সাম্রাজ্যের পতন নানান ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত একটা জটিল প্রক্রিয়া। অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যের পতন নিয়ে আলোচনা সামরিক পরাজয়, সাম্প্রতিক দাঙ্গা, সামাজিক মেরুকরণ, অবক্ষয় কিংবা শ্বেত সন্ত্রাসের উত্থানে সীমাবদ্ধ না। পুরো বিষয়টার সূক্ষতা এবং গভীরতা ফেইসবুক পোস্টে তুলে আনা বেশ কঠিন। আটশো কিংবা হাজার শব্দের লেখায় সবগুলো দিক তুলে ধরাই বেশ কষ্টকর। আর আলোচনা করা, আমার মতে অসম্ভব। একারণে অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে এধরণের আলোচনা প্রিম্যাচিউর, কিংবা সেনসেশানালিস্ট। কিন্তু উল্টোটাই সত্য। সাম্রাজ্য হিসেবে অ্যামেরিকা এখন এমন একটা পর্যায়ে আছে যেটাকে টয়েনবি, পল কেনেডি, জন গ্লাব এবং ইবনু খালদুনসহ অনেকে অবধারিত পতনের পর্যায় হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
অ্যামেরিকান সাম্রাজ্য এবং আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতা অনির্দিষ্টকাল ধরে টিকে থাকবে আর ক্রমেই উন্নতি আর অগ্রগতি হতে থাকবে – এ ধারণাটা একটা আধুনিক মিথ ছাড়া আর কিছু না। আদ, সামুদসহ আগেকার অনেক জাতির মধ্যেও এধরণের ভুল ধারণা কাজ করতো। পতনের স্পষ্ট চিহ্ন এরই মধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায়, আর অ্যাকাডেমিয়া ইন্ডাস্ট্রির বলয়ের বাইরে গিয়ে ব্যাপারগুলো খতিয়ে দেখতে শুরু করে যে কেউ এ কথার সত্য উপলব্ধি করতে পারবেন।
এ বিষয়ে যারা জানতে আগ্রহী তারা পুলিৎযার বিজয়ী অ্যামেরিকান সাংবাদিক ক্রিসে হেজেসের অ্যামেরিকা – দা ফেয়ার ওয়েল ট্যুর বইটি দিয়ে শুরু করতে পারেন। অবক্ষয় ও পতনের চিহ্ন এবং উপসর্গ হিসেবে হেজেস এ বইতে ৭টি বিষয় নিয়ে সাত অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন –
- অবকাঠামোর ক্ষয়; বিশেষ করে স্মল টাউন এবং মিডল অ্যামেরিকাতে
- অ্যামেরিকা জুড়ে চলা নীরব অপিঅয়েড (হেরোইন ও অন্যান্য আফিমজাত মাদক) মহামারী
- বেকারত্ব, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, দারিদ্র্য
- পর্ণোগ্রাফি, বিকৃত যৌনতা, স্যাইডো-ম্যাসোকিসম
- সামাজিক মেরুকরণ, অলট রাইট-সাদা মিলিশিয়া ও অ্যান্টিফা
- জুয়া
- অ্যামেরিকার কারাগার
মেইনস্ট্রিম মিডিয়া আর হলিউডের তুলে ধরা অ্যামেরিকার চকচকে আবরণের নিচে কেমন রক্ত-পুঁজ মাখা দগদগে ঘা লুকিয়ে আছে, হেজেস তা খুব স্পষ্টভবে, মেটিকুলাসলি, বিশদ বর্ণনা দিয়ে তুলে ধরেছেন। যারা বইটা পড়তে পারবেন না তারা নিচের লেকচারটা শুনতে পারেন।
পাশাপাশি হেজেসের ‘এম্পায়ার অফ ইলিউশান’ বইটাও হাইলি রেকোমেন্ডেড।
যারা এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করেন আমি তাদেরকে অনুরোধ করবো এ বইগুলো পড়ার। এবং পড়ার পর এই সাম্রাজ্যের বাস্তবতা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার।
প্রাচীণ ব্যবিলনের মন্দিরে আর দেয়ালে দেয়ালে খোঁদাই করা থাকতো বিশালাকার সব মূর্তি। মানুষ অভিভূত হয়ে, বিস্মিত হয়ে, শ্রদ্ধা মেশানো সমীহ নিয়ে সেগুলো দেখতো। বাতিল শক্তি সবসময় বিশাল বিশাল মূর্তি তৈরি করে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে। নিয়ন্ত্রন করে। ম্যাস মিডিয়া অ্যামেরিকা নামের যুগের হুবালের বিশাল মূর্তি তৈরি করেছে। সেই মূর্তি আমাদের ঘরে ঘরে, আমাদের মনের ভেতরেও বসিয়ে দিয়েছে। অ্যামেরিকা দেখছে, অ্যামেরিকা শুনছে – এই ভয়ে আল্লাহ্র দেয়া দায়িত্বগুলোর কথাও আমরা সরাসরি উচ্চারণ করতে ভুলে গেছি।
এখন সময় এসেছে সেই মূর্তি ভাঙ্গার।