মুখে সহিষ্ণুতার কথা বললেও বাংলাদেশের সেক্যুলাররা প্রচণ্ড রকমের অসহিষ্ণু। এমনকি তারা পশ্চিমা সেক্যুলারদের চেয়েও অসহিষ্ণু। মইন আলীকে নিয়ে যে কথা বলার কারণে ব্রিটিশ সেক্যুলাররা তসলিমা নাসরিনের সমালোচনা করছে, একই ধরণের কথা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া মেয়েটিকে নিয়ে গতকাল থেকে অনলাইনে বলা হচ্ছে। কিন্তু বিরোধিতা তো দূরের কথা বাংলাদেশের সবচেয়ে সফট সেক্যুলারাও এই সুযোগে ইসলামবিদ্বেষী রেটোরিকে মেতে উঠেছে। শুধু সেক্যুলাররা না, ‘মডারেট মুসলিম’ নামে সেক্যুলারদের যে অপভ্রংশ আছে, তারাও এ সুযোগে ইনিয়েবিনিয়ে সুর মিলিয়েছে।
এসব কথাবার্তা শুধু তসলিমার মতো বুমার রিজেক্টরা বলছে তা না, তসলিমার সন্তান কিংবা নাতি হবার মতো বয়েসী যারা, সেই মিলেনিয়াল আর জেন-যি-সবার সুর মোটামুটি একই। কলকাতা থেকে আমদানী করা সেক্যুলারিসম, আর নেটফ্লিক্সখোরদের সেক্যুলারিসমের মধ্যে বিশেষ কোন তফাৎ নেই। এক প্রজন্মের পর আরেক প্রজন্ম এসেছে, কিন্তু ঘৃণার চাষাবাদ আর শ্রেষ্ঠত্ববাদী মানসিকতা বদলায়নি।
পশ্চিমারা নিজেরা যে তাদের সহিষ্ণুতার বুলি কনসিস্টেন্টলি মেনে চলে, তা না। তবে বাঙ্গাল সেক্যুলারের পাশে বসালে, ওদেরকে রীতিমতো সভ্য মনে হয়। ওরা অ্যাটলিস্ট নিজেদের ঘৃণাকে আড়াল করতে শিখেছে। সবার সামনে যেমন নাকে আঙ্গুল ঢুকিয়ে খোঁচাতে হয় না, তেমনি ঘৃণাও সরাসরি উগরে দেয়া যায় না-একটু রেখেঢেকে, কিছু ভাবগম্ভীর শব্দের পোশাক পরিয়ে সেটাকে প্রকাশ করতে হয়। এটুকু পশ্চিমারা শিখেছে। বাঙ্গাল সেক্যুলার এখনো শিখে উঠতে পারেনি।
অদ্ভূত এক প্রজাতি এরা। এরা আল্লাহর আদেশ পালন করাকে দাসত্ব বলে। আর দাসত্বকে নাকি ওরা ঘৃণা করে। অথচ ২০০ বছর যে জাত এই অঞ্চলকে শুষে ছিবড়ে বানিয়ে ফেলেছে, আজো প্রবল উৎসাহে চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত তাদের হুবহু অনুকরণের চেষ্টা করে চলে বাঙ্গাল সেক্যুলাররা। তাদের স্বপ্নগুলো আজো ফিরিঙ্গি বাবুর ঠিক করা পথে চলে। আজো তাদের কাছে সফলতার অর্থ-ঐ ফিরিঙ্গি বাবুর দেশে যাওয়া, তার বৈশ্বিক সাম্রাজ্যে কেরানিগিরি করা। মডেল ইউএন করা, ইয়ুথ লিডার হওয়া, নাইট উপাধি পাওয়া।
আহ! কী চমৎকার মুক্তি!
একদম থিংকিং আউটসাইড বক্স, তাই না? খুব র্যাডিকাল? খুব কাউন্টার-কালচার? খুব ভ্যানিলা বিল্পব?.ক্লিন শেইভড চকচকে গাল, প্যান্ট, শার্ট শু, মেয়েদের কোন ধরণের পর্দার নিষেধাজ্ঞা- পোশাকের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারগুলো অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম বানিয়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর অনেক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সামাজিক প্রচলনে।
ক্লিন শেইভ করলে কারো বাঁকা চাহনির স্বীকার হতে হয় না। কিন্তু মুখ ভর্তি দাড়ি থাকলে অনেক ধরণের ভোগান্তি হয়। বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড রাস্তায় পরস্পরের শরীরের ওম ভাগাভাগি করে হাটলে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু একজন মুসলিমাহ যদি জিলবাব এবং নিক্বাব পরে হাটেন তাহলে তাকে সাব-হিউম্যান কিছু একটার মতো ট্রিট করা হয়।
প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বের ডমিন্যান্ট কালচারের অন্ধ অনুকরণ করে চলা, কোন স্বতন্ত্র চিন্তাবিহীন, মানুষগুলো স্বাধীন! আর যে মুসলিম মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, তাঁর আনুগত্য করার জন্য সমাজ, সংস্কৃতি এবং পিয়ার প্রেশারের বিরুদ্ধে গিয়ে, প্রবল স্রোতের মুখে দাঁড়িয়ে, তার ক্যারিয়ার, সোশ্যাল স্ট্যাটাস, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এমনকি নিজের পরিবারের তোয়াক্কা না করে দ্বীনের বিধানকে আকড়ে ধরে, সে পরাধীন?
ওরা মনে করে ওরা স্বাধীন। ওরা নাকি স্বাধীনভাবে এই পোশাক, এই চিন্তা, এই লাইফস্টাইল, এই ওয়ার্ল্ডভিউ বেছে নিয়েছে। আর মুসলিমরা পরাধীন কারণ তারা ‘অন্ধভাবে’ ধর্মের বিধান মেনে চলছে। অথচ বাস্তবতা হল গোলামি দু’জনই করছে। একজন আল্লাহর গোলামি করছে, আরেক জন সাদা মানুষের গোলামি করছে, ডমিন্যান্ট কালচারে গোলামি করছে।
একজন স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে টিকে আছে, আরেকজন অন্ধের মতো স্রোতের সাথে গা ভাসিয়ে চলছে। একজন জানে সে দাস, গোলাম, বান্দা-আর এই জানা তাকে সৃষ্টির দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে। আরেকজন দাস হয়েও মনে করে সে মুক্ত। প্রতিনিয়ত সে প্রথাপ্রচলন, সংস্কৃতি, ক্ষমতা আর নাফসের গোলামি করে যাচ্ছে। .আর তার চেয়ে বড় গোলাম কে আছে, যে গোলামি করেও নিজেকে মুক্ত ভাবে?
এপ্রিল ৭, ২০২১