উম্মাহর মহীরুহ, পর্ব-৭


ইমাম মুহাম্মাদের মৃত্যুর পরও এ বরকতময় দাওয়াহর ধারা চলমান থাকে। বাড়তে থাকে তাঁর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রনে থাকা ভূমির আয়তন। একসময় মক্কা মদীনা পরিণত হয় এ দাওয়াহর দুর্গে। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাবের ব্যাপারে একটি অভিযোগ প্রায়ই তোলা হয়। বিশেষ করে ঐ দলের লোকেরা যারা খিলাফাহর প্রতি আহবানের দাবি করে, কিন্তু বাস্তবে তাদের সাথে খিলাফাহর দাওয়াহর ব্যবধান আকাশ আর পাতালের মতো। যা হোক, এ ধরণের লোকেরা বলে, মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাব উসমানী খিলাফাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন।

এটা একটা মিথ্যা কথা।

প্রথমত: এ ধরণের লোকেদের আপনি তাদের নিজেদের বই দিয়েই জবাব দিতে পারবেন। তাদের বইয়ে তারা সালাহ আদ-দ্বীন আল-আইয়ুবীর প্রশংসা করে। আব্বাসী খিলাফাহর সময়কালে সালাহ আদ-দ্বীন কী করেছিলেন?

তিনি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন?

না তিনি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি। কিন্তু তিনি বিভিন্ন ভূমি নিজের নিয়ন্ত্রনে এনেছিলেন। সালাহ আদ-দ্বীন আব্বাসী খলিফাহর কাছে গিয়ে পরামর্শও চেয়েছিলেন। তিনি আব্বাসী খিলাফাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি, আবার আব্বাসীরা তাঁর কাছ থেকে যা চেয়েছিল, সেটাও তিনি করেননি। নুরউদ্দীন এবং সালাহ আদ-দ্বীন অনেক ভূমি নিজের নিয়ন্ত্রনে এনেছিলেন, একতাবদ্ধ করেছিলেন উম্মাহকে। কারণ সে সময় খিলাফাহ অত্যন্ত দুর্বল, মূমুর্ষু অবস্থায় ছিল।

তো যারা মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাব এর সমালোচনা করে, তারাই আবার সালাহ আদ-দ্বীনের এই কাজগুলোর প্রশংসা করে। তারা বলে মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাব উসমানী বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল!

অথচ পরিস্থিতি দুটো একই রকম। সালাহ আদ-দ্বীনের সময় যা ঘটেছিল একইরকম ঘটনা ঘটছিল মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাব এর সময়েও। উসমানী খিলাফাহ ছিল পতনের দ্বারপ্রান্তে, এবং তাদের মধ্যে প্রবেশ করেছিল অনেক শিরক। এছাড়া মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাব যেখানে ছিলেন, সেই অঞ্চল উসমানী খিলাফতের নিয়ন্ত্রনে ছিল না। ওই অঞ্চলে কোন নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ছিল না। প্রত্যেক গোত্রের নিজস্ব নিয়ন্ত্রনাধীন অঞ্চল ছিল এবং গোত্রীয় শাসন ছিল। মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাব উসমানী খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেননি, বরং তিনি তাই করেছেন যা সালাহ আদ-দ্বীন আল-আইয়ুবি রাহমাতুল্লাহে আলাইহি তাঁর সময়ে করেছিলেন।

তাঁর বিরুদ্ধে প্রচলিত আরেকটি অপবাদ হল, তিনি চার ইমামকে (চার মাযহাবের ইমাম) ঘৃণা করেন। এটা আরেকটা অজ্ঞতাপ্রসূত ভুল কথা। আপনি এসব অভিযোগ শোনার পর মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাবের ছাত্রদের কিছু বক্তব্য পড়লে অবাক হয়ে যাবেন। তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহকে একবার হজ্জ সংক্রান্ত একটি মাসআলার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হল। যে মাসআলার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সেটার প্রসঙ্গে সহিহ হাদিস আছে। কিন্তু চার মাযহাবের ইমাম এ মাসআলায় সহিহ হাদিসের বক্তব্যের চেয়ে আলাদা অবস্থান গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ এই মাসআলায় চার মাযহাবের ইমামের অবস্থান একটি সহিহ হাদীসের বক্তব্যের চেয়ে ভিন্ন।

জানেন আব্দুল্লাহ কী বলেছিলেন?

তিনি বলেছিলেন, আমরা চার ইমামের অনুসরণ করি।

কিন্তু এ বিষয়ে সহিহ হাদিসের বক্তব্যের সাথে তাঁদের অবস্থান মিলছে না!

আব্দুল্লাহ বললেন, আমরা সালাফদের অনুসরণ করি। সাহাবা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন, তাবেঈ, তাবে তাবেই এবং চার ইমাম (আবু হানিফা, মালিক, শাফেই, আহমাদ), আমরা তাঁদের সিলসিলা অনুসরণ করি। এটা কিভাবে সম্ভব যে তাঁরা এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না!

এটা হল মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্‌হাবের আপন ছেলের বক্তব্য।

আরেকবার খতমে কুরআনের পর দুআর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হল। কিছু কিছু আলিম একে বিদ’আহ বলেছেন। কিন্তু মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্‌হাব বলেছিলেন, ‘’না, আমরা আমাদের চার ইমামের বিরোধিতা করতে পারিনা‘’। অথচ বলা হয় যে তাঁরা চার ইমামকে ঘৃণা করেন!

তাঁকে হাম্বলী বলা হত, কারণ তিনি হাম্বলি মাযহাবের অনুসরণ করতেন। তবে তিনি অন্ধ অনুসরণকারী ছিলেন না, এটা বুঝতে হবে। একটা গাধা যেভাবে সোজা লাইন ধরে এগিয়ে যায়, তিনি সেভাবে অন্ধ অনুসরণ করেননি। যদি নিজ মাযহাবের অবস্থানের বিপরীতে কোন দালিলিক প্রমান পেতেন, যদি কোন আলিম এমন কোন প্রমাণ তাঁর সামনে পেশ করতেন, তাহলে তিনি সেটাকেই গ্রহণ করে নিতেন।

খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং চার ইমামকে ঘৃণা করার ব্যাপারে যেসব কথা তাঁর ব্যাপারে বলা হয়, সেগুলো ভুল। এবং বড় ধরণের অপবাদ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *