করোনাভাইরাস নিয়ে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি সব অর্থে একটা ন্যাশনাল ক্রাইসিস। এই ক্রাইসিসের সময় বাংলাদেশের সেক্যুলার-প্রগতিশীল গোষ্ঠীর আচরণ কেমন? এদের গত এক মাসের কিছু টকিং পয়েন্ট দেখা যাক –
— করোনাভাইরাস সংক্রমন এড়ানোর জন্য কেন মুসলিমদের মৃতদেহ পুড়িয়ে দিতে হবে তা নিয়ে ৭১ টিভির উপস্থাপক আর আলোচকের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। শ্মশানে লাশ পোড়ানোই যে ‘বৈজ্ঞানিক’ তা প্রমাণের চেষ্টা। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে কেউই এমন কোন কথা বলেনি।
— যদি বেঁচে যাও এবারের মতো, বিজ্ঞান লড়েছিল একা, মসজিদ-মন্দির নয় – জাতীয় শিশুতোষ গল্প নিয়ে কোঅর্ডিনেইটেড ক্যাম্পেইন।
এই মূহুর্তে বিজ্ঞান আমার কী কাজে আসছে? ‘এখনো আবিস্কৃত হয়নি ২ বছর পর হবে’ এমন ভ্যাক্সিন আবিস্কারের জন্য বিজ্ঞানকে কেন ক্রেডিট দিতে হবে? কেন বাসায় বসে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং প্র্যাকটিস করা মানুষকে না? কেন লকডাউন ঘোষণা করা রাজনীতিবিদদের না? কেন সেনাবাহিনী, পুলিশ কিংবা ডাক্তার না? এসব প্রশ্নের উত্তর এদের কাছে পাওয়া যাবে না।
কোন ধর্ম পানিতে পড়লে মানুষকে সাতরাতে না বলে মসজিদে যেতে বলে, সেই উত্তরও এরা দেবে না। এরা জাস্ট সব সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধর্মকে আক্রমন করবে।
— ড. মইন মারা যাবার পর আল্লামা আহমাদ শফীকে আক্রমন। যেন আহমাদ শফীর জন্য যে বেসরকারী (হ্যাঁ, বেসরকারী) এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছিল সেটাই ড. মইনকে আনতে যাচ্ছিলো। মাঝপথে ফিরিয়ে এনে হাটহাজারী পাঠানো হয়েছে। চেতনার দেবীর প্রশাসন ডাক্তারের জন্য পিপিই, চিকিৎসা, কিংবা অ্যাম্বুলেন্স কোনটাই দেবে না – এই বাস্তবতা এরা স্বীকার করতে চায় না। যে দেবীকে পূজা করে তার কাছে উপেক্ষিত হবার পর এসে রাগ ঝাড়ে মুসলিম এবং আলিমদের ওপর।
— ড. মইন একসময় ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত ছিলেন, এ নিয়ে নানান কাসুন্দি। আবারো প্রমাণ, যে এই গোষ্ঠীর নুন্যতম বিবেচনাবোধ, মাত্রাবোধ, সাধারণ মানবিকতা এবং সভ্যতা নেই। এরা সাব-হিউম্যান পশু পর্যায়ের কিছু একটা।
— মসজিদ খোলা রাখা, তাবলীগ জামাআত, বিভিন্ন বক্তার ওয়াজ ইত্যাদি নিয়ে কন্টিনিউয়াস আক্রমণ। মুসলিমদের ক্রমাগত তাচ্ছিল্য করা, আলিমদের নিয়ে অত্যন্ত অশ্লীল কথাবার্তা বলা। অথচ ওয়াজের বক্তব্যের চেয়ে অনেক হাস্যকর কথাবার্তা চেতনার দেবদেবী আর জাতীয় মা-মামাদের কাছ থেকে এসেছে। এখনো আসছে। সেগুলো নিয়ে কোন কথা নেই। মসজিদ এর জমায়েতের চেয়ে অনেক বেশি বড় এবং বিপদজনক গ্যাদারিং হয়েছে এবং হচ্ছে। সেগুলো নিয়ে বলতে গেলে কোন আলোচনাই নেই। কারণ সেই সব আলোচনায় ইসলামকে আন্ডারমাইন করা যায় না। ইস্যুটা করোনা মোকাবেলা না। ইস্যু হল করোনাকে ছুতো বানিয়ে কিভাবে আরো ইসলামবিদ্বেষ তৈরি করা যায়।
এভাবে যখন যে ছুতো পেয়েছে সেটা নিয়ে এই শাহবাগীরা ইসলামকে আক্রমণ করেছে। প্রতি পদে পদে এরা চেষ্টা করেছে ঘৃণার চর্চা এবং প্রচার করতে। এবং এরা এমনই করতে থাকবে। একটা জাতীয় দুর্যোগের সময়ও এদের চিন্তা হল ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানো। এরা ব্রিটিশ আমলের কলকাতার সেই এলিট শ্রেণীর মতো যারা পূর্ববঙ্গের মুসলিমদের সাথে শুধু জমিদার আর প্রজার সম্পর্কই চিন্তা করতে পারে। আজ জমিদারি করতে না পারার তিক্ততা ঝরে ঝরে পড়ে এদের প্রতিটি উচ্চারণ থেকে।
এ বিষয়গুলো বারবার প্রমাণ করে যে এদের সাথে মুসলিমের কোন ধরনের ঐক্য তো দূরের কথা সহাবস্থানও সম্ভব না। যেসব মুসলিম ভাইরা মনে করেন এই শ্রেণীর সাব-হিউম্যান জন্তুগুলোর সাথে কোন ধরণের বোঝাপড়ায় এসে এই ভূখন্ডের কোন ধরনের টেকসই ভবিষ্যতের কাঠামো তৈরি করা সম্ভব, তারা ডিলিউশানে আছেন। কোন শেয়ারড আইডেন্টিন্টি কিংবা ভিশন, কোন ন্যাশনাল কন্ট্র্যাক্ট কিংবা কনসেনসাস এদের সাথে থাকা সম্ভব না।
এই দ্বন্দ্বের শেকড় অনেক প্রাচীন, অনেক গভীর। দিনে দিনে যে দাগগুলো পড়েছে জাতীয়তাবাদের ঘোলা পানি দিয়ে সেগুলো মোছা যাবে না। আরো ঘন কিছু লাগবে।