বাহ্যিকভাবে সুন্নাহ পালনের চেষ্টা করেন এমন অনেকের মধ্যেই মু’আমালাত বা লেনদেনের সময় সুন্নাহ অনুসরণের সদিচ্ছা দেখা যায় না। হয়তো বা মুখে সুন্নাহ পালনের ইচ্ছা কথা বলতে দেখা যায় কিন্তু যখন সুন্নাহ পালন ‘লাভজনক’ হয় না, কিংবা যুগের সাথে মেলে না তখন বিভিন্ন ওজর-অজুহাতের কথা চলে আসে। সুন্নাহর অনুসরণ ততোক্ষণ যতোক্ষন তা কনভিনিয়েন্ট। অদ্ভুত, লজ্জাজনক এক মানহাজ।
সুন্নাহ থেকে ফ্রি-মার্কেটের কিছু কনসেপ্টের সাথে মেলে, এমন কিছু বর্ণনা পাওয়া যায়। তাই এর উপর ভিত্তি করে অনেকেই বলার চেষ্টা করেন ইসলামের সাথে পুজিবাদের বা পশ্চিমা ‘ফ্রি-মার্কেট ইকোনমি’-র মিল আছে। কথাটা ব্রড জেনারেলাইযেইশান, এবং ভুল জেনারেলাইযেইশান। পুঁজিবাদী চিন্তাধারা এবং ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি মৌলিকভাবে আলাদা। কারন পুঁজিবাদ টাইমলাইন হিসেবে শুধুমাত্র দুনিয়াকে গ্রহন করে। তাই অপুরচুনিটি কস্ট থেকে শুধু করে মার্জিনাল কস্ট, প্রফিট, এক্সপ্যানশান – এই সব কিছুকেই পুঁজিবাদ দুনিয়ার দৃষ্টিকোন থেকে দেখে।
সহজ একটা উদাহরন হল পশ্চিমা ব্যাঙ্করাপ্সি আইন কিংবা লিমিটেড কোম্পানির লিমিটেড লায়াবিলিটি। আইডিয়াটা হল – যদি ব্যক্তি বা কোম্পানি নিজেকে ‘দেউলিয়া’ ঘোষণা করে তবে সেটা সম্পূর্ণ ভাবে ঋণমুক্ত হয়ে যাবে। শারীয়াহর সাথে কোন ভাবেই এই সম্পূর্ণ ঋণমুক্তির ধারণা যায় না। শহীদদেরকেও যে একটি বিষয়ে আখিরাতে হিসেবে দিতে হবে তা হল ঋণ। সুতরাং নিছক দেউলিয়া ঘোষণার মাধ্যমে দুনিয়াতে হয়তো ঋনমুক্তি পাওয়া যেতে পারে কিন্তু আখিরাতে না।
শারীয়াহ ঋণকে যতোটা গুরুত্ব দিয়ে দেখে, পুজিবাদে ঋণকে ততোটাই হালকা করে দেখা হয়। এই কারনে বিশাল অংকের টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা এক্সপ্যানশান করা কিংবা ঋণ থাকা অবস্থায় আরো ঋণ করা – এগুলো পুজিবাদে খুব কমন। কারন হল ঋণকে খুব হালকা করে দেখার প্রবণতা।
আপনার ব্যবসার ৫ লাখ টাকা দেনা আছে। আপনি হাতে ৩ লাখ টাকা পেলেন। এই অবস্থায় আপনি কি করবেন?
রমাদ্বানে অনেক বিক্রি হয় তাই ৩ লাখ টাকা নিয়ে আরো প্রোডাক্ট কিনবেন যাতে করে সম্ভাব্য বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা যায়?
নাকি আপনি এই টাকাটা দিয়ে ঋণ পরিশোধের করবেন এবং এক্সিস্টিং প্রোডাক্ট বিক্রি করে বাকি ঋণের টাকা উঠানোর চেষ্টা করবেন?
পুজিবাদি চিন্তাধারা আপনাকে এখানে নানা হাইকোর্ট বোঝাবে। কিন্তু শারীয়াহ আপনাকে মূলনীতিটা দিয়ে দিয়েছে। আপনি ব্যবসাতে প্রফিট করতে না পারলে আখিরাতে ইন শা আল্লাহ আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন না। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আপনার দেনার ব্যাপারে আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন। আর সম্ভাব্য বিক্রি – যা একটি অনিশ্চিত বিষয় তার উপর নির্ভর করে আপনি যা নিশ্চিত সেটাকে উপেক্ষা করতে পারবেন না।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন – নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা ঋণ পরিশোধ উত্তম। [বুখারি ও মুসলিম]
রাসূলুলুল্লাহ ﷺ এমন এক সময়ের কথা বলেছেন যখন রিবার ধূলো থেকে বাঁচা কারো পক্ষে সম্ভব হবে না। ‘আল্লাহু ‘আলাম সেই সময়টা কখন। তবে নিঃসন্দেহে আমরা এমন এক সময়ে আছি যখন মুখে কিংবা রাজনৈতিকভাবে পুজিবাদের সমালোচনা করা মানুষরাও পুজিবাদি মেন্টালিটি থেকে বাঁচতে পারে না। বামপন্থি থেকে শুরু করে ইসলামপন্থি। মুখে যতোই সাম্য কিংবা সুন্নাহর কথা বলা হোক না কেন।