অড্রে লর্ড নামে এক মার্কিন র্যাডিকাল ফেমিনিস্ট ছিল। একেবারে বিপরীত মেরুর মানুষ। তবে তার এক বিখ্যাত উক্তি আছে যার সাথে আমি একমত। যেকোন সুবিবেচক মানুষ এর সাথে একমত হবে।
উক্তিটা হল –
The Master’s Tools Will Never Dismantle the Master’s House
মনিবের যন্ত্রপাতি দিয়ে কখনো মনিবের ঘর ভাঙ্গা যাবে না।
পুরো উক্তিটা এমন:
“মনিবের যন্ত্রপাতি দিয়ে কখনো মনিবের ঘর ভাঙ্গা যাবে না। হয়তো সাময়িকভাবে তার খেলায় তাকে হারানো যাবে। কিন্তু মনিবের যন্ত্রপাতি কখনো সত্যিকারের পরিবর্তন আনবে না।”
অড্রে লর্ড কথাটা বলেছিল নিজ আদর্শের জায়গা থেকে। কিন্তু শোষক ও শোষিতের যেকোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কথাটা সত্য।
ব্রিটিশদের চাপিয়ে দেয়া ব্যবস্থা ব্রিটিশদের অনুমোদিত পথে সরানো যাবে না। সরানো গেলে, ব্রিটিশরা নিশ্চয় সেটার অনুমোদন দিতো না, তাই না?
আমাদের ওপর ফি-রি-ঙ্গি-দের চালানো আগ্রাসন মোকাবিলা করা যাবে না ওদেরই শিখিয়ে দেয়া গণতন্ত্র কিংবা নিয়মতান্ত্রিকতা দিয়ে। শোষক সবসময় সেই পদ্ধতিকেই অনুমোদন দেবে, যেটা তার নিয়ন্ত্রনকে টিকিয়ে রাখবে। শাসিতকে সে ঐ পদ্ধতিটা শেখাবে যা তার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ।
কলোনিয়াল আগ্রাসীরা আমাদের ভূখণ্ডগুলো থেকে ফিরে যাবার সময়, বরাবরই ঐ গোষ্ঠীগুলোকে ক্ষমতা দিয়ে গেছে যারা চিন্তা ও আদর্শে তাদের সবচেয়ে কাছাকাছি। যারা তাদের অনুকরণ করে। যারা ‘সভ্য’, ‘লক্ষী’ নেইটিভ।
গত একশো বছর ধরে উম্মাহ বিভিন্নভাবে পুনঃজাগরণের চেষ্টা করেছে। তৈরি হয়েছে অনেক মত, পথ ও পদ্ধতি। কিন্তু সব ধরণের রিভাইভালিস্ট মুভমেন্টের উদ্দেশ্য ঘুরেফিরে এক। সেই উদ্দেশ্যের মধ্যে উ-ম্মা-হ-র রাজনৈতিক বিজয়ও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ফিরিঙ্গিরা এই সবগুলো ধারার মধ্য থেকে শুধু একটা নির্দিষ্ট ধারাকে ‘পলিটিকাল ইসলাম’ বলে।
যেন ইসলামের এই ধারাই শুধু পলিটিকাল। অন্য কোন ধারার কোন ধরণের রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা নেই! .এটা তারা কেন করে? ঐ ধারার প্রতি পক্ষপাতের কারণে?
না, বেইসিকালি তারা এভাবে একটা সীমানা তৈরি করতে চায়। কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আর পদ্ধতি বৈধ আর কোনগুলো অবৈধ, তারা সেটা ঠিক করে দেয়। এভাবে তারা মুসলিমদের রাজনৈতিক চিন্তাকে নিয়ন্ত্রন করতে চায়। তারা চায় এই কথাগুলো আমরা বুঝি এবং তারপর আত্মস্থ করি –
শুধু ‘নিয়মতান্ত্রিক’, ‘শান্তিপূর্ণ’, ‘গণতান্ত্রিক’ পদ্ধতিতে ইসলাম আনতে চাওয়াই বৈধ। বাকি সব পদ্ধতি অবৈধ। সেগুলো ‘পলিটিকাল’ না। বা সেগুলো বৈধ ‘পলিটিক্স’ না।
তোমরা মুসলিমরা ইসলামের আদর্শে রাজনীতি করতে চাও? ঠিক আছে, তাহলে এসো গণতন্ত্র, সেক্যুলার রাষ্ট্র আর সাংবিধানিক কাঠামোর পথে। তোমাদের (সীমিত আকারে) সহ্য করা হবে। আর যথেষ্ট লিবারেল হতে পারলে-ঠিকঠাক অনুকরণ করতে শিখলে-হয়তো আমরা; পশ্চিমারা, তোমাদের স্বীকৃতিও দেবো।
কিন্তু খবরদার! ভুলেও অন্য কোন পথ নেয়া যাবে না – ওগুলো অবৈধ। মুসলিমদেরা রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার অন্য কোন প্রকাশকে, অন্য কোন পথ বা পদ্ধতিকে আমরা বৈধতা দেবো না!
আর ধীরে ধীরে একসময় আমরা এটা আত্মস্থ করি। আমরা এটাকে নিজের চিন্তা বলে ভাবতে শিখি।
ফিরিঙ্গিরা এটা কেন করে?
কারন সাইয়্যিদ আহমাদ শহীদ রাহিমাহুল্লাহ আর ‘স্যার’ সৈয়দ আহমাদের মধ্যে পার্থক্য তাদের ভালো মতো জানা আছে।
দিন শেষে এই ‘নিয়মতান্ত্রিকতা’ আর গণতন্ত্র হল মনিবের দেয়া যন্ত্রপাতি। আর মনিবের যন্ত্রপাতি দিয়ে কখনোই মনিবের ঘর ভাঙ্গা যাবে না।