কাফির,মুশরিক, ইসলামবিদ্বেষীরা যখনই জান্নাত নিয়ে কথা বলে, দেখবেন অবধারিতভাবে তারা জান্নাতের হুরদের কথা নিয়ে আসবে। কারন জান্নাতের ব্যাপারে আর কিছু না বুঝলে তারা মনে করে এ ব্যাপারটা তারা বোঝে। তাদের লজিক অনুযায়ী যদি নিত্যনতুন রাত কাটানোর সঙ্গী পাওয়া যায়, যা ইচ্ছে, যার সাথে ইচ্ছে করা যায়, যখন তখন করা যায়, যা ইচ্ছে খাওয়া যায়, যখন ইচ্ছে খাওয়া যায় – তাহলে সেটাই সফলতা। যদি দুনিয়াতে এটা করা যায় তাহলে দুনিয়াই জান্নাত। ইসলামকে যেহেতু তারা ব্যাখ্যা করতে পারে না, তাই নিজেদের সীমাবদ্ধ, পার্থিব চিন্তার ছাঁচে ফেলেই ইসলামকে বুঝতে চায় তারা। জান্নাতকে তারা বিচার করতে চায় সস্তা মাংশের সস্তা সুখের মাপকাঠি দিয়ে। তাই যদিও জান্নাতের অনেক নি’আমতের কথা ক্বুরআন ও হাদিসে এসেছে, তবুও এসব কিছু ফেলে পশ্চিমা এবং তাদের আদর্শ ধারণ করা বাদামি চামড়ার পশ্চিমাদের ঝোক থাকে জান্নাতের হুরদের একটা আলোচনা সৃষ্টি করার। মুসলিমরা হুরের লোভে জান্নাতে যেতে যায় – অ্যায সিম্পল অ্যায দ্যাট।
কিন্তু আর-রাহমানকে দেখতে পাবার জন্য জান্নাতে যাবার ইচ্ছেকে তারা বুঝতে পারে না। আর-রাহমান আর-রাহীমের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পরিবার, সমাজ, কিংবা নিজের সন্তুষ্টিকে তুচ্ছ করার অর্থ তারা বোঝে না। তারা ব্যাখ্যা করতে পারে না শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে নেয়ার চেষ্টাকে। নিজের ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা, কামনা, বাসনার উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টা তারা কোন ভাবেই জাস্টিফাই করতে পারে না। বিশ্বজগতের অধিপতি আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পন করাকে আচার-অনুষ্ঠান, রসম-রেওয়াজের বাইরে গিয়ে একটি আদর্শ হিসেবে, দ্বীন হিসেবে, জীবনে চলার পথের কম্পাস হিসেবে তারা মেনে নিতে পারে না। তাদের চিন্তার জগত মদ-মাংশ-মাৎসর্য নিয়ে আচ্ছন্ন, তাই তাদের কাছে জান্নাত হল শুধুই মদ-মাংশ-মাৎসর্যের।
কিন্তু সাহাবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)-দের কাছে জান্নাত কেমন ছিল? আচ্ছা চিন্তা করুন তো, জান্নাতের অধিবাসীরা সেখানে থাকবে অনন্ত সময়ের জন্য। আর জান্নাতের অধিবাসীরা একে অপরের সাথে দেখাও করতে পারবে। চাইলে বছরের পর বছর কথা বলেই কাঁটিয়ে দেওয়া যাবে। একবার ভাবুন তো, কোন মানুষটার সাথে আপনি সবার আগে দেখা করতে চাইবেন?
কোন মানুষটাকে মন ভরে দেখতে চাইবেন? তাঁর কন্ঠ শুনতে চাইবেন? কথা বলার সময় গভীর মনোযোগ দিয়ে তার গলার ওঠানামা লক্ষ্য করবেন, কিভাবে কথার সাথে তার মুখে অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে, তা দেখতে চাইবেন? কোন মানুষটা যার সাথে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করবে, কিন্তু লজ্জার কারনে হয়তো কথাই শুরু করতে পারবেন না? কোন মানুষটা যার কাছ থেকে আপনি ক্বুর’আন শুনতে চাইবেন? কোন মানুষটাকে ভালোবাসার কথা বলতে চাইবেন কিন্তু কোন শব্দ যথেষ্ট মনে হবে না? কোন মানুষটাকে একবার বুকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ পেলে সবচেয়ে শক্ত, সবচেয়ে ধীরস্থির মানুষটাও হাউমাউ করে কাঁদবেন?
রাসূলুল্লাহ – মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ আল আরাবি ﷺ – এই মানুষটার সাথে জান্নাতে থাকার জন্য শত শত পৃথিবী কি উপেক্ষা করা যায় না?
এরকম একটি মূহুর্তের মূল্য, এরকম একটি মুহুর্তের আনন্দ, পরিতৃপ্তি, প্রশান্তিকে কিভাবে, কোন মাপকাঠিতে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব? পুরো দুনিয়া আর যা কিছু এর মাঝে আছে সব কি এমন একটি মুহুর্তের কাছেই তুচ্ছ না?