নিচের লেখাটা ভারতীয় লেখক সামির খানের এক লেখার* অনুবাদ। পড়ে দেখুন।
ইন্ডিয়াতে আজ যা হচ্ছে তা অবধারিত ছিল। ভারতীয় মুসলিমরা বরাবরই রূপকথার রাজ্যে বসবাস করেছে। একদিকে সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিন্দা করেছে, অন্যদিকে এমন শত্রুর সাথে শোয়ার হবার চেষ্টা করেছে যারা এক মূহুর্তেও জন্য ভারতীয় মুসলিমদের আপন মনে করেনি। আরবে থাকা ভারতীয় মুসলিমরাও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য মুসলিম অভিবাসীদের সাথে মেশার চেষ্টা করেনি। তারা ব্যস্ত থেকেছে জাভেদ আকতার আর সনু নিগামদের নিয়ে।
আজ ভারতীয় মুসলিমদের যখন খাদের কিনারায় ঠেলে দেয়া হয়েছে, তখন কারা তাদের ব্যাথায় ব্যাথিত হচ্ছে? পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মুসলিমরা। অথচ ভারতীয় মুসলিমরা সবসময় এই মুসলিমদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে ঈদে মিলাদুন্নবি, কাওয়ালি আর মুশাইরা উপলক্ষে যাদের দাওয়াত করে আনা হতো, তাদের কেউ ভারতীয় মুসলিমদের পাশে এসে দাড়ায়নি।
ভারতীয় মুসলিমরা কখনো কাশ্মীরি মুসলিমদের হয়ে কথা বলেনি। কাশ্মীরি স্বাধীনতার পক্ষে কিছু না বলার কারণটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু একবারের জন্যও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন আর ধর্ষন নিয়ে কি ভারতীয় মুসলিমরা কথা বলেছে? আর কিছু না হোক, আমরা তো কাশ্মীরে মানবিক সাহায্য পাঠাতে পারতাম। কিন্তু আমরা পাঠাইনি। আমাদের নিরবতা আমাদেরকে এই আগ্রাসনের ভাগীদার করেছে। আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপর্যয় ডেকে এনেছি।
সানিয়া মির্যা শোয়েব মালিককে বিয়ে করলো। একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমকে বিয়ে করেছে। সম্পূর্ণ বৈধ একটা ব্যাপার। কিন্তু পুরো হিন্দুত্ববাদী মিডিয়া তাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে গেল। মাসের পর মাস তাদের বিরুদ্ধে চললো মিডিয়া আগ্রাসন। কিন্তু একজন ভারতীয় মুসলিমও সানিয়া মির্যার পাশে দাড়ালো না। সবাই চুপ করে থাকলো। সময়ের পালাবদলে আজ এমন দিন এসেছে যখন হিন্দুদের বিয়ে করার কারণে মুসলিমদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
ভারতীয় মুসলিমরা বিশেষ করে এলিটরা বরাবরই ভারতের সাম্প্রদায়িকতাকে হালকা করে দেখানোর চেষ্টা করেছে।
‘আরে এসব একসময় কেটে যাবে…অধিকাংশ হিন্দু ভালো। অল্প কিছু লোক উগ্র, এরাই বাকিদের বিপথগামী করছে’…-
এমন নানা অজুহাত ভারতীয় এলিট মুসলিমরা দিয়ে এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হল ভারতে মুসলিমরা সবসময় ‘অপর’ ছিল। ভারতীয়রা মনের আনন্দে মুসলিমদের নাচগান দেখেছে, তাদের খাবার খেয়েছে, কিন্তু কখনোই তাদেরকে আপন মনে করেনি।
ইসমাত চুগতাইয়ের মতো লেখকরা ছিল পাক্কা নাস্তিক। কখনো ইসলাম পালন করেনি। ৪৭-এর আগে এদেরকে মূল মুসলিম সমাজের অংশই মনে করা হতো না। অথচ স্বাধীনতার পর এরাই মুসলিম সমাজের মূলধারার বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠলো। মুসলিম সমাজের নেতৃত্ব এমন ইসলামবিদ্বেষীদের হাতে দেয়া হলে কেমন ফলাফল হবার কথা? আমরা নিজেরাই নিজেদের কবর খুড়েছি। .ভারতীয় মুসলিমরা, বিশেষ করে উত্তর ভারতের মুসলিমরা দেশভাগের পর কখনো স্বতন্ত্র রাজনীতির কথা ভাবেনি। তারা বরাবরই নিজেদের ভোট যাদভ আর হরিজনদের ভাগ করে দিয়েছে। সবসময় অন্যের ক্ষমতায়ন করেছে। কিছু মুসলিম ধনী হয়েছে, কিন্তু মুসলিম সমাজ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে হতে আজ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে।
এই তো কয়েক বছর আগের কথা। দক্ষিণ ভারতে আসাদ ওয়াইসির বিরুদ্ধে সবচেয়ে জঘন্য আক্রমন আসলো লক্ষ্ণৌর বুদ্ধিজীবি হিন্দুদের দিক থেকে। অধিকাংশের নজরে ভালো হবার জন্য এরা মুসলিমদের স্রেফ ছুড়ে ফেলে দিল। এই একই শ্রেনীর লোকেরা তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে মিডিয়া প্রোপাগান্ডায় মদদ দিল। তিন তালাক বিলের বিরুদ্ধে মুসলিম বিরোধিতাকে ছুড়ে ফেললো…আজ আমরা যা দেখছি তা অবধারিত ছি।
নাসিরুদ্দীন শাহের মতো সেলিব্রিটিরা মুসলিমদের দুর্দশা নিয়ে সচেতনতা তৈরির কোন চেষ্টা তো করেইনি, উলটো সারফারোশ আর ওয়েন্সডে-র মতো ইসলামবিদ্বেষী সিনেমাতে অভিনয় করেছে। এসব সিনেমা দেখলে মনে হবে মুসলিমরা শুধু নৃশংস খুনী। ঘৃণা একদিনে তৈরি হয় না। বছরের পর বছর যে বীজ বোনা হয়েছে আজ সেই ফসল কাটার সময় এসেছে।
এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও একই অবস্থা। গরুর গোস্তে নিষেধাজ্ঞ, তাবলীগের বিরুদ্ধে ‘করোনা জি-হা-দের’ অভিযোগ, রাম মন্দির নির্মান – এরকম ইসুগুলোতে ফ্যাশিস্ট সরকারের এজেন্ডার সমর্থন দিয়ে যাওয়া সরকারী মুসলিমদের লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার। এদেরকে আবার মুসলিম বুদ্ধিজীবি আর ইতিহাসবিদও মনে করা হয়! মুসলিমদের হত্যাকারীদের মন জুগিয়ে চলা ছাড়া এরা আর কী করেছে?
ভারতীয় মুসলিমরা যখন সহিংসতা আর নির্যাতনের শিকার হল, ভারতীয় মুসলিম বুদ্ধিজীবি আর সরকারী মুসলিমরা বললো, ‘আরে এটা তো আমাদের আভ্যন্তরীন ব্যাপার’। এরদোগান, মাহাথির মোহাম্মাদ কিংবা কোন প্রতিবেশী ভারতের সমালোচনা করলো, তখন এই সরকারী মুসলিরা তাদের সমালোচনায় ঝাপিয়ে পড়লো, আর ভারতীয় সংখ্যাগুরুকে সমর্থন করলো।
ভারতীয় মুসলিমদের যদি কোন শক্তি থাকে, তাহলে সেই শক্তি হল গ্লোবাল মুসলিম উম্মাহর শক্তি। কিন্তু অভিবাসী ভারতীয় মুসলিমদের অধিকাংশই মুসলিম উম্মাহর কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতে চায়। মুসলিম উম্মাহকে ফেলে ভারতীয় মুসলিমরা দলিতদের সাথে ঐক্য করা চেষ্টা করেছে! অথচ ভারতের বাইরে দলিতদের কোন ক্ষমতা তো দূরে থাক, প্রাসঙ্গিকতাও নেই। একইভাবে শিখদের সাথেও ভারতীয় মুসলিমরা দূরত্ব তৈরি করেছে, অথচ শিখরা মিত্র হিসেবে বিশ্বস্ত। যদি তুমি অন্ধ আর মূর্খ হও তাহলে অন্যকে দোষ দিয়ে কী লাভ?
*মূল লেখার লিঙ্ক – https://buzzchronicles.com/b/india/5829/