‘ভালো মুসলিম’


ক্বুরআন অবতীর্ণ হবার সময়ের কথা একটু চিন্তা করে দেখুন। কাফির-মুশরিকদের কাছে “ভালো মুসলিম” কারা ছিল? মুনাফিকদের নেতা আব্দুল্লাহ ইবন উবাই এবং তার সঙ্গীসাথীরা। কাফিররা এদের কদর করত। নিজেদের গোপন মিটিংয়ে ডাকতো, শলা-পরামর্শ করতো। কাফিরদের মতে – এদের বিচক্ষণতা ছিল। এরা সহনীয় এক দর্শন লালন করতো। মুশরিকরা কি কম ছাড় দিয়েছিল? তারা তো সারা বছর এক আল্লাহর ইবাদাহও মেনে নিয়েছিল। শুধু এক দিন চেয়েছিল লাত-মানাত-উযযা আর হুবালদের জন্য। যেকোন পার্থিব বিচারে, অতীত কিংবা বর্তমানের মাপকাঠিতে – এটা কি সেন্সিবল একটা অফার না? এটা কি যথেষ্ট সহনশীলতার পরিচয় না? অথচ কই, মুহাম্মাদ (ﷺ) মানলো কই?

অন্যদিকে আবু বাকর, উমার, খাব্বাব, বিলাল, আম্মার, ইয়াসির, সুমাইয়্যা, মুস’আবরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন ছিলেন কাফির-মুশরিকদের দৃষ্টিতে খারাপ মুসলিম। মৌলবাদী। কোন রকম যুক্তিতর্ক মানতে রাজি না। কোন নেগোসিয়েশানে আগ্রহী না। এতো মারা হল, নির্যাতন করা হল, মেরেও ফেলা হল, অপমান করা হল – এরা ভুল বুঝলো না। ফিরে আসলো না। সবাই মিলেমিশে, বোঝাপড়ার মাধ্যমে সহাবস্থানে এরা আগ্রহী না। এদের এক কথা, আল্লাহ যা বলেছেন তা-ই, রাসূল ﷺ যা বলেছে তাই। এর চেয়ে এক বিন্দুও কমবেশি করা যাবে না। একেবারে চরমপন্থি – ব্রেইনওয়াশড – গন কেইস। সমাজের ভাইরাস।

এমনটাই তো ছিল অবস্থা, তাই না? যারা আল্লাহর কাছে ভালো মুসলিম তারা কাফিরদের কাছে খারাপ। যারা কাফিরদের কাছে ভালো, তারা আল্লাহর কাছে খারাপ। উম্মাহ তো এ ব্যাপারটা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার বোঝে তাই না?

আচ্ছা বলুন তো, এমন কী হল যে আজ এ পুরো ব্যাপারটা উল্টে গেল? এমন কী হল যে কাফিরদের কাছ থেকে “ভালো মুসলিম” হবার সার্টিফিকেট পাওয়া লোকেরা আমাদের কাছেও ভালো হয়ে গেল? জাতিসংঘে ফতোয়া ফেরি করা, অ্যামেরিকার মেরিনদের পছন্দের ফতোয়া দেয়া, বুশ আর ওবামার উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা যুগের হামানরা কীভাবে আমাদের পথপ্রদর্শক, অনুসরণীয় নেতা হয়ে গেল?

অ্যামেরিকা-ইস্রাইলের ক্রুসেইডার-যায়নিস্ট আর হিন্দুত্ববাদীদের গোলামি করা মুসলিম ভূখন্ডগুলোর শাসকদের আনুগত্য কী করে, আল্লাহর আনুগত্যের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? এক ও অদ্বিতীয় বিধানদাতা আল্লাহর পরিবর্তে যারা এদেরকে বিধানদাতা হিসেবে মেনে নিল, আর তাদের হয়ে সাফাই গাইল, সেই শাইখ, আল্লামা, আর আকাবীররা কী করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ﷺ চেয়ে বেশি শ্রদ্ধা ও সম্মানের দাবিদার হয়ে গেল?

ইসলামের বিরুদ্ধে দিনরাত চক্রান্ত করতে থাকা র‍্যান্ডসহ বিভিন্ন পশ্চিমা থিংকট্যাংক আর সংস্থার রিপোর্টে নাম ধরে যাদের প্রশংসা করা হয়, রেকোমেন্ড করা হয় তারা কীভাবে ঐ মানুষগুলোর সমান হয়ে গেল ইসলামবিকৃতির এজেন্ডার বিরোধিতার কারণে যাদের ড্রোন আর হেলফায়ার মিসাইল পাঠিয়ে হত্যা করা হয়? যাদের মাথার ওপর কাফিররা কোটি কোটি টাকার পুরস্কার ধার্য করে? ইসলামের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত অ্যামেরিকা কিংবা ভারতের গর্বিত, অনুগত নাগরিক হবার দাবিদাররা কীভাবে তাঁদের চেয়ে ভালো হয়ে গেল যারা নিজেদের আনুগত্য কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল ﷺ ও মুসলিমদের জন্য নির্ধারিত করেছে? কাফিরদের কাছ থেকে “মধ্যপন্থী” হবার সার্টিফিকেট পাওয়া লোকেরা কীভাবে তাদের চেয়ে ভালো হয়ে গেল যারা রাসূলুল্লাহর ﷺ ঠিক করে দেয়া মধ্যপন্থার অনুসরণ করে?

বলুন তো এমন আগাগোড়া পরিবর্তন কীভাবে হল? ইমান ও কুফরের সম্পর্কের কাঠামো কী বদলে গেছে? তাওহিদ ও শিরকের দ্বন্ধ কী শেষ হয়ে গেছে? সব মিটমাট হয়ে গেছে? দ্বীন কি বদলে গেছে? নতুন করে কী ওয়াহি নাযিল হয়েছে, নাকি ক্বুরআন তামাদি হয়েছে? কিছুই তো হয়নি। শুধু নামগুলো বদলেছে, বদলেছে খুঁটিনাটি – মূল গল্প তো এখনো সেই একই।

তাহলে আপনি আর আমি কেন বদলে গেলাম? বলুন তো?


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *