Do what you love, Love what you do…
Just do it…
You only live once…
Carpe Deim, Seize the day…
বন্ধু, আড্ডা, গান – হারিয়ে যাও…
খুব জনপ্রিয় কিছু ক্যাচফ্রেইয। জুতা, বাইক, মোবাইল অপারেটরের টিভিসি, হিপহপ, হেভি মেটাল, কান্ট্রি মিউযিক থেকে শুরু করে হলিউড মুভি – পপুলার কালচার মাধ্যমে এই বছরের পর বছর ধরে এই কথাগুলো, আর তাদের পেছনের আদর্শগুলকে আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। একসময় আমরা এই ধারনাগুলোকে নিজের মনে করা শুরু করি। এগুলোর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেই। নিজেদের কাজের জাস্টিফিকেশান তৈরি করি। একসময় নিজের মনে করে এই ধারণাগুলোকে ডিফেন্ড করাও শুরু করি।
এই কথাগুলোকে খুব সহজে বলে ফেলা যায়, আপাতভাবে খুব গভীর অর্থবহ বলে মনে করা যায়, কিন্তু একটু স্থির হয়ে বসে, ধাপে ধাপে চিন্তা করতে গেলে সমস্যা শুরু হয়। ঠিক কিভাবে এধরনের অসংলগ্নতা ব্যাপকভাবে প্রচলিত হতে পারে সেটা চিন্তা করতে গেলে অবাকও হতে হয়।
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংল্যান্ডে একজন ব্যাক্তি জন্ম নেন, যাকে আধুনিক স্যাইটানিসম [শয়তান উপাসনা] – এর পিতা বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে আধুনিক “পপ কালচার” এর উপরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডাবল এজেন্টের ভূমিকা পালন করা এই লোকটির প্রচারিত আদর্শের প্রভাব সবচাইতে বেশী। লোকটির নাম অ্যালিস্টার ক্রাউলী এবং তার প্রচারিত আদর্শের নাম “থেলিমা'[Thelema]। ইন্টারেস্টিং ব্যাপারটা হল, তার মতবাদে শয়তানের উপাসনা করার জন্য আপনার প্রথমে বিশ্বাস করতে হবে যে আপনি নিজে একজন ঈশ্বর। থেলিমার বিশ্বাসে অবাধ ও বিকৃত যৌনাচার, মাদকের ব্যাবহার এবং স্বেচ্ছাচারিতাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এর পেছনের কারণ হল, যেহেতু আপনি নিজে “ঈশ্বর”তাই এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার নিজের প্রবৃত্তিকে আপনার খুশি করতে হবে। এসবের মাধ্যমে নিজের ভেতরের ঈশ্বরের উপাসনা করতে হবে। আর এভাবেই আপনি আপনার নিজের ভেতরের “ঈশ্বর” [নাকি শয়তান?] -কে জাগ্রত করতে পারবেন। প্রকৃতপক্ষে নিজের প্রবৃত্তির দাসত্ব এবং ক্রমাগত বিকৃত জীবনাচারের মাধ্যমে শয়তানের [সেটা ইবলিস থেকে আল কারীন যে কেউ হতে পারে ] সান্নিধ্য পাওয়া ছিল এই ধর্মের মূলমন্ত্র।
ক্রাউলির প্রচারিত এই ধর্মের মূলনীতি হল – “Do as thou wilt, that is the law”। [“Do what thou wilt shall be the whole of the Law. Love is the law, love under will.”]
ক্রাউলি দাবী করতো অ্যান্টি-ক্রাইস্ট অর্থাৎ আল মাসীহ আদ-দাজ্জালের আগমনের আগে পৃথিবীকে প্রস্তত করার জন্য একজন নবী হিসেবে সে প্রেরিত হয়েছে। লেড যেপলিন থেকে শুরু করে আজকের লেডী গাগা, ব্ল্যাক স্যাব্যাথ থেকে শুরু করে বিয়ন্সে, রিয়ান্না কিংবা ড্রেইক পর্যন্ত – পপ কালচার যে মূলমন্ত্র প্রচার করে চলছে সেটা হল, এই ব্যাক্তিকে ঈশ্বরে পরিনত করার ধর্ম। যুক্তিটা ইনজিনিয়াস – যেহেতু আপনি ঈশ্বর [!] তাই আপনার ইচ্ছাই আইন! যা ইচ্ছা করো – কোন সমস্যা নেই। নিজে খুশি থাকলেই হল।
“Do as thou wilt that shalt be the whole of the law”
এবার একটু বর্তমান মিডিয়া এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির কথা চিন্তা করুন।
মুক্তচিন্তা, স্বাধীনতা, মানবতা, শান্তি এসবের আড়ালে আসলে কি প্রচার করা হচ্ছে?
অবাধ ব্যাক্তি স্বাধীনতা। বস্তুবাদ, ভোগবাদ, উপযোগবাদ।
এই স্বাধীনতাকে আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন না। যদিও এটা মানুষকে পশুর চাইতেও নিকৃষ্ট পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে – ভয়ঙ্কর সীমালঙ্ঘনে উৎসাহ যোগাচ্ছে তবুও এর সমালোচনা করা যাবে না। যা নিজের কাছে ঠিক মনে হবে তাই ঠিক, নিজের মন যা বলবে তাই ঠিক। নিজেকে খুশি করা, নিজ শরীরকে আনন্দ দেওয়াটাই জীবনের উদ্দেশ্য। এতো বাধা নিষেধ, নীতি-নৈতিকতা, এতো কিছু চিন্তা করার টাইম নাই। কারন You only live once, so just do it! Do what you want, love what you do. Seize the moment. মৌজ-মাস্তি-হ্যাংআউট-রিলেশান হারিয়ে যাও। নতুন মডেলের গাড়ি, নতুন অ্যাপার্টমেন্ট, ব্র্যান্ডের কাপড়, দামি জুতা, নতুন মডেলের গার্লফ্রেন্ড কিংবা বয়ফ্রেন্ড, লেইটেস্ট গ্যাজেট – হারিয়ে যাও। এটাই আধুনিকতা, এটাই স্বাধীনতা, এটাই, প্রগতি, এটাই মুক্তচিন্তা! আরে এটাই তো বেঁচে থাকা। এটাই তো জীবন।
শয়তানের আনুগত্য করার অর্থ কিন্তু সত্ত্বা হিসেবে শয়তানের ইবাদাত করা না। ইবলিসের আনুগত্যের অর্থ, তার আহবানে সাড়া দেওয়া –
বিচার-ফায়সালা সম্পন্ন হলে শয়ত্বান বলবে, ‘আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ওয়া‘দা করেছিলেন তা ছিল সত্য ওয়া‘দা। আর আমিও তোমাদেরকে ওয়া‘দা দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তার খেলাপ করেছি, তোমাদের উপর আমার কোনই প্রভাব ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহবান জানিয়েছিলাম আর তোমরা আমার আহবানে সাড়া দিয়েছিলে। কাজেই তোমরা আমাকে দোষারোপ করো না, বরং নিজেদেরকেই দোষারোপ কর, এখানে না আমি তোমাদের ফরিয়াদ শুনতে পারি, না তোমরা আমার ফরিয়াদ শুনতে পার। ইতোপূর্বে তোমরা যে আমাকে (আল্লাহর) শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি। যালিমদের জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি।’ [সূরা ইব্রাহিম, ২২]
এটাই আর-রাজীমের প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা, এটাই আর-রাজীমের পদপ্রান্তে উপাসনারত এই সভ্যতার বাস্তবতা। এটাই এই আধুনিক বিশ্বব্যবস্থার বাস্তবতা।
২৫ শে ডিসেম্বর – উইন্টার সলিস্টিসের সময়? ঠিক কার জন্মদিন পালন করা হয়, কার স্মরণে উৎসব করা হয়, কার আদর্শের অনুসরণ করা হয়? সারা বিশ্ব, শুধু পশ্চিমা বিশ্ব না, আমাদের মতো “মধ্যম আয়ের” ফিরিঙ্গিদের জাতে উঠতে ব্যাকুল দেশেও এই দিনে কার ইমেজ, কার প্রতিকৃতি সামনে রেখে আনন্দ, উৎসব, উল্লাস করা হয়?
আসুন নির্মোহ ভাবে ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখা যাক…
https://www.youtube.com/watch?v=BAr-cJ6D0nI