বিভিন্ন সময়ের মিডিয়া রিপোর্ট এবং অ্যানেকডোটাল এভিডেন্স থেকে যে ছবিটা আমাদের সামনে তৈরি হয় সেটা খুব একটা সুন্দর না। বরং কুৎসিত বলা চলে। টাইগারস, হিরো – ইত্যাদি বলে জাতি যাদের বন্দনা করে তাদের কাছ থেকে আমরা দেখি ব্যাভিচার, অশ্লীলতা, স্বার্থপরতা, সুযোগসন্ধানী আর সার্বিকভাবে অনৈতিক আত্মকেন্দ্রিকতার একটা ছবি। কোন স্পেসিফিক ঘটনা বা অভিযোগের ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক বাদ দিলেও এটুকু নিশ্চিন্তে বলা যায়। এ বৈশিষ্ট্যগুলো কেবল ‘টাইগারস’-দের মধ্যে দেখা যায়, এমন না। জাতিগতভাবে আমাদের বড় একটা অংশের মধ্যে আজ এগুলো ঢুকে গেছে। শুধু দেশে না, সার্বিকভাবে পুরো পৃথিবীতে এধরনের বস্তুবাদী, আত্মকেন্দ্রিক, অপুরটুনিস্টিক প্রবণতা বাড়ছে। এটুকু স্বীকার করতেই হয়।
তবে তফাৎ হল ক্রিকেটার, খেলোয়াড় কিংবা গায়ক-নায়ক টাইপ লোকদের সাধারন মানুষ অনুসরনীয় মনে করে। এরা আধুনিক যুগের আইডল। মানুষের জন্য এরা একেকজন রেফারেন্স পয়েন্ট । পোশাক, হেয়ারস্টাইল থেকে শুরু করে চিন্তাচেতনায়ও অনুকরণের চেষ্টা করে আইডলদের। কিন্তু মিডিয়ার তৈরি মায়াজাল সরিয়ে যদি তাকানো হয় তাহলে স্পষ্ট হয়ে যায়, মোটা দাগে টাকার বিনিময়ে বিনোদন দেয়ার কাজে নিয়োজিত লোক ছাড়া – এই শ্রেনীটাকে আর কিছু বলা যায় না। এরা গ্লোরিফাইড জেস্টার। ভ্রাম্যমান ভাড়, অভিনেতা, গায়ক, শারীরিক কসরতকারী, নর্তক-নর্তকী আর শরীর কিংবা চেহারা পুঁজি করে খেটে খাওয়া মহিমান্বিত মনোরঞ্জনকারীর দল। আমোদপ্রমোদের ফেরিওয়ালা।
এ ধরনের লোকেদের মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ঐতিহাসিকভাবে কম হয়ে থাকে। এদের দায়িত্ব, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত মানুষকে সাময়িক ‘মজা দেয়া’। নৈতিক আচরণ, চারিত্রিক দৃঢ়তা কখনই এদের বৈশিষ্ট্য ছিল না। যদি ‘টাইগারস’-দের নিয়ে এধরনের কথাগুলো মেনে নিতে কারো কষ্ট হয় তাহলে ইউরোপিয়ান ক্লাসিকাল মিউযিকের রথীমহারথীদের দিকে তাকাতে পারেন। বেইতোভেন, মোৎযার্ট, শুমান, ব্রাহমস-সহ অনেক সত্যিকার অর্থে জিনিয়াসের মৃত্যু হয়েছিল সিফিলিসসহ আলোকিত গণিকাগমনের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে। গত কয়েকশ বছরে এ ধারায় তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। আজকের হলিউড, বলিউড, মিউযিক কিংবা স্পোর্টস সুপারস্টারদের ব্যক্তিগত জীবনগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো না, বরং অনেকাংশে আরো খারাপ বলতে হয়। তবে তফাৎ হল চিকিৎসা বিজ্ঞানের এবং লাম্পট্য ও অনৈতিকতার সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার দিক থেকে অনেক অগ্রগতি এখন হয়েছে।
অদ্ভূত ব্যাপার হল, এই আমোদপ্রমোদ ফেরি করা লোকগুলোকে আমরা নিজেদের আইডল-আইকন-রৌলমডেল বানিয়ে নিয়েছি। এদেরকে বানিয়ে নিয়েছি জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আমাদের আবেগ, অনুভূতিতে শক্ত করে গিঁট দিয়ে বেঁধেছি এই মনোরঞ্জনকারীদের জীবনের ক্যারিক্যাচারের সাথে। সব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আর ষড়যন্ত্রতত্ত্বের পর বাস্তবতা হল, এগুলো আমাদের অধঃপতন এবং অবক্ষয়ের চিহ্ন। এমন সব মানুষকে আমরা কোটিকোটি মানুষের সামনে বেদিতে তুলে দিয়েছি যারা সম্ভবত নিজেদের পরিবারের জন্য রৌল মডেল হবারও উপযুক্ত না। আমাদের এ বর্তমান হল অন্ধকে অন্ধের পথ দেখানোর এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। যদিও অন্ধদের চোখে স্বাভাবিকভাবেই তা ধরা পড়ে না।