গণতন্ত্রের পাতানো খেলায় বারবার হেরেও গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থিরা গণতন্ত্রের সাফাই গেয়ে যান। নিজেদের উন্মাদনার (আইন্সটাইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী) পক্ষে নানা ব্যাখ্যা দেন। আর একসময় তারাও – খেলার মজাটাই মুখ্য, জেতা না – এর মতো একটা কথা বানিয়ে নেন।
ইসলামপন্থী অনেক দল গণতন্ত্রকে প্রথমে গ্রহণ করে একটি কৌশল হিসেবে। তাদের পথচলা শুরু হয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা, খেলাফত প্রতিষ্ঠার এক পাইপ ড্রিম দিয়ে। কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে তাদের আন্দোলনের ফোকাস চলে যায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার দিকে। টুল বা উপকরণ হিসেবে গণতন্ত্রকে ব্যবহার করার কথা বলে শুরু করলেও এক সময় তারা নিজেরাই স্থুল হাতে ব্যবহৃত-ব্যবহৃত হয়ে বলির পাঁঠা হয়ে যান।
যেমন ইখওয়ানুল মুসলিমীন ও জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংযুক্ত অনেকেই ৭০ ও আশির দশকে – ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র – এই যুক্তি এনেছিল। কিন্তু এখন অনেকের জন্যই এটা হয়ে গেছে – ইসলাম প্রতিষ্ঠার আগে গণতন্ত্র।
মিশরের সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনার পর সবচেয়ে বেশি প্রচার হওয়া কথার মধ্যে একটা হল, ‘মিশরের ইতিহাসের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট…’! খুব গর্বের সাথে বলা হচ্ছে কথাটা। যেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হওয়াটা কোন ক্রেডিটের ব্যাপার, বৈধতার পরিমাপক এবং শার’ঈ উদ্দেশ্য। ছবিতে এখন আর ইসলাম নেই। সে জায়গা দখল করে নিয়েছে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের দাবি। দেখুন যেটা ‘কৌশল’ সেটা এখন উদ্দেশ্য হয়ে গেছে। খেলার মজাটাই মুখ্য, জেতা না!
পাশাপাশি অনেকে সরাসরি কিংবা ঘুরিয়েপ্যাচিয়ে এটাও বলছে, যে বর্তমানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই হল ইসলাম প্রতিষ্ঠা। এটাই সঠিক পদ্ধতি, আর যে এ পদ্ধতির বিরোধিতা করে সে হয় যায়নিস্টদের এজেন্ট, কিংবা আলে-সাউদের দালাল, অথবা রাজতন্ত্রের পক্ষে প্রচারণাকারী।
যে ঘটনা গণতান্ত্রিক কুফরি পদ্ধতির রূঢ় বাস্তবতা এবং এর হুমকির প্রতি সচেতন হবার একটা ওয়েইক-আপ কল হবার কথা ছিল, সেটা হয়ে গেছে নিজেদের ভ্রান্তি আকড়ে থাকার অজুহাত। আবেগের উদার স্রোতে মহিমান্বিত করা হচ্ছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের ভুলকে।
পাড় জুয়াড়ির মতোই ইসলামী গণতান্ত্রিকরা প্রতি পরাজয়ের সাথে আরো বেশি টাকার বাজি ধরে, নামে আরো হাই স্টেইক্সের খেলায়। আর নিজেকে প্রবোধ দেয় – আর একবার মাত্র। এক দানে জিতলেই তুলে নেয়া যাবে লাভে-আসলে সব টাকা।
কৌশল পরিণত হয়েছে উদ্দেশ্যে। জাদু ফিরে গেছে জাদুকরের দিকে। একটা ম্যাকাভিলিয়ান লেভেলে পশ্চিমাদের এই মুন্সীয়ানার প্রশংসা না করার কোন উপায় নেই।