দুটো প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক।
১) আপনার মোবাইল অথবা ল্যাপটপ/পিসির যেই স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আপনি এই মূহুর্তে এই বাক্যটা পড়ছেন তার আয়তন কত?
২) একটি মানুষের মূল্য কতোটুকু?
এই দুটো প্রশ্নের মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য আছে বলে মনে করেন?
প্রথম প্রশ্নটার একটি সুনির্দিষ্ট উত্তর আছে। নির্দিষ্ট ও সুসংজ্ঞায়িত পদ্ধতি আছে যার মাধ্যমে এই প্রশ্নের উত্তর বের করা সম্ভব। আর কোন উত্তর পাওয়া গেলে সেই উত্তর সঠিক কি না, তা যাচাই করারও সুযোগ আছে।
এই একই কথাগুলো কি দ্বিতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে খাটবে? আপনার মূল্য কতো? একজন কেমিস্ট হয়তো দেখবে আপনার দাতে কয়টা গোল্ড ফিলিং আছে, আর যদি থাকে তবে সম্ভবত সেটাই তার দৃষ্টিতে আপনার শরীরের সবচেয়ে দামি অংশ হবে। একজন সাইকোলজিস্ট হয়তো আপনার আইকিউ মাপার চেষ্টা করবেন। একজন সোশিওলজিস্ট হয়তো আপনার সামাজিক গুরুত্ব মাপার চেষ্টা করবেন। একজন রাজনৈতিক হিসেব অনুযায়ী নির্বাচনের বছর আপনার দাম বাড়বে, বাকি সময়টা শূন্যের কাছাকাছি থাকবে। ঢাকার রাস্তার ভাসমান পতিতারা হয়তো আপনাকে বেশি থেকে বেশি ঘন্টা ধরে রেইট বলতে পারবে।
সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে, নিজ নিজ মাপকাঠি অনুযায়ী, নিজ নিজ মূল্যবোধের আলোকে বিভিন্ন উত্তর দেবে। এর মধ্যে কোন একটি উত্তর সঠিক কি না সেটা যাচাই করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। ইন ফ্যাক্ট, এই প্রশ্নের আদৌ কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর আছে কি না সেটাও আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না।
একজনের মানুষের জীবনের মূল্য কি সবসময় ধ্রুব থাকে? সব মানুষের জীবনের মূল্য কি সমান? একজন ঘুষখোর সরকারী কর্মকর্তা আর একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবনের মূল্য কি সমান? যদি সমান না হয় তাহলে কার জীবনের মূল্য বেশি? কিসের ভিত্তিতে তার নির্ধারন করা হবে?
এই প্রশ্নগুলো আর প্রথম প্রশ্নটি মৌলিকভাবে আলাদা। বিজ্ঞান একটির জবাব দিতে পারে। আরেকটির জবাব বিজ্ঞান দিতে পারে না। এখানে কিন্তু তার অর্থ কি মানবজীবন মূল্যহীন? তার অর্থ কি আপনার অস্তিত্ব মূল্যহীন? তার অর্থ কি এই প্রশ্নগুলো অগুরুত্বপূর্ণ? বিজ্ঞান কোন প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারার অর্থ, ঐ প্রশ্নের উত্তর নেই বা ঐ প্রশ্ন মুল্যহীন? নিঃসন্দেহে যেকোন সুবিবেচন মানুষ স্বীকার করবে এঈ প্রশ্নগুলো এবং এদের উত্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যদিও বিজ্ঞানের পক্ষে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া সম্ভব না। আর যারা নিজেরা বিজ্ঞানী অথবা বিজ্ঞানকে পছন্দ করেন তাদেরও এখানে অখুশি হবার কোন কারন নেই। এঈ প্রশ্নগুলোর উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারে না। কারন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া বিজ্ঞানের কাজ না। দর্শনের কাজ। এই প্রশ্নগুলো মেটাফিযিকাল, দার্শনিক।[1] বিজ্ঞানের একটি সীমাবদ্ধ গন্ডী আছে। বিজ্ঞানের কাজ সেই গন্ডির ভেতরে। বৈজ্ঞানিক গ্রহনযোগ্যতা এই গন্ডির ভেতরের প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু যা কিছু এই গন্ডীর বাইরে সেসবের ব্যাপারে বিজ্ঞানের বক্তব্যকে বৈজ্ঞানিক, প্রমানিত সত্য হিসেবে গ্রহন করার কোন উপায় নেই। যেমন মানবজীবনের দামের ব্যাপারে কেমিস্ট, বায়োলজিস্ট, ফিযিসিস্ট কিংবা ফিজিশিয়ানের বক্তব্যকে যেমন প্রমানিত বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে গ্রহন করা সম্ভব না।
এবার আসুন অন্য কিছু প্রশ্নের দিকে তাকানো যাক।
— কেন কোন কিছু না থাকার বদলে কোন কিছু আছে?
— মানুষের আত্মা কোথা থেকে আসলো?
— বুদ্ধিমত্তা ও সচেতনতা[2] কিভাবে সৃষ্টি হলো?
— মহবিশ্বের শুরু কেন হল?
এই প্রশ্নগুলোর বেশ কিছু উত্তর প্রচলিত আছে। আস্তিক ও নাস্তিকরা নিজ নিজ আদর্শিক থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার চেস্টা করে। নাস্তিক তবে আপনি যে উত্তরই গ্রহন করেন না কেন এর কোনটাকেই বৈজ্ঞানিক ভাবে সঠিক প্রমানিত করা সম্ভব না। আপনি আস্তিক হন কিংবা নাস্তিক। সেটা পাথরের সুপ থেকে সচেতনতা, বুদ্ধিমত্তা আর আত্মা সৃষ্টি হবার কথা বলুন, স্ট্যান্ডার্ড বিগ ব্যাং মডেলের কথা বলুন, কিংবা একজন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার কথা বলুন। কোনটাই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, সংশয়ের উর্ধে থাকা সত্য না।
সুতরাং দিনশেষে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বিজ্ঞানের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব না। আস্তিক ও নাস্তিকরা নিজ নিজ বিশ্বাসের জায়গা থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়। কারো অবস্থানই বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমান্য বা অপ্রমান্য না। তাহলে কেন এই প্রশ্নগুলোর সম্ভাব্য উত্তরের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু উত্তরকে সায়েন্টিফিক বা বৈজ্ঞানিক সত্য বলে ধরে নেওয়া হবে, প্রচার করা হবে – আর বাকিগুলোকে অবৈজ্ঞানিক বলে উডিয়ে দেওয়া হবে? যখন এই প্রশ্নগুলোই বিজ্ঞানের বাইরে এবং বিজ্ঞান এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে অক্ষম? এই প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে আস্তিক ও নাস্তিক দুই দলের অবস্থানই বিশ্বাসের উপর। আস্তিকদের বিশ্বাসের মতো নাস্তিকদের অবিশ্বাসও বিশ্বাসপ্রসূত। কিন্তু নাস্তিকরা তাদের ফেইথ-বেইসড এই উত্তরগুলোকে বিজ্ঞানের পোশাক পড়িয়ে বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে প্রচার করতে চায়। নাস্তিকরা কেন মনে করে তাদের এমন কোন বিশেষ মর্যাদা আছে যে কারনে তারা তাদের বিশ্বাসকে মানুষের সামনে প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে উপস্থাপন করবে, আর তাদের এই বিশ্বাসকে বাকিদের সত্য হিসেবে গ্রহন করতে হবে? আস্তিক ও নাস্তিক উভয়েই যদি বিশ্বাসের জায়গা থেকে এঈ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয় তাহলে কেন নাস্তিকদের বিশ্বাসকে সত্য বলে ধরে নিতে হবে আর আস্তিকদের বিশ্বাসকে মিথ্যা? নাস্তিকরা কেন মনে করে তারা প্রেফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট পাবার যোগ্য?
কেউ কি স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে? কোয়ান্টাম কসমোলজি কি মহাবিশ্বের উদ্ভব ব্যাখ্যা করতে পেরেছে? কেন-ই বা এর উদ্ভব সেই প্রশ্নের জবাব দিতে পেরেছে? মহাবিশ্বের মধ্যে বেশ কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মহাবিশ্ব এমন ভাবে তৈরি (fine tuned) যাতে করে এতে প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব হয় – এর কারন কি কেউ ব্যাখ্যা করতে পেরেছে? ফিযিসিস্ট আর বায়োলজিস্টরা যেকোন কিছু বিশ্বাস করতে রাজি শুধু ধর্ম ছাড়া? র্যাশনালিযম আর বিজ্ঞান কি পেরেছে ভালো-মন্দ, নৈতিক-অনৈতিকের সংজ্ঞা নির্ধারন করতে? রক্তাক্ত গত শতাব্দীতে সেক্যুলারিযমকে ভালোর পক্ষের শক্তি হিসেবে কাজ করেছে? বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানের দর্শনে এমন কিছু কি আছে যা তাদের এই দাবিকে যৌক্তিক প্রমান করতে পারে যে ধর্মীয় বিশ্বাস মাত্রই অযৌক্তিক (irrational)?[3]
যদি আমরা ধরেও নেই যে অধিকাংশ বিজ্ঞানী নাস্তিকদের বিশ্বাসকে সমর্থন করেন সেক্ষেত্রেও প্রশ্ন হল এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের সমর্থন কি আলাদা কোন গুরুত্ব পাবার দাবি রাখে? একজন পদার্থবিদের মানবতাবোধকে কি আমরা একজন রিকশাওয়ালার মানবতা বোধের চাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে বাধ্য? একজন বিজ্ঞানি যে বিষয়ে তার স্পেশালাইযেশান তা নিয়ে যা বলবেন তা আমরা স্পেশালিস্ট অপিনিয়ন হিসেবে গ্রহন করতে পারি, কিন্তু শুধুমাত্র বিজ্ঞানী হবার কারনে সব বিষয়ে কি তাদের বক্তব্যকে প্রাধান্য দেওয়া হবে?[4] যদি বিজ্ঞানী হবার কারনে সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা প্রেফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্ট চায়, যদি তারা চায় “বিজ্ঞানীরা বলেছে” – এটাই সবার জন্য প্রমান হিসেবে যথেষ্ট হয়ে যাক, তাহলে রাজনীতিবিদ, একনায়ক আর কাল্ট লিডারদের দোষ কি? এ কেমন বিজ্ঞানমনস্কতা?
বর্তমান সময়ে নাস্তিকরা যেসব বৈজ্ঞানিক “সত্য” –কে ব্যবহার করে আস্তিকদের সাব-হিউম্যান জাতীয় কিছু একটা প্রমান করতে চায়, সেগুলোর অধিকাংশ অপ্রমাণিত থিওরি ছাড়া আর কিছুই না। এবং বিজ্ঞানীরা যখন এসব থিওরি বা মডেল তৈরি করেন তখন তারা সম্পূর্ণ ভাবে নিরপেক্ষ ও আনবায়াসড ভাবে করেন না। এমনকি গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত ডেইটাকে ব্যাখ্যা করার কাজটাও বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ আনবায়াসড ভাবে করেন না। যদিও অধিকাংশ বিজ্ঞানী এটা স্বীকার করেন না, আর স্বাভাবিক ভাবেই নাস্তিকরা এটা চেপে যায়। হাজার হোক নিজেদের বিশ্বাস আর সে বিশ্বাসের দেবতাদের ব্যাপার। তবুও কালেভদ্রে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ কেউ এবং অতি দুর্লভ ক্ষেত্রে নাস্তিকদের মধ্যে কেউ কেউ এ সত্যটা স্বীকার করেন।
যেমন জর্জ এলিস ও স্টিফেন হকিং – এর The Large Scale Structure of Space-Time, এ সত্যটা স্বীকার করে বলেছেন –
“We [scientists] are not able to make cosmological models without some admixture of ideology.”[5]
আমরা (বিজ্ঞানীরা) যেসব মহাজাগতিক মডেলগুলো তৈরি করি সেগুলো আদর্শের মিশ্রন থেকে মুক্ত না।
নাস্তিক বিজ্ঞানী পপুলেশান জেনেটিক্স এর পুরোধা, এভোলিউশানারি বায়োলজিস্ট রিচার্ড সি লিউইনটন এর স্বীকারোক্তি আরো আন্তরিক। কার্ল স্যাগানের The Demon-Haunted World – এর রিভিউতে তিনি স্বীকার করেছেন –
“বিজ্ঞান ও অতিপ্রাকৃতের মাঝে আসল দ্বন্দ্বকে বোঝার চাবি হল সাধারন বিবেচনাবোধের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মেনে নিতে আমাদের (বিজ্ঞানীদের) স্বদিচ্ছার দিকে তাকানো। জীবন ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নেরব্যাপারে নানা উচ্চাবিলাসী প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যার্থ হবার পরও, বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের মধ্যে (বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যায়) নানা অপ্রমাণিত শিশুতোষ গল্প প্রচলিত থাকা সত্ত্বেও, স্পষ্টতই অসম্ভাব্য কিম্ভূতকিমাকার নানা ব্যাখ্যা আমরা মেনে নেই – কেবলমাত্র বিজ্ঞানের পক্ষ নেয়ার জন্য। কারন আমরা আগে থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বস্তুবাদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ব্যাপারটা এমন না যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বা বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমন কিছু আছে যা আমাদের বস্তুবাদী ব্যাখ্যা মেনে নিতে বাধ্য করে। বরং বস্তুবাদ ও বস্তুবাদী ব্যাখ্যার প্রতি আমাদের আনুগত্যের কারনে আমরা বাধ্য হই অনুসন্ধানের এমন একটি কাঠামো এবং এমন কিছু ধারনাকে তৈরি করতে যা শেষপর্যন্ত একটি বস্তুবাদী ব্যাখ্যা বা ফলাফল দেবে। সেই ব্যাখ্যা যতোই কাউন্টার-ইন্টুয়িটিভ হোক না কেন, অদীক্ষিতের কাছে যটোই দুর্বোধ্য লাগুক না কেন। আর আমাদের এই বস্তুবাদ আমরা পূর্ণ ও শর্তহীন ভাবে ধারন ও প্রয়োগ করি। কারন কোন ঐশ্বরিক ব্যাখ্যাকে অনুমোদন দেওয়া সম্ভব না।”[6]
অর্থাৎ আস্তিকদের মতোই নাস্তিকরা একটি বিশ্বাসের জায়গা থেকে তর্ক করে, যদিও তারা তাদের অবিশ্বাসের বিশ্বাসকে “বিজ্ঞান” হিসেবে প্রমান করতে চায়। এটা সাধারন নাস্তিকদের ক্ষেত্রে সত্য, নাস্তিক বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রেও সত্য। অধিকাংশ নাস্তিকরা হয় এটা বোঝে না বা স্বীকার করার সৎ সাহস রাখে না। তবে নাস্তিকদের মধ্যে যারা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সৎ তারা এই সত্যকে স্বীকার করে। নাস্তিকরা নিজেদের এই অযৌক্তিক বিশ্বাসকে বিজ্ঞানসম্মত প্রমান করার জন্য বিভিন্ন অদ্ভূত ব্যাখ্যার অবতারনা করে, যা বিজ্ঞানসম্মত তো না- ই বরং সাধারন বুদ্ধিবিবেচনার সাথেও সাংঘর্ষিক। লিউইনটনের ভাষায় “just-so-stories”.
তাই আমরা দেখি নাস্তিকদের রূপকথার জগতে সময়কে কাল্পনিক সংখ্যা (যেমন -১ এর স্কয়াররুট) দিয়ে প্রকাশ করা হয়[7], কোন কিছু না (nothing) কোন কিছুতে (something) এ পরিণত হয়[8], পাথরের সূ্যপ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুদ্ধিমত্তা, সচেতনতা (consciousness) আর আত্মার (soul) উদ্ভব হয়[9], যা সংজ্ঞাগতভাবে অপ্রামান্য ও পর্যবেক্ষন করা সম্ভব না সেই মাল্টিভার্সের রূপকথায় বিশ্বাস করা যৌক্তিক এবং বৈজ্ঞানিকও।
আর তাদের কথা অনুযায়ী তাদের এসব হাস্যকর ব্যাখ্যা সার পৃথিবী মেনে নিতে বাধ্য? কিন্তু কেন?
কেন তাদের এই ধর্মবিশ্বাসকে অন্য ১০টা ধর্মের চাইতে অটোম্যাটিকালি বেশি সম্মান করতে আমরা বাধ্য? কেন তারা স্পেশাল?
নাস্তিকরা অতিপ্রাকৃত শক্তি আর সত্ত্বায় বিশ্বাস নিয়ে ঠাট্টা করার চেষ্টা করে, কিন্তু ডার্ক এনার্জি আর ডার্ক ম্যাটার কি? এই অতিপ্রাকৃত, অপ্রমাণিত, কল্পনাপ্রসূত সত্ত্বাগুলোকে ছাড়া তাদের বিশ্বাস কি টেকা সম্ভব?
তারা অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ইত্যাদি নিয়ে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করে, কিন্তু কোপার্নিকান আর কস্মোলজিকাল প্রিসিনিপালের ব্যাপারে কেন তারা চুপ?
