‘ভারতে গণহত্যার প্রস্তুতি চলছে’
ড. গ্রেগরি স্ট্যানটন, জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা। প্রায় দুই দশক আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে কর্মরত অবস্থায়, গণহত্যার ওপর করা একটি প্রেসেন্টেইশান তাঁকে এনে দেয় বিশ্বজোড়া খ্যাতি। ‘Ten Stages of Genocide’ বা ‘গণহত্যার দশ ধাপ’ নামের এ উপস্থাপনায় স্ট্যান্টন দেখান কিভাবে পর্যায়ক্রমে, একটি জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো হয় গণহত্যা। তিনি দেখান, কিভাবে পাইকারী খুনের আগে ধাপে ধাপে, হিসেবী পদক্ষেপে মঞ্চ প্রস্তুত করা হয় হত্যাযজ্ঞের জন্যে।
ক্যাম্বোডিয়া, রুয়ান্ডা এবং আরাকানের গণহত্যার ওপর ড. স্ট্যান্টনের গবেষণা পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত। কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের হয়েও। আজ থেকে দু’দিন আগে, ডিসেম্বরের ১২ তারিখ, মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ও সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে ড. স্ট্যান্টন বলেছেন,
‘ভারতে নিশ্চিতভাবেই গণহত্যার প্রস্তুতি চলছে। কাশ্মীর ও আসামে এখন যা চলছে তা হল পাইকারী হত্যা ও নির্মূলকরণের আগের পর্ব। আর এই নির্মূলকরণকেই আমরা গণহত্যা বলে থাকি।‘
স্ট্যান্টনের মতে গণহত্যার ১০টি ধাপ নিম্নরূপ –
প্রথম ধাপ – ‘আমরা বনাম ওরা’ বিভাজন তৈরি করা। (হিন্দুস্তানী বনাম মুসলিম অনুপ্রবেশকারী/সন্ত্রাসী)
দ্বিতীয় ধাপ – প্রতীকীকরণ। কোন পরিচয় বা প্রতীকের মাধ্যমে ভিকটিমকে আগ্রাসী শত্রু হিসেবে দেখানো। (মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে উপস্থাপন)
তৃতীয় ধাপ – বৈষম্য। বৈষ্যমের আইনী বৈধতা তৈরি যাতে করে তাদের কোন নাগরিক বা মানবিক অধিকার না থাকে। (নাগরিকত্ব থেকে বাদ দেয়া)
চতুর্থ ধাপ – বিমানবিকীকরণ। ভিকটিমের মানবতা মুছে দেয়া। তাদেরকে মানুষ গণ্য না করে নিকৃষ্ট কোন কিছু হিসেবে উপস্থাপন করা। যেমন ‘সন্ত্রাসী’ বা ‘জন্তু’ বলা। অথবা এমন রোগের সাথে তুলনা করা যার চিকিৎসা করা আবশ্যিক। (অমিত শাহ/আরএসএস ‘অনুপ্রবেশকারী’ মুসলিমদের ডাকছে ‘ঘুণপোকা’ বলে)
পঞ্চম ধাপ – গণহত্যা চালানোর জন্য একটি অগ্রবর্তী সংগঠন তৈরি। (কাশ্মীরে ভারতীয় আর্মি, আসামে এনআরসিওয়ালারা, এবং দু’জায়গাতেই এদের সাথে থাকছে আরএসএস।)
ষষ্ঠ ধাপ – প্রপাগ্যান্ডার মাধ্যমে সমাজের ব্যাপক মেরুকরণ। (ভারতীয় ম্যাস মিডিয়া, আরএসএস আইটি সেল, হাজার হাজার ওয়াটস অ্যাপ গ্রুপ)
সপ্তম ধাপ – প্রস্তুতি।
অষ্টম ধাপ – নির্যাতন, নিপীড়ন। আসাম ও কাশ্মীর বর্তমানে এ ধাপে আছে
নবম ধাপ – নির্মূলকরণ, পাইকারী হত্যা
শেষ ধাপ – অস্বীকার। যেমন রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর কথা অং সান সুচি এখন অস্বীকার করছে।
হিন্দুস্তানের চলমান অবস্থা নিয়ে আমাদের ঠিক কতোটুকু চিন্তিত হওয়া উচিৎ? দীর্ঘদিন ধরে এ প্রশ্নটাকে আমরা গুরুত্ব দেইনি। আমরা উপেক্ষা করেছি, ভুলে থাকতে চেয়েছি। এখন আর উপেক্ষা করার সময়-সুযোগ, কোনটাই নেই। কোন অ্যাপোকেলিপটিক ফ্যান্টাসিস্ট কিংবা ‘ইউটোপিয়ান যম্বি’ না, বরং সাচ্চা সেক্যুলার থেকে পাক্কা কমিউনিস্ট পর্যন্ত এখন চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছে এ প্রশ্ন নিয়ে।
আমরা মুসলিমরা কখন ‘পাছে লোকে কিছু বলে’র হিসেবনিকেশ বাদ দিয়ে চিন্তা করা শুরু করবো?
সূত্র – Preparation for a genocide under way in India: Dr. Gregory Stanton
https://bit.ly/38CrFQ7