয়ে’- কে সমর্থন করে নৈতিকভাবে না। [6]
ভয়াবহ বাস্তবতার দিকে তাকিয়ে একজন দা’ঈ যখন স্পষ্ট কিছু ভুলকে চিহ্নিত করলেন, নিজের কথার পক্ষে যথেষ্ট তথ্য-প্রমান ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করলেন, সেলিব্রিটিদের প্রচারিত বিভিন্ন অবস্থানের যৌক্তিক অসামঞ্জস্যতা (logical inconsistency) তুলে ধরলেন এবং অত্যন্ত যৌক্তিক কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করলেন তখন উদারতা, সহনশীলতা ও ক্রিটিকাল থিঙ্কিং এর বুলি জপা সেলিব্রিটিরা চলে গেল খারেজি এবং মাদ্বখালি বলে বিরোধিতা নাকচ করার চেষ্টায়। কন্টেন্টের বদলে স্টাইল এবং ইলমের বদলে সেলিব্রিটিদের কদর করার এ যুগে, অন্ধ সমর্থকরাও ঝাপিয়ে পড়ে ট্যাগবাজিতে। অনুত্তরিত থেকে যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো [7]।
এ পুরো বিষয়টি নিয়ে লম্বা আলোচনা করেছেন ভাই ড্যানিয়েল হাক্বিক্বাতজু। তার আলোচনার ভিডিওটির লিঙ্ক নিচে দিয়ে দিচ্ছি। ভিডিওতে ড্যানিয়েল অত্যন্ত স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তুলে ধরছেন নিজের অবস্থান, কারন ও অভিজ্ঞতার কথা। জবাব দিয়েছেন মূল আলোচনাকে পাশ কাটিয়ে তাঁর দিকে ছুড়ে দেয়া অভিযোগগুলোরও। যারা এই আলোচনায় আগ্রহী তাদের সবাইকে অনুরোধ করবো উনার ভিডিওটি সময় নিয়ে দেখার জন্য। পাশাপাশি অ্যামেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের বর্তমানের সমকামিতা, সমকামি অধিকার এবং ট্র্যান্সজেন্ডার আন্দোলন নিয়ে তার বিভিন্ন আলোচনাও পড়ে দেখতে পারেন আগ্রহী পাঠক।
বেশ অনেকদিন ধরে আমি বলে আসছি, বেশ কিছু পশ্চিমা সেলেব্রিটি ‘আলিম’ ও দা’ই-দের দাওয়াহ-র বড় একটা অংশ ভয়ঙ্কর একটি দিকে মোড় নিচ্ছে। কখনো ক্রিটিকাল থিংকিং, কখনো রিথিংকিং ইসলাম, কখনো রিফর্ম কিংবা কখনো প্র্যাগম্যাটিযমের নামে বিভিন্ন দিক থেকে ক্রমান্বয়ে বিকৃতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে ইসলামকে। কেউ এ ব্যাপারে এই সেলিব্রিটিদের বিরোধিতা করলেই তার কপালে জুটছে, খারেজি, নিও-খারেজি, নিও-মাদ্বখালি কিংবা মূর্খ-চাষা-র ট্যাগ। এটা শুরু হয়েছিল জিহাদ, আল ওয়ালা ওয়াল বারা এবং তাওহিদ আল-হাকিমিয়্যাহর মতো বিষয় নিয়ে। পর্যায়ক্রমে সেটা গেছে, ফেমিনিযম, ‘নারী অধিকার’, ট্র্যাডিশানাল উলামায়ে কেরাম এর মতগুলোকে অপাংক্তেয়-অপ্রাসঙ্গিক সাব্যস্ত করা, গ্বাইবের বিষয়কে অস্বীকার-অপব্যাখ্যা করা, সমকামি বা অ্যালফাবেট অধিকার থেকে শুরু করে অন্যান্য আরো অনেক দিকে। এবং সময়ের সাথে সাথে এটা আরো বাড়বে। কেন্দ্র থেকে বিচ্যুতি শুরুতে যতো ক্ষুদ্রই হোক না কেন, সময়ের সাথে সাথে তা পরিণত হয় শত সহস্র মাইলের দূরত্বে।