এগুলো কি প্রমাণিত সত্য? নাকি অপ্রমাণিত বিশ্বাস? কুসংস্কার? বিপরীত প্রমান পাবার পরও তারা যেগুলোকে অন্ধ বিশ্বাসে আকড়ে আছে?
নাস্তিকরা শত শত, হাজার হাজার গালগল্পে বিশ্বাস করতে পারবে, এগুলো তাদের কাছে যৌক্তিক, বিশ্বাসযোগ্য কিন্তু মহাবিশ্বের একজন অতুলনীয় সৃষ্টিকর্তা আছেন, এই মহাবিশ্বে মানবজাতির অস্তিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন, মানব জীবনের একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে এবং একটি বিচারের দিন আসছে – মানুষের প্রকৃতিগত (ফিতরাহ/Natural Disposition) এই বিশ্বাসগুলো তাদের কাছে যৌক্তিক না। না, এগুলো মানা যাবে না। দেবতারা রাগ করবেন। অবিশ্বাসের বিশ্বাস ভঙ্গ হয়ে যাবে। ধর্মদ্রোহী হয়ে যাবার চ্যান্স আছে।
বস্তুত বিজ্ঞানমনস্কতার পোশাকের আড়ালে নাস্তিকরা একটি আবেগপ্রসূত এবং অপ্রমাণিত বিশ্বাসের উপর গড়ে ওঠা আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি ধারন করে। তারা অন্ধ বিশ্বাসী এবং সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের, সবচেয়ে জঘন্য ধরনের অন্ধ বিশ্বাসী। আর তাদের অবিশ্বাসের বিশ্বাস একটি মিথ্যা, বাতিল ধর্ম ছাড়া আর কিছুই না। এছাড়া আর যা কিছু আছে তা হল উইন্ডো ড্রেসিং, প্রিটেনশান আর বুদ্ধিবৃত্তিক হাতসাফাই।
তারা ধারণা-অনুমান ছাড়া অন্য কিছুরই অনুসরণ করে না, আর তারা শুধু মিথ্যাই বলে। [সূরা ইউনুস, ১০]
[1] এখানে দর্শন ও মেটাফিযিক্স বলতে গ্রীক দর্শন বা এর সাথে সম্পর্কিত ধারনাগুলোকে বোঝানো হচ্ছে না। মানুষের অস্তিত্বের সাথে জোড়িত প্রশ্নগুলোর (Existential Questions) উত্তর খোঁজার জন্য মানবমনের যে সাধারন চিন্তার (দার্শনিক) প্রবনতা সেটাকে বোঝানো হচ্ছে।
[2] বাংলাতে Consciousness এর কোন যুতসই প্রতিশব্দ না থাকায় “সচেতনতা” ব্যবহার করা হল। যদিও Consciousness দিয়ে যা বোঝানো হয় তা সম্পূর্ণভাবে “সচেতনতার” মধ্যে ধরা পড়ে না।
[3] David Berlinski, The Devil’s Delusion: Atheism and Its Scientific Pretensions
[4] argumentum ad verecundiam – Argument from Authority. Logical Fallacy
One of the great commandments of science is, “Mistrust arguments from authority.” … Too many such arguments have proved too painfully wrong. Authorities must prove their contentions like everybody else. [Carl Sagan, The Demon-Haunted World: Science as a Candle in the Dark]
[5] The Large Scale Structure of Space-Time ,(p. 34).
[6] “Our willingness to accept scientific claims that are against common sense is the key to an understanding of the real struggle between science and the supernatural. We take the side of science in spite of patent absurdity of some of its constructs, in spite of its failure to fulfill many of its extravagant promises of health and life, in spite of the tolerance of the scientific community for unsubstantiated just-so-stories, because we have a prior commitment, a commitment to materialism. It is not that the methods and institutions of science somehow compel us to accept any material explanation of the phenomenal world, but, on the contrary, that we are forced by our a priori adherence to material causes to create an apparatus of investigation and a set of concepts that produce material explanations, no matter how counter-intuitive, no matter how mystifying to the uninitiated. Morever, that materialism is absolute, for we cannot allow a Divine Foot in the door.” [Billions and Billions of Demons, New York Review of Books, 1st September 1997]
[7] Hartle–Hawking মডেল
[8] লরেন্স ক্রউস, A universe from Nothing
[9] ডারউইনিযম