[১] রাসুলুল্লাহর ﷺ আদর্শ ও উদাহরণ দ্বীন ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তা সংরক্ষিত থাকবে।
আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল বলেন –
“নিশ্চয়ই, যারা আল্লাহ (তার সাথে সাক্ষাতের) ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।” [সূরা আল আহযাব,২১]
ইসলাম একটি সর্বজনীন ধর্ম এবং জীবনব্যবস্থা যাতে দিকনির্দেশনা আছে সকল যুগের সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য। আর যতোদিন পর্যন্ত মানুষের সত্য পথের দিকনির্দেশনার প্রয়োজন হবে, ততোদিন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর ﷺ আদর্শ বিদ্যমান থাকবে। আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল বলেন –
“আমি তোমাকে সমগ্র মানবমন্ডলীর জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” [সূরাহ সাবা, ২৮]
কারন মানুষের মধ্য থেকে একজনকে রাসূল নির্বাচিত করার উদ্দেশ্যই তো ছিল ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগত প্রতিটি মানুষের জন্য এমন একটি আদর্শ, এমন একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত তৈরি করে দেওয়া যা তারা দৈনন্দিন জীবনসহ, জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে অনুসরন ও অনুকরণ করতে পারবে।
আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল বলেন –
“বল, ‘দুনিয়াতে যদি ফেরেশতাগণের বসবাস হত যারা নিশ্চিন্তে নিরাপদে চলাফেরা করত, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের কাছে ফেরেশতা রসূল পাঠাতাম।’” [সূরাহ আল ইসরা, ৯৫]
[২] আল্লাহর রসূল ﷺ কুরআনের পাশাপাশি অন্য ওয়াহী প্রাপ্ত হয়েছেন।
আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল বলেন –
নিশ্চয় আমি যিকর (কুরআন) নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী। [সূরা হিজর, ৯]
যে ব্যক্তিই আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার করে, সে অবশ্যই একথা মেনে নেবে যে, যতোদিন প্রয়োজন থাকবে ততদিন আল্লাহ যা নাযিল করেছেন (অর্থাৎ ইসলাম) তা সংরক্ষিত থাকবে। অর্থাৎ ক্বিয়ামত পর্যন্ত ইসলাম সংরক্ষিত থাকবে। প্রশ্ন হল, আল্লাহ কি ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানব্জাতির জন্য দিকনির্দেশনা কেবলমাত্র ক্বুর’আনকেই নাযিল করেছেন – যেমনটা হাদিস অস্বীকারকারীরা দাবি করে থাকে? নাকি রাসুলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর কাছ থেকে ক্বুর’আন ব্যাতীত অন্য কোন ওয়াহীও প্রাপ্ত হয়েছিলেন?
এক্ষেত্রে ক্বুর’আনই সাক্ষ্য দেয় যে রাসূলুল্লাহ ﷺ ওয়াহীর মাধ্যমে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এমন জ্ঞানলাভ করেছিলেন যা ক্বুর’আনের অংশ না। নিচে এমন কিছু উদাহরণ দেওয়া হল।
১) আল্লাহ ক্বুর’আনে বলেন – “আর তুমি এ যাবৎ যে ক্বিবলার (বাইতুল মুকাদ্দাস) উপর ছিলে, তাকে এ উদ্দেশে ক্বিবলা করেছিলাম, যাতে আমি জানতে পারি কে রসূলের অনুসরণ করে আর কে তার পেছনে ফিরে যায়।” [সূরা বাক্বারা, ১৪৩]
এই আয়াতে দেখা যাচ্ছে, আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য সর্বপ্রথমে বাইতুল মুক্কাদাসকে (জেরুসালেম) ক্বিবলা নির্ধারন করেছিলেন। কিন্তু ক্বুর’আনে এমন কোন আয়াত নেই যেখানে মুসলিমদের বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায় করতে বলা হয়েছে, বা বাইতুল মুকাদ্দাসকে ক্বিবলা বলা হয়েছে। সুতরাং এর অর্থ হল অবশ্যই রাসূলুল্লাহ ﷺ এমন ওয়াহী পেয়েছিলেন যা ক্বুর’আনের অংশ না হলেও তাতে দ্বীনের আবশ্যক বিধানের ব্যাপারে নির্দেশনা ছিল। যেমন এই ক্ষেত্রে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে সালাত আদায়ের হুকুম তিনি এমন ওয়াহীর মাধ্যমে পেয়েছিলেন যা ক্বুর’আনের অংশ না।
২) সূরা তাহরীমে আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল বলেছেন – “স্মরণ কর- যখন নবী তার স্ত্রীদের কোন একজনকে গোপনে একটি কথা বলেছিল। অতঃপর সে স্ত্রী যখন তা (অন্য একজনকে) জানিয়ে দিল, তখন আল্লাহ এ ব্যাপারটি নবীকে জানিয়ে দিলেন। তখন নবী (তার স্ত্রীর কাছে) কিছু কথার উল্লেখ করল আর কিছু কথা ছেড়ে দিল। নবী যখন তা তার স্ত্রীকে জানাল তখন সে বলল, ‘আপনাকে এটা কে জানিয়ে দিল?’ নবী বললেন, ‘মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন।’ [সূরাহ আত-তাহরীম, ৩]
এই আয়াতে বলা হয়েছে, “…তখন আল্লাহ এ ব্যাপারটি নবীকে জানিয়ে দিলেন“। কিন্তু ক্বুর’আনে এমন কোন আয়াত পাওয়া যায় না যার মাধ্যমে আলোচ্য বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ জানানো হয়েছিল। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও আমরা দেখতে পাই ক্বুর’আনই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে রাসূলুল্লাহ ﷺ ক্বুর’আনের পাশাপাশি এমন ওয়াহী প্রাপ্ত হতেন যা ক্বুর’আনের অংশ না।
৩) “এর (ক্বুর’আন) সংরক্ষণ ও পড়ানোর দায়িত্ব আমারই। [সূরাহ আল-ক্বিয়ামাহ, ১৭]
রাসূলুল্লাহর ﷺ নবুওয়্যাতের জীবনে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ক্বুর’আনের বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন আয়াত নাযিল হয়েছে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপট অনুযায়ী যেই ক্রমানুসারে ক্বুর’আনের আয়াত ও সূরাসমুহ নাযিল হয়েছে, সেই ক্রমানুসারে মুসহাফে সূরাগুলকে সাজানো হয় নি। যদিও আল্লাহ রাব্বুল ইযযাহ নিজে সাক্ষ্য দিচ্ছেন এই ক্বুর’আন সংরক্ষনের দায়িত্ব তাঁর কিন্তু ক্বুর’আনেও এমন কোন আয়াত নেই যেখানে আল্লাহ রাব্বুল ইযযাহ সূরা ও আয়াতসমূহের বিন্যাস পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন। বরং এই তথ্য আমরা পাই সুন্নাহ থেকে। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ ওয়াহীর এই বিন্যাসের পদ্ধতিও পেয়েছেন ওয়াহীর মাধ্যমেই।
৪) আল্লাহ রাব্বুল ইযযাহ ক্বুর’আন আযানের কথা উল্লেখ করেছেন।
যেমন ক্বুর’আনে বলা হয়েছে – “তোমরা যখন সলাতের জন্য আহবান জানাও তখন তারা সেটিকে তামাশা ও খেলার বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে। এটা এজন্য যে, তারা হল নির্বোধ সম্প্রদায়।” [সূরাহ আল-মায়িদাহ, ৫৮]
আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল আরো বলেছেন – “হে মু’মিনগণ! জুমু‘আহর দিনে যখন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে শীঘ্র ধাবিত হও, ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে!” [সূরাহ আল-জুমু’আহ, ৯]
এই আয়াতগুলো থেকে প্রমাণিত হয় আযান দ্বীন ইসলামের একটি অংশ। কিন্তু ক্বুর’আনে এমন কোন আয়াত নেই যেখানে মুমিনদের আযান দেওয়ার হুকুম করা হয়েছে, কিংবা আযানের শব্দাবলী নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে। বরং আযানের হুকুম এবং শব্দাবলী দুটোই আমরা পাই সুন্নাহ থেকে। তাহলে কি হাদিস অস্বীকারকারীরা আযানকেও অস্বীকার করবে?