আমার সাথে একমত হবার জন্য কাউকে জোর করছি না, তবে কোন সিদ্ধান্তে আসার আগে আহবান করছি বড় বড় নামের মোহে কিংবা ব্যাক্তিগত অনুরাগ-বিরাগের ফাঁদে না পড়ে, একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার জন্য ।
[গ]
অনলাইন তর্কবিতর্কের ধরণ নিয়ে প্রায় দু’ বছর আগে ‘How to Disagree’ নামে পল গ্র্যাহ্যামের জনপ্রিয় একটা লেখার অনুবাদ করেছিলাম। মূল লেখাটা খুবই সুন্দর। তবে লেখাটার একটা দুর্বলতা হল ‘স্ট্র-ম্যান ফ্যালাসি’ নিয়ে আলোচনা না থাকা। অনলাইনে এবং বাস্তব জীবনের তর্কবিতর্কে যেসব আন্ডারহ্যান্ডেড ট্যাকটিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় স্ট্র-ম্যান তার অন্যতম। স্ট্র-ম্যান ফ্যালাসি দুটো ধাপে হয়।
ব্যক্তি ক কোন একটা কথা বললো।
প্রথম ধাপে আপনি ক-এর কথাকে বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করবেন। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়। এটাকে বলা হয় স্ট্র-ম্যান তৈরি করা।
দ্বিতীয় ধাপে, ক-এর মূল বক্তব্যকে বাদ দিয়ে প্রথম ধাপে আপনি নিজে যে স্ট্র-ম্যান তৈরি করে নিয়েছেন, সেটা বিরুদ্ধে যুক্তি দেবেন। এবং শেষমেষ দাবি করবেন ব্যাক্তি ক – এর অবস্থানকে খন্ডন করা হয়েছে।
ইয়াসির ক্বাদি এবং উমার সুলাইমানকে গতকাল আমি যে লেখাটা লিখেছিলাম সেটার “খন্ডন’ হিসেবে একটা লেখা দেখলাম যেটা স্ট্র-ম্যান ফ্যালাসির খুব ভালো একটা উদাহরণ। এখানে স্ট্র-ম্যানটা ঠিক কোথায় হচ্ছে সেটা বোঝার জন্য ভিযুয়াল এইড হিসেবে আমি দুটো ইমেজ যুক্ত করে দিচ্ছি। ছবিগুলো সেলফ এক্সপ্ল্যানেটরি তাও সংক্ষেপে একটু বুঝিয়ে বলছি, কারণ আজকাল মানুষের রিডিং কম্প্রিহেনশানের ওপর ভরসা করা যাচ্ছে না। প্রথম ছবিতে ডান দিকে (আপনার বাম দিকে) যে লেখাটা সেটা হল, আমার লেখার “খন্ডন”-এর একটা অংশ। বাম দিকে (আপনার ডান দিকে) যে অংশটা সেটা হল আমার লেখার একটা অংশ। দ্বিতীয় ছবিটা আমার লেখারই আরেকটি অংশ থেকে নেয়া। দুটো ছবি দিলাম যাতে আমার মূল আরগুমেন্ট এর ব্যাপারে অস্পষ্টতা না থাকে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে মিসরিপ্রেযেন্ট করা না যায়।
এখানে স্ট্র-ম্যানটা কোথায়?
“খন্ডন” হিসেবে যা লেখা হয়েছে সেখানে বলা হচ্ছে আমার লেখার মূল প্রিমিস ও আরগুমেন্ট হল – ইয়াসির ক্বাদি lgbt গ্রুপগুলোর কাছে গিয়ে নাহি আনিল মুনকার না করার কারণে, এবং তাদের সামনে ইসলামের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে না ধরার কারণে দোষী। তাই তাকে পরিত্যাগ করা উচিত।
এটা হল সেই স্ট্র-ম্যান। এর পরের পুরো আলোচনা (কিছু ফ্লাফ ছাড়া) হল এই স্ট্র-ম্যানের খন্ডন। ‘আমর বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকার’ এর ক্ষেত্রে মাসলাহা-মাফসাদার বিবেচনা, ইসতিহসান, পশ্চিমা ভূমির প্রেক্ষাপটা বোঝা না বোঝা ইত্যাদি নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা (এবং সেই স্ট্র-ম্যানের খন্ডনও খুব একটা শক্তিশালী না)। অপ্রাসঙ্গিক কারণ আমার আরগুমেন্ট আদৌ এটা ছিল না যে, ইয়াসির ক্বাদি কেন lgbt গ্রুপদের কাছে গিয়ে ইসলামের অবস্থান পরিষ্কার করছে না। কেন তাদের কাছে গিয়ে ‘মন্দ কাজে বাঁধা দিচ্ছে না’। এবং ইয়াসির ক্বাদিকে পরিত্যাগ করা উচিত কি না, সেটা নিয়েও আমার লেখায় কিছু নেই।
আমার মূল বক্তব্য ছিল- উমার সুলাইমানদের মতো যেসব লোকজন lgbt রাইটস গ্রুপগুলোর সাথে রাজনৈতিক ঐক্য এবং জোটের কথা বলছে, এবং মুসলিমদের কিছু lgbt রাইটস মেনে নেয়া উচিত বলছে, তাদের অবস্থান শরীয়াহর দৃষ্টিতে সুস্পষ্টভাবে ভুল। ইয়াসির ক্বাদি যা করছে তা হল, সে বলছে উমার সুলাইমানরা যা করছে এটা একটা ইজতিহাদি বিষয়। এখানে হারাম-হালাল, আকিদাহ, ইমান-কুফরের কথা আনা যাবে না। এটা রাজনীতির বিষয়। এবং সে বলে, ‘গে ম্যারেজ’-এর মতো আইনকে সে মুসলিম হিসেবে সে নৈতিকভাবে সমর্থন করে না, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সে এর বিরোধী না।
এই কথাগুলো আমি বেশ কয়েকবার ইচ্ছে করে লেখার মধ্যে রিপিট করেছি, যাতে কোন অস্পষ্টতা পাঠকের মনে (তিনি আমার পক্ষে হোন বা বিপক্ষে) না থাকে। আমি এক জায়গায় নাহি আনিল মুনকারের কথা বলেছি, কিন্তু সেটা lgbt রাইটস গ্রুপগুলোর ব্যাপারে না। উমার সুলাইমানদের মতো লোকদের ব্যাপারে। এ অংশটা নিচের ছবিতে আছে। আশা করি এটা বুঝতে কারো অসুবিধা হবে না। আমি বলেছি ইয়াসির ক্বাদি কিন্তু উমার সুলাইমানদের মতো লোকদের মন্দ কাজে বাঁধা দিচ্ছে না, বরং পুরো বিষয়টাকে শরীয়াহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে (“এটা রাজনীতি”), আবার একইসাথে “ইজতিহাদি” বলে, তাদের কাজকর্মগুলোকে লেজিটেমিসি দিচ্ছে। তাই এই দুজনের মধ্যে ইয়াসির ক্বাদি বেশি বিপদজনক কারণ সাধারণ মুসলিমদের বড় একটা অংশ উমার সুলাইমানের অবস্থানকে ভুল মনে করলেও, ক্বাদির অবস্থান ‘ট্র্যাডিশানাল বা অর্থোডক্স’ অবস্থানের প্রতিনিধিত্বকারী মনে করে। একজনের ভুলের ব্যাপারটা মানুষ বুঝতে পারছে, আরেকজনের ভুলটাকে সঠিক মনে করছে। যে “খন্ডন” লেখা হয়েছে সেখানে আমার মূল আরগুমেন্টের কোনটাই অ্যাড্রেসড হয়নি।
আমার বক্তব্যের এধরণের ভুল উপস্থাপনার তিনটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে,
১) “খন্ডনকারী” আমার লেখা ঠিক মতো পড়েনি। স্কিম করে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে কিছু একটা বুঝে নিয়ে সেটা “খন্ডন” করেছে।
২) “খন্ডনকারী” পড়েছে, কিন্তু বোঝেনি। এটা আনলাইকলি। ক্লাস ৫/৭ এর ছাত্রছাত্রীর সমান রিডিং কম্প্রিহেনশন থাকলে লেখাটা পড়ে বোঝার কথা। বিশেষ করে মূল আরগুমেন্টটা যেহেতু একাধিকবার রিপিট করা হয়েছে।
৩) “খন্ডনকারী” পড়েছে, বুঝেছে, কিন্তু ইচ্ছে করে একটা স্ট্র-ম্যান তৈরি করে সেটার বিরুদ্ধে তর্ক করেছে, কারণ সেটা করা সহজ। আপাতত এই সম্ভাবনার ব্যাপারে আমার কোন মন্তব্য নেই।
কারণ যাই হোক, এই ধরনের স্ট্র-ম্যান ফ্যালাসি থেকে আসলে বোঝা যায় যে সো-কল্ড ‘ক্রিটিকাল থিংকাররা’ আসলে কোন পর্যায়ের থিংকিং করেন। পল গ্র্যাহ্যামের আর্টিকেলের কিছু কথা হয়তো আশা করি আগ্রহীদের জন্য উপকারী হবে –
“বিরোধিতা করবেন? করুন। কিন্তু এমনভাবে করুন যাতে আপনার ও এবং আপনার প্রতিপক্ষের সময়টা ফালতু নষ্ট না হয়। দিনশেষে যেন নিছক “ঝগড়ায় জেতা” ছাড়াও অন্য কোন প্রাপ্তি আপনার ঝুলিতে থাকে। সেটা হতে পারে আপনার নিজের মতাদর্শের প্রচার, হতে পারে অন্যের মতাদর্শের সত্যিকারের খন্ডন কিংবা সাধারণ পাঠকের জানাশোনার পরিধি কিছুটা হলেও বাড়ানো।
সত্যিকারভাবে কারো বক্তব্যের জবাব দেয়া এবং সেটাকে ভুল প্রমাণ করার জন্য প্রতিপক্ষের প্রধান দাবিগুলোর কমপক্ষে একটিকে আপনার ভুল প্রমাণ করতে হবে। সেটার খন্ডন করতে হবে যুক্তি, প্রমাণ ও দলীলসহ। এটার বাইরে নানা সাইড ইস্যু নিয়ে আপনি দিস্তার পর দিস্তা লিখতে পারেন, উদ্ধৃতির পর উদ্ধৃতি দিতে পারেন, দিতে পারেন ডজন ডজন প্রমাণ – কিন্তু এতে করে প্রতিপক্ষে মূল অবস্থানকে খন্ড করা হয় না। তাই মতবিরোধ করুন, কিন্তু ভালোভাবে করুন। সুন্দর, অর্থবোধকভাবে করুন।
এ কাজটা কিভাবে সুন্দরভাবে করার জন্য একটা সত্যিকারের ভালো আর্গুমেন্ট আর সস্তা কিন্তু সুলিখিত গলাবাজির মধ্যে পার্থক্য ধরতে শেখা প্রয়োজন। আর এজন্য দরকার মতবিরোধের নানা ধরণ নিয়ে জানা।” [8]
[ঘ]
অ্যামেরিকান মুসলিমদের উপর PEW রিসার্চ সেন্টারের চালানো সাম্প্রতিক এক জরিপের [9] রেসাল্টঃ
১) বর্তমানে অ্যামেরিকান মুসলিমদের ৫২% মনে করে সমকামিতাকে সমাজের মেনে নেওয়া উচিৎ [homosexuality should be accepted by society]।
২) এদের মধ্যে ২৮% মুসলিম নিজেদের “গভীর ভাবে ধার্মিক” [deeply religious] মনে করে।
৩) ২০০৭ এ অ্যামেরিকান মুসলিমদের ২৭% সমকামিতাকে সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতো। অর্থাৎ গত দশ বছরে অ্যামেরিকান মুসলিমদের মধ্যে সমকামিতার ব্যাপারে সমর্থন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুনেরও বেশি।
৪) এই জরিপ অনুযায়ী ইভ্যাঞ্জেলিকাল খ্রিস্টানদের মধ্যে সমকামিতা সমর্থনের হার ৩৪%।
ইবন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন –
অভিশপ্ত ঐ ব্যক্তি যে কোন জন্তুর সাথে সঙ্গম করে। অভিশপ্ত ঐ ব্যক্তি যে ক্বওমে লূতের অনুরূপ (অর্থাৎ সমকামিতা) করে। [মুসনাদ ইমাম আহমাদ, সাহিহ আল-জামঈ’ আল-আলবানী]
ইসলামের দিক থেকে সমকামিতা শুধুই হারাম না, বরং অত্যন্ত গুনাহর মধ্যেও এটি অত্যন্ত গুরুতর একটি গুনাহ। চরম পর্যায়ের সীমালঙ্ঘন, এবং যারা এই কাজে লিপ্ত তারা অভিশপ্ত। সমকামিতা মানুষের ফিতরাহর বিরোধী। অর্থাৎ মানুষ স্বেচ্ছায় জেনেবুঝে সম্পূর্ণভাবে অপ্রাকৃতিক এই বিকৃতিতে লিপ্ত হয়, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মানুষের ফিতরাহর মধ্যে এমন কিছুই দেন নি যার কারনে মানুষ প্রাকৃতিক ভাবে সমকামিতায় আসক্ত হতে পারে। এই ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান স্পষ্ট। আনবায়াসড বিভিন্ন মেডিকাল রিসার্চও এই সত্যকে সমর্থন করে যে, সমকামিতা একটি Learned behavior বা acquired taste (সহজ ভাষায় বিকৃতি, deviance) – জন্মগতভাবে মানুষ সমকামি হয় না।
বিস্তারিত (ক্লিক করুন) – #সত্যকথন_১৩২ #সত্যকথন_১৩৩
এই জরিপ অনুযায়ী অ্যামেরিকান মুসলিমদের ৫২% এর বেশি মনে করছে আল্লাহ যা হারাম করেছেন, যা চরম সীমালঙ্ঘন ও প্রকৃতিবিরুদ্ধ, রাসূলুল্লাহ ﷺ যে অপরাধকে শুধু না বরং অপরাধীকেও অভিশপ্ত বলেছেন – সেই সমকামিতাকে সমাজের মেনে নেওয়া উচিৎ। বেইসিকালি ৫২% অ্যামেরিকান মুসলিম মনে করছে আল্লাহ যা হারাম করেছেন সেটা “সামাজিক ভাবে” হালাল হওয়া উচিৎ। নিঃসন্দেহে এই ধরনের মনোভাব, অবস্থানের সাথে ঈমানের কোন সম্পর্কে নেই। এই অবস্থান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ স্পষ্ট অবস্থানের বিরুদ্ধাচারন।
অ্যামেরিকান মুসলিমদের এধরনের স্পষ্ট ইসলামবিরোধী অবস্থান নেয়ার কারন কী?
বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে বলা যায় এখানে একাধিক ফ্যাক্টরের ভূমিকা আছে। যার মধ্যে অন্যতম হলঃ
১) পশ্চিমা এবং বিশেষভাবে অ্যামেরিকান মুসলিমদের পশ্চিমা লিবারেল সমাজ ও আদর্শের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে (assimilation) নেয়ার ইচ্ছা। বর্তমানে পশ্চিমা সমাজের ওপর থেকে নিচে, ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী যে মনোভাব কাজ করছে সন্দেহাতীত ভাবে তা পশ্চিমা মুসলিমদের এই প্রবণতাকে আরো তীব্রতর করেছে।
২। সমকামিতাসহ বিভিন্ন ধরনের যৌন বিকৃতির পক্ষে ক্রমাগত চালানো মিডিয়ার প্রপাগ্যান্ডা ধীরে ধীরে পশ্চিমের সব মানুষের চিন্তাকেই প্রভাবিত করছে। এবং এব্যাপারে তাদের মনোভাবকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এটা পশ্চিমা মিডিয়ার প্রতি এক্সপোযড কিন্তু পশ্চিমে অবস্থিত না, এমন মুসলিমদের ক্ষেত্রেও হচ্ছে।
৩) সার্বিক ভাবে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা। ইসলাম পালনে অনাগ্রহ। ইসলাম পালনের পরিবর্তে ‘আমি মুসলিম’ এটাকে নিছক একটা লেইবেল বা সামাজিক পরিচয় হিসেবে দেখা।
৪) সমকামিতার ব্যাপারে পশ্চিমা বিভিন্ন জনপ্রিয় স্কলার ও দা’ঈদের অবস্থান। অনেকে এ পয়েন্টের ব্যাপারে আপত্তি তুলতে পারেন। তবে বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। ‘ইমাম’ উমার সুলাইমান এর মতো ‘ফেইথ লিডার’ যখন সমকামিতাদের র্যালি বা প্রতিবাদ সভায় সংহতি প্রকাশের জন্য যান, ডঃ ইয়াসির ক্বাদিরা যখন টিভি ইন্টারভিউতে বলেন, তিনি ‘রাজনৈতিক ভাবে’ সমকামি বিয়ে আইনকে সমর্থন করেন, যখন তিনি এবং তার মতো অন্যান্যরা মুসলিমদের শেখান একজন মুসলিম পুরুষের যেমন কোন আকর্ষনীয় নারী দেখে যিনা করার ইচ্ছে হলে নিজেকে সংবরণ করা উচিৎ, ঠিক একইভাবে কারো মনে সমকামি স্পৃহা জাগলে তার নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা উচিৎ, কারন ইসলাম বিয়ে-বহির্ভূত সব ধরনের যৌনতাকে হারাম করেছে, যখন তারা বলেন সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে ঘৃণা করা উচিৎ কিন্তু আমরা সমকামিদের ব্যাপারে মত দেই না (we don’t judge them) – তখন নিঃসন্দেহে তাদের এধরনের বক্তব্য ও অবস্থান মুসলিমদের মনে এই ধারণা তৈরিতে ভূমিকা রাখে যে সমকামিতা মানুষের ফিতরাতি প্রাকৃতিক (যিনার মতোই) একটি গুনাহ, যাকে সামাজিক বা রাজনৈতিক ভাবে মেনে নেওয়া যায়।
আপাতদৃষ্টিতে অনেক পাঠকের হয়তো একথাগুলো যৌক্তিক ও মনে হতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান একেবারেই বিপরীত, যা মুসনাদ আহমাদের উল্লেখিত হাদিস এবং আরো অসংখ্য নুসুস ও আথার থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়।
অ্যামেরিকানাইযড ইসলাম প্রচারের ফলাফল দীর্ঘ মেয়াদে কী, ধীরে ধীরে অনেক ভালোর সাথে ইনক্রিমেন্টালি মন্দ মেশাতে থাকলে রেসাল্ট কী হয় তা বোঝার জন্য এটা একটা প্রাসঙ্গিক কেইসস্টাডি হতে পারে। আপাতত একটা রেসাল্ট হল এই যে এই ধরনের ইসলাম পালনকারীরা কুফরের ব্যাপারে কাফিরদের চাইতেও (ইভ্যাঞ্জেলিকাল খ্রিষ্টান) অধিক নমনীয়। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা ক্বু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ।
“…যে ধ্বংস হবে সে যেন সত্য সুস্পষ্ট রূপে প্রতিভাত হবার পর ধ্বংস হয়, আর যে জীবিত থাকবে সে যেন সত্য সুস্পষ্ট রূপে প্রতিভাত হবার পর জীবিত থাকে। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।” [আল-আনফাল, ৪২]
অনেকে সরাসরি বা আকারে ইঙ্গিতে বলেছেন আমি ইয়াসির ক্বাদিকে পছন্দ করি না। তাই তার সবকিছু আমার কাছে খারাপ লাগে। আমি না-ইনসাফি করি। আমি স্বীকার করি যে আমি ইয়াসির ক্বাদিকে পছন্দ করি না। আমি মুভ ফাউন্ডেশনে যাওয়া লোকজনকেও পছন্দ করি না। জার্মানি গিয়ে কাফেরদের কাছ থেকে ইন্টারফেইথের সবক নিয়ে আসা সো কল্ড ‘সালাফি’ শায়খদেরও আমি পছন্দ করি না। বাংলাদেশী ওয়ানাবি ইয়াসির ক্বাদি, সিভিই এক্সপার্ট হতে চাওয়া ‘থ্রি-জি’ দা’ঈকেও আমি পছন্দ করি না। এদের সবাইকে অপছন্দ করার কারণ এক। এবং আমি আমার অপছন্দ গোপন করি না। প্রকাশ্যেই বলি। কারণ আমার অপছন্দ কোন ব্যক্তিগত কারণে না।
তবে আমি যখন তাদের ব্যাপারে কথা বলি তখন শুধু অপছন্দের কারণে বলি না। আমার অপছন্দের ব্যাপারটা জানি বলেই আমি এ ব্যাপারে আলাদাভাবে সতর্ক থাকি, যাতে তুচ্ছ কিংবা ঠুনকো কোন বিষয়ে শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা কিংবা সমালোচনার খাতিরে সমালোচনা না হয়। তা না হলে এদের নিয়ে বলার, লেখার অনেক কিছুই ছিল। আমার অপছন্দ এটা প্রমাণ করে না যে আমার কথা আবশ্যিকভাবে ভুল। তাই যারা আমার কথা ভুল মনে করবেন তারা দয়া করে ‘আপনি অপছন্দ করেন তাই আপনার কথা ভুল, অন্যায্য’, এই রেড হেরিং আরগুমেন্টে না গিয়ে দয়া করে বলবেন কেন আমি যা বলেছি তা ভুল। আমার আগের স্ট্যাটাস খুবই সংক্ষিপ্ত ছিল। তাই বিভিন্নভাবে বক্তব্য ব্যাখ্যা করার , বুঝে নেয়ার সুযোগ ছিল। আশা করি এ লেখাটা অনেক কিছু পরিষ্কার করবে। যারা ভিন্নমত পোষণ করে সেই ভিন্নমত পোষণ করার কথা আমাকে জানাতে চান, আমি আশা করবো এই লেখাতে যে পয়েন্টগুলো এসেছে তারা সেগুলো অ্যাড্রেস করে কথা বলবেন।
[1] আপেক্ষিক নৈতিকতা ও পেডোফিলিয়া – https://bit.ly/2xnCdEx
[2] সমকামী বিয়ের ব্যাপারে ইয়াসির ক্বাদির বক্তব্য – https://www.youtube.com/watch?v=kP3uL6NQLRY – ১২.০০-১২.১০
[3] ট্র্যাডিশানাল ইসলাম, অর্থোডক্স ইসলাম – এই ধরনের টার্মগুলো বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন দিক থেকে প্রবলেম্যাটিক। তবু আপাতত সংক্ষিপ্ততার স্বার্থে এগুলো ব্যবহার করা হল।
[4] Imam Omar Suleiman, Which LGBT Rights Do You and Yaqeen Want Muslims to Support? – https://bit.ly/2P7L7gv
[5] Hamza Yusuf vs. Omar Suleiman: The Perils of American Muslim Politics – https://bit.ly/2J0lcmS
[6] https://www.youtube.com/watch?v=kP3uL6NQLRY – ১২.০০-১২.১০
[7] ড্যানিয়েল হাক্বিকাতজু-র বিস্তারিত আলোচনা – https://www.youtube.com/watch?v=d_aSzwXC7pc
[7] এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সামারি, Omar Suleiman, Yaqeen Institute & LGBT Rights – https://www.youtube.com/watch?v=A-HBX78SzLM
[7] সমকামিতা-ট্র্যান্সজেন্ডার আন্দোলন নিয়ে আলোচনা – https://muslimskeptic.com/sexuality-and-lgbt/
[8] ডিস্যাগ্রিমেন্ট হায়ারার্কি : মতবিরোধের নানা ধরণ – https://bit.ly/39FShQt
[9] http://ow.ly/vOgS30ea7Qi
[ক] Original Link [খ] Original Link [গ] Original Link [ঘ] Original Link