গিয়াসউদ্দিন তাহেরীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। অনেকেই বিষয়টা আরেকটা জোক হিসেবে নিচ্ছেন। কিন্তু বিষয়টা আসলে হাসির না। তাহেরির বিরুদ্ধে করা অভিযোগে ধর্ম অবমাননা, মুনাফেকি, বিদ’আত ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। গিয়াস উদ্দিন আত-তাহেরির কথা ও কাজের কতোটুকু ইসলামসম্মত তা নিয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বড় বড় প্রশ্ন আছে। উপমহাদেশের বেরেলভি ধারা আকিদাহর ব্যাপারেও আছে অনেক, অনেক গুরুতর আপত্তি। কিন্তু কোনটা মুনাফেকি, কোনটা বিদ’আত, কোনটা ইসলামসম্মত আর কোনটা ইসলামসম্মত না, এ ব্যাপার সিদ্ধান্ত নেয়ার অথোরিটি সেক্যুলার আদালত না।
কাদিয়ানির অমুসলিম ঘোষণার দাবির ব্যাপারে যা বলেছিলাম তা আবারো বলছি – এ ধরণের বিষয়ে সেক্যুলার রাষ্ট্র বা আদালতের দ্বারস্থ হবার অর্থ হল ইসলামের বিষয়ে সেক্যুলার ব্যবস্থাকে স্বেচ্ছায় কর্তৃত্ব অর্পন করা। সব ধর্মের কর্তৃত্ব অস্বীকার করে সব ধর্মের ওপর নিজের কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেয়া সেক্যুলার রাষ্ট্র কিংবা আদালতকে যখন ইসলামের বিষয়ে মোড়ল মানা হয়, যখন সেক্যুলার বডির কাছে গিয়ে ‘ফতোয়া’ চাওয়া হয়, তখন সেটা এদের ধর্মীয় বৈধতা দেয়ার নামান্তর। এভাবে ইসলামের কোন লাভ তো হবেই না বরং ইসলামের ওপর রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের পরিধি আরো বাড়বে।
তাহেরিকে বেকায়দায় দেখে আজ যারা মজা পাচ্ছেন, তাদের বোঝা উচিৎ সেক্যুলার রাষ্ট্র কোন ইসলামী বা আকিদাগত অবস্থান থেকে তার বিরোধিতা করছে না। এ ধারা চলতে থাকলে, আজ তাহেরির বিরুদ্ধে মামলা করাটা যতোটা সহজ মনে হচ্ছে একদিন কোন কওমি কিংবা আহলে হাদিস আলিমের বিরুদ্ধে একই ধরণের অভিযোগ তুলে একই ধরণের মামলা করাও ততোটাই সহজ মনে হবে। আজ ‘বিদ’আতির’ ওয়াজ বন্ধ হচ্ছে, কাল হক্কানি কিংবা সহিহদের ওয়াজ বন্ধ হবে। সেক্যুলার রাষ্ট্রের কাছে সবাই সমান।
মার্টিন নিম্যোলারের বিখ্যাত কবিতাটা সম্ভবত এখানে প্রাসঙ্গিক হবে।
যখন ওরা প্রথমে কমিউনিস্টদের জন্য এসেছিল, আমি কোনো কথা বলিনি, কারণ আমি কমিউনিস্ট নই।
তারপর যখন ওরা ট্রেড ইউনিয়নের লোকগুলোকে ধরে নিয়ে গেল, আমি নীরব ছিলাম, কারণ আমি শ্রমিক নই।
তারপর ওরা যখন ফিরে এলো ইহুদিদের গ্যাস চেম্বারে ভরে মারতে,আমি তখনও চুপ করে ছিলাম, কারণ আমি ইহুদি নই।
আবারও আসল ওরা ক্যাথলিকদের ধরে নিয়ে যেতে,আমি টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করিনি, কারণ আমি ক্যাথলিক নই।
শেষবার ওরা ফিরে এলো আমাকে ধরে নিয়ে যেতে,
আমার পক্ষে কেউ কোন কথা বলল না, কারণ,
কথা বলার মত কেউ তখন আর বেঁচে ছিল না।