রাসুলুল্লাহ ﷺ যে নিশ্চিতভাবে কুরআন ছাড়াও অন্য ওয়াহী প্রাপ্ত হতেন এগুলো হল তার কিছু প্রমাণ। আর যেহেতু এ ওয়াহীগুলো উপকারী এবং প্রয়োজনীয় অনেক নির্দেশনা বহন করে তাই এগুলোও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সংরক্ষন করবেন। [As-Sunnah Hujjiyyatuhaa wa Makaanatuha fi-l-Islam by Dr. Luqmaan as-Salafi; Introduction to the Sunnah by Dr. Suhaib Hassan]
[৩] সুন্নাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াহী –
আল্লাহ কুরআনে বারবার ‘আল-হিকমাহ‘ নাযিলের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
“…আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমাহ নাযিল করেছেন এবং তুমি যা জানতে না তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং তোমার উপর রয়েছে আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহ।” [সূরাহ আন-নিসা, ১১৩]
তিনি সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আরো বলেন –
“তিনিই উম্মীদের মাঝে পাঠিয়েছেন তাঁর রসূলকে তাদেরই মধ্য হতে, যে তাদের কাছে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে, তাদেরকে পবিত্র করে, আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেয় অথচ ইতোপূর্বে তারা ছিল স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত।”[সূরাহ আল-জুমু’আহ, ২]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা উম্মাহাতুল মু’মিনীনকে সম্বোধন করে বলেছেন –
“আর তোমাদের ঘরে আল্লাহর যে, আয়াতসমূহ ও হিকমাহ পঠিত হয়- তা তোমরা স্মরণ রেখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত।” [সূরাহ আল-আহযাব, ৩৪]
উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে পাওয়া যায়ঃ
ক) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা “আল-হিকমাহ” নাযিল করেছেন।
খ) হিকমাহ শিক্ষা দেবার বিষয়টি রাসুলুল্লাহর ﷺ রিসালাতের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত
গ) এটা এমন কিছু যা রাসুলুল্লাহর ﷺ গৃহে উচ্চারিত ও স্মরণ করা হয়।
মর্যাদা ও অবস্থানের বিবেচনায় মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ ﷺ সুন্নাহ ব্যতীত কুরআনের পাশাপাশি উল্লেখ করার মত এমন আর কোনকিছুই নেই। পূর্বপুরুষ হতে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা অথবা এমনকি পূর্বেকার জাতিগুলোর উপর নাযিলকৃত কিতাবগুলোরও এই পর্যায়ের সম্মান প্রাপ্য না। আর সাহাবীদের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন সময়ে, এবং কল্যাণময় প্রথম তিন প্রজন্মের সময়ে পূর্ব পুরুষদের থেকে প্রাপ্ত প্রজন্মলব্ধ অভিজ্ঞতা, প্রথা, সংস্কার কিংবা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের সূত্রে প্রাপ্ত কোন তথ্যকে আলাদা কোন সম্মান দেয়া হতো না, যা নিচের উদাহরনগুলো থেকে বোঝা যায়ঃ
> ইমরান বিন হুসাইন বলছিলেন যে, “রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, লজ্জার মাঝে কল্যাণ ভিন্ন অন্য কিছু নেই।” তখন বাশির বিন কা’ব বললেন, “জ্ঞানীদের কিতাবে লেখা আছে, লজ্জা গাম্ভীর্য বাড়ায়; লজ্জা অন্তরে প্রশান্তি আনে।”
ইমরান তাকে বললেন, “আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহর ﷺ হাদিস শোনাচ্ছি আর তুমি কিনা তোমার কিতাব নিয়ে পড়ে আছ?” [সহীহ আল-বুখারি (৮/১৩৮)]
> উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহর ﷺ নিকটে পৌছালেন, এবং বললেন, “আমরা ইহুদিদের কাছে কিছু বর্ণনা শুনেছি যেগুলো আমাদের বেশ ভাল মনে হয়েছে, আমরা কি ওগুলো থেকে কিছুটা লিখে রাখবো না?”
সাথে সাথে রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, “ইহুদী আর খ্রিষ্টানরা তো ধ্বংস হয়ে গেছে, তোমরাও কি ওদের ন্যায় ধ্বংস হতে চাইছ? আমি তোমাদের নিকট স্পষ্ট ও সত্য নির্দেশিকা সহ আগমন করেছি, যদি মুসা (আঃ) এখন জীবিত থাকতেন তবে তার জন্যও আমার অনুসরণ ব্যতীত অন্য কোন উপায় থাকতো না।”[আত-তিরমিযী]
অতঃপর ইমাম আশ-শাফি’ঈ (রহিমাহুল্লাহ) হিকমাহর আয়াতগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন –
“কাজেই, আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবের – অর্থাৎ ক্বুর’আনের – উল্লেখ করেছেন, এবং তিনি আল-হিকমাহর কথা উল্লেখ করেছেন। যারা কুরআন বিষয়ে গভির জ্ঞান রাখেন, এবং যাদের ব্যাপারে আমি উত্তম ধারণা পোষণ করি তাদের কাছ থেকে আমি শুনেছি যে, আল-হিকমাহ হল রাসুলুল্লাহর ﷺ সুন্নাহ।
আর তাদের এ বক্তব্য মহান আল্লাহ যা বলেছেন তার অনুরূপ – এবং আল্লাহই সর্বাদিক জ্ঞাত। আল্লাহ প্রথমে কুরআনের উল্লেখ করেছেন, তারপর হিকমাহ; অতঃপর আল্লাহ কুরআন এবং হিকমাহ শিক্ষাদানের মাধ্যমে মানবজাতির প্রতি তার রহমতের উল্লেখ করেছেন। কাজেই এখানে উল্লেখিত আল-হিকমাহকে রাসুলুল্লাহর ﷺ সুন্নাত ব্যাতীত আর কোন কিছুর সাথে সংযুক্ত করা একেবারেই জায়েজ হবে না। কারন আল-হিকমাহ গভীরভাবে আল্লাহর কিতাবের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর আল্লাহ তাঁর রসূলের প্রতি আনুগত্যের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন আর মানুষের জন্য রসূলুল্লাহর ﷺ নির্দেশ পালনকে বাধ্যতামূলক করেছেন।
সুতরাং, ক্বুর’আন এবং সুন্নাহতে বর্ণিত হয়নি এমন কোন কাজকে বাধ্যতামূলক মনে করা জায়েজ না। কারন যেমনটা আমরা ইতিপূর্বে বলেছি, স্বয়ং আল্লাহ নির্ধারন করে দিয়েছেন যে তাঁর প্রতি বিশ্বাস তাঁর রাসূলের ﷺ উপর বিশ্বাসের সাথে সংযুক্ত হবে।” [আর-রিসালাহ]
একইসাথে এটাও পরিষ্কার যে কিতাব এবং হিকমাহ, এ দুটি এক না। কেননা এমন কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না যেখানে হিকমাহ শব্দটি কিতাব অর্থে কিংবা কিতাব শব্দটি হিকমাহ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ এ দুটি শব্দ দ্বারা বোঝানো হচ্ছে দুটি ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র সত্ত্বাকে।
৪) কুর আনকে সেভাবেই বুঝতে হবে যেভাবে বোঝার জন্য তা নাযিল করা হয়েছে –
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
“এর সংরক্ষণ ও পড়ানোর দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি উহা পাঠ করাই তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর। অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই।” [সূরাহ আল ক্বিয়ামাহ, ১৭-১৯]
এই আয়াত নির্দেশ করছে যে, ক্বুর’আন এবং ক্বুর’আনের ব্যাখ্যা দুটিই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
“(অতীতের রসূলদেরকে পাঠিয়েছিলাম) স্পষ্ট প্রমাণাদি আর কিতাব দিয়ে; আর এখন তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আর যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।” [সূরাহ আন-নাহল, ৪৪]
আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল এই আয়াতে বলছেন তিনি মানুষের জন্য যে ক্বুর’আন অবতীর্ণ করেছেন তার ব্যাখ্যার প্রয়োজন, এবং ক্বুর’আনকে ব্যাখ্যার এই দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে রাসূলুল্লাহর ﷺ উপর। এই ব্যাখ্যা যে শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহর ﷺ সময়কার মানুষদের জন্য, তা নয় বরং এটি ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী পরবর্তী সকল প্রজন্মের জন্য প্রযোজ্য। বরং রাসুলুল্লাহর ﷺ সময় হতে যেই প্রজন্ম যতো ক্বুর’আনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও মতবিরোধ রোধের জন্য তাদের জন্য মূলে ফেরত যাওয়া ততো বেশি জরুরি।
উপরন্তু, সঠিকভাবে ক্বুর’আন বুঝতে হলে কোন পদ্ধতির অনুসরণ করতে হবে এই আয়াত আমাদের সেই দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। প্রথমে, রাসূলুল্লাহ ﷺ মানবজাতির নিকট স্পষ্টভাবে আল্লাহর আয়াতের ব্যাখ্যা প্রদান করবেন এবং তারপর, মানুষ এটা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করবে। প্রথমে রাসূলুল্লাহর ﷺ ব্যাখ্যাকে গ্রহন করতে হবে। কাউকে এই সুযোগ দেওয়া হয় নি যে, তারা রাসুলুল্লাহর ﷺ শিক্ষাকে, তাঁর ব্যাখ্যাকে ﷺ উপেক্ষা করে নিজেরা খেয়ালখুশি মতো কুরআনের বাণী নিয়ে জল্পনাকল্পনা করবে আর চিন্তার জগতে হারিয়ে যাবে।
হাদিস অস্বীকারকারীরা দাবি করে, ‘আল্লাহ স্বয়ং ক্বুর’আনে বলেছেন যে, তিনিই কুরআনের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। অর্থাৎ কুরআন নিজেই ব্যাখ্যাস্বরুপ।’ তাই যদি হয়, তবে হাদিস অস্বীকারকারীরা কেন ক্বুর’আনে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট না থেকে কুরআনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণমূলক বিশাল বিশাল বই লিখে থাকে?
কারন হল, কুরআনে এমন আয়াত আছে যেগুলোর ক্ষেত্রে এক আয়াত দ্বারা অপর আয়াতের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে, আবার ক্বুর’আনে এমনও আয়াত আছে যেগুলোর ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য সুন্নাহর প্রয়োজন।
[ইন শা আল্লাহ চলবে]