রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের সতর্ক করে বলেছেন –
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، حَدَّثَنَا أَبُو غَسَّانَ، قَالَ حَدَّثَنِي زَيْدُ بْنُ أَسْلَمَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ قَبْلَكُمْ شِبْرًا بِشِبْرٍ، وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ، حَتَّى لَوْ سَلَكُوا جُحْرَ ضَبٍّ لَسَلَكْتُمُوهُ ”. قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى قَالَ ” فَمَنْ ”.
তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের পন্থা পুরোপুরি অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি গো সাপের গর্তেও ঢুকে তবে তোমরাও তাতে ঢুকবে।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি ইয়াহূদী ও নাসারার কথা বলছেন?
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে আর কার কথা? [আল বুখারি, ১৩৯৭; মুসলিম, ৪৮২২]
অন্য একটি হাদিসে[1] ভবিষ্যৎবাণী এসেছে যা কিছু ইহুদী ও খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে হয়েছে সেই ঘটনাগুলো এই উম্মাহর ক্ষেত্রেও ঘটবে। আরেকটি হাদিসে[2] এই উম্মাহর সাথে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের সাদৃশ্যের তুলনা করা হয়েছে এক জোড়া জুতোর এক পাটির সাথে অন্যটির মিলের সাথে।
মৃত্যু, বিচারের দিন, আখিরাত অবশ্যাম্ভাবী, অবধারিত। আমাদের কোন কাজই এ সত্যকে পরিবর্তন করতে পারে না। যা আল্লাহ্ নির্ধারিত করে রেখেছেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন তা ঘটবেই। তেমনিভাবে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের ধাঁচে এ উম্মাহও কলুষিত হবে এও এক অবধারিত বাস্তবতা, যা থেকে পালানোর কোন সুযোগ নেই। আমাদের যা করার আছে তা হল, সতর্ক হওয়া এবং এধরনের অনিষ্ট, দূষণ ও বিকৃতির উপকরণগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করা।
[1] جامع الأحادیث – (ج 13 / ص 308)
[2] كنز العمال في سنن الأقوال والأفعال – ( 5 (ج 8 / ص 9
রিবা ও আহলে কিতাব
রিবা বা সুদ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে ইহুদী ও খ্রিস্টানদের ইতিহাসের দিকে তাকানো যেতে পারে। এ ব্যাপারে একটি প্রবন্ধের কিছু অংশ নিচে দেয়া হল যা থেকে এ ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যাবে। এ প্রবন্ধটির লেখক হলেন অরেঞ্জ ফ্রি স্টেইট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ডিন প্রসেফর জে জে হেনিং। সম্পূর্ণ লেখাটি নেয়া হয়েছে আইন বিষয়ক জার্নাল Fundamina, 2007 Vol. 13 no. 2 থেকে।
মধ্যযুগের কন্ট্র্যাক্টাম ট্রিনিয়াস এবং অংশীদারী আইন (THE MEDIAEVAL CONTRACTUM TRINIUS AND THE LAW OF PARTNERSHIP)
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
“Usury” [সুদ, সুদের ব্যবসা] শব্দটির উৎপত্তি ‘usura’ থেকে যার অর্থ হল , ব্যবহার, উপভোগ, সুদ। শাব্দিকভাবে এর অন্যান্য আরো অর্থও আছে।. ঐতিহাসিকভাবে Usuary শব্দটি বিভিন্ন ধরনের অর্থ ধারন করেছে। আদিতে এ শব্দটির দ্বারা ধার হিসেবে দেয়া ভোগপণ্যের বিনিময়ে সব ধরনের প্রাপ্তিকে বোঝানো হত, এবং শব্দটির সাথে নেতিবাচক কোন ধারন বা সমালোচনা যুক্ত ছিল না।
ডমাট বলেছেন, ঋন হিসেবে দেয়া অর্থ কিংবা কোন ব্যবহার্য পণ্যের মূল্যের ওপর (over & above) যা কিছু পাওনাদার পেয়ে থাকে সেটার ক্ষেত্রে usury শব্দটি ব্যবহার হয়[1]।
মধ্য যুগে ঋণের ক্ষেত্রে মূলে ঋণের চেয়ে বাড়তি সব ধরনের পেমেন্টকে সুদ গন্য করা হতো এবং পাপ ও বেআইনি হিসেবে নিন্দা করা হতো[2]। সাধারণ মানুষের অনেকের মধ্যে সুদের ব্যাপারে এমন ধারণা প্রচলিত ছিল। ধরে নেয়া হতো যে, সুদ নেয়া কেন সামাজিকভাবে উপকারি, সেটা প্রমানের দায়িত্ব সুদের পক্ষ নেয়া লোকজনের। আর সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতিতে সুদের উপকারিতাও স্পষ্ট ছিল না, কারন এমন অর্থনীতিতে ঋন নেয়া হতো কোন প্রয়োজন মেটানোর জন্য, উৎপাদন বা বিনিয়োগের জন্য না।
অন্যদিকে সুদের সামাজিক ক্ষতির দিকগুলো ছিল স্পষ্ট। চক্রবৃদ্ধি সুদ সামাজিক বৈষম্য বাড়াতো, স্বাধীন ব্যক্তিকে অনির্দিষ্ট কালের অর্থনৈতিক দাসত্বে আবদ্ধ করতো, এবং প্রশাসনকে দায়িত্ব নিতে হত সুদ ও মূল ঋন আদায় নিশ্চিত করার। এর বিপরীতে এর একমাত্র সুবিধা ছিল এর ফলে ভোগকে উৎসাহিত করা হতো। কাজেই সুদী ঋন এসময়ে শুধু অস্বাভাবিক ছিল না, একইসাথে একে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে পাপ, নৈতিকভাবে অগ্রহনযোগ্য এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকরও মনে করা হতো[3]। আধুনিক সময়ে usury শব্দটির অর্থ অনেকে সংকীর্ণ হয়ে এসেছে। এখন usury বলতে ঋণের বিপরীতে অস্বাভাবিক উচ্চহারের সুদকে বোঝানো হয়, কিন্তু এখানে আমরা প্রাচীন অর্থেই শব্দটি ব্যবহার করবো।
সুদের ধারনা গড়ে উঠেছিল একদিকে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান দার্শনিক এবং অন্যদিকে ইহুদী ও খ্রিষ্টান ধর্মতত্ত্ববিদদের দ্বারা[4]। সুদের নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে প্রাচীন উদাহরনের অনেকগুলোই পাওয়া যায় বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে। যেমন, Leviticus 25:36–37, Deuteronomy 23:19, Deuteronomy 23:20, Exodus 22:25, Ezekiel 18:13, Ezekiel 22:12 ।
সুদের ব্যাপারে এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির উৎস ছিল অর্থের ব্যাপারে গ্রিক দার্শনিকদের ন্যাচারালিস্টিক ধারণা এবং অ্যারিস্টটলের দর্শন যা মধ্যযুগীয় ধর্মতত্ত্ববিদদের চিন্তাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। অ্যারিস্টটলের মতে অর্থ একটি কৃত্রিম বা অপ্রাকৃতিক বস্তু (inorganic object) হবার কারনে শুধু বিনিময়ের মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, কিন্তু এক মুদ্রা নতুন মুদ্রার জন্ম দিতে পারবে না। ঋণ হিসেবে দেয়া অর্থের বিনিময়ে সুদ চাওয়ার ফলে মুদ্রা থেকে মুদ্রার জন্ম হয়, এবং এটা প্রাকৃতিক নিয়মের বিরোধী[5]।
এই অবস্থান খ্রিষ্টান গির্জার শিক্ষার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। যদিও খ্রিষ্টান ধর্মে সুদের নিষেধাজ্ঞার ভিত্তি ছিল লুক ৬:৩৫ (তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালোবেসো, তাদের মঙ্গল করো, আর কিছুই ফিরে পাবার আশা না করে তাদের ধার দিও। তাহলে তোমাদের মহাপুরস্কার লাভ হবে, আর তোমরা হবে পরমেশ্বরের সন্তান। কারণ তিনি অকৃতজ্ঞ ও দুষ্টদের প্রতিও দয়া করেন।), তবুও খ্রিষ্টান ধর্মতত্ত্ববিদরা উদারভাবে সুদের বিরুদ্ধে ক্লাসিকাল দার্শনিকদের দেয়া যুক্তিগুলো গ্রহন করেছিলেন[6]।
থমাস অ্যাকুইনাসের অবস্থান ছিল, সুদ নেয়া ঠিক না, কারণ এটা একই জিনিসের জন্য দুইবার দাম নেয়ার মতো। অর্থাৎ আপনি পণ্য এবং পণ্যের ব্যবহার, দুটোর জন্যই দাম নিচ্ছেন। কোন ব্যক্তি রুটি কেনার সময় তার কাছ থেকে যদি রুটির দাম এবং রুটি খাওয়ার দাম – দুটো আলাদাভাবে নেয়া হয় তবে অবশ্যই সেটা নৈতিকভাবে ভুল। কিন্তু সুদের মাধ্যমে ঠিক এ কাজটাই করা হয়। টাকা হল বিনিময়ের মাধ্যম। টাকা ব্যবহার করার মানে হল টাকা খরচ হয়ে যাওয়া। ঋণ দেয়ার পর সেই টাকা ফেরত নেয়ার পাশাপাশি টাকার ব্যবহারের জন্য সুদ নেয়া, আলাদা আলাদা করে রুটির দাম আর রুটি খাওয়ার দাম নেয়ার মতো[7]।
ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীতে ধর্মীয় আইনের উকিলরা গির্জার সুদ বিরোধী অবস্থানের পক্ষে বিস্তারিত ও যৌক্তিক আইনী ভিত্তি তৈরি করেন। তাদের এই ব্যাখ্যা গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করে গ্লসেটারদের (রোমান আইনের ব্যাখ্যাকারদের একটি শ্রেণী) ঠিক পরপর আসা রোমান আইনের ব্যাখ্যাকারদের মাধ্যমে। সুদের অবৈধতা আইনী বিধান হিসেবে গৃহীত হয় Bartolus de Saxoferrato and Baldus de Ubaldis এর সময় থেকে[8]।
চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দীতে বিভিন্ন নগর ও রাস্ট্রের নিজ নিজ আইনের মধ্যে গৃহীত হবার দ্বারা সুদের অবৈধ হবার এই বিধান ইউরোপ এবং ব্রিটেনের আইনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায়[9]। ফলে প্রাচীন গ্রিস কিংবা রোমের মতো করে, সুদের কোন হার বেআইনি, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়। মূল ঋনের পরিমানের চেয়ে বাড়তি যেকোন কিছু সুদ হিসেবে গন্য হতে থাকে[10]। ফলস্বরূপ, মধ্যযুগীয় বাণিজ্যিক আইনের অধীনস্ত অঞ্চলগুলো পুরোপুরিভাবে সুদ অবৈধ হবার এই বিধানের অধীনে চলে আসে[11]।
তবে গির্জা ও রাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞা কখনোই পুরোপুরিভাবে সুদী ঋনকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। সুদের ওপর থাকা আইনী নিষেধাজ্ঞা না ভেঙ্গেও কিভাবে অর্থের ব্যবহারের বিনিময়ে প্রতিদান নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়ে রেনেসার সময় ব্যবসায়ী ও মহাজনের প্রচুর চিন্তাভাবনা করে[12]।
সুদ অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও অর্থের প্রয়োজনে থাকা এবং সুদ দিতে প্রস্তুত ব্যক্তির জন্য এভাবে ঋণ নেয়ার সুযোগ যে একেবারেই ছিল না, এমন না। সুদ বিরোধী আইনগুলোকে এড়ানোর জণ্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি এসময় আবিস্কার করা হয়। যেমন sale-resale পদ্ধতি। ঋণদাতা কাল্পনিক বা তুচ্ছ কোন পণ্য চড়া দামে ঋণগ্রহীতার কাছ বাকিতে বিক্রি করতো। তারপর সাথেসাথেই আবার কম দামে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে নগদ টাকায় কিনে নিতো।
এই দুই দামের পার্থক্য স্পষ্টতই ছিল ঋণের বিপরীতে সুদ[13]।
[ধরুন আমি ২০% সুদে আপনাকে ১০০০ টাকা ঋণ দিতে চাই, কিন্তু সুদে ঋণ দেয়া বেআইনী। এখন আমরা ঘুরিয়ে এই ব্যাপারটা করবো। যেমন আমি একটি শার্টের বোতাম আপনার কাছে বাকিতে ১২০০ টাকায় বিক্রি করলাম। বোতাম এখন আপনার কাছে, আমি আপনার কাছ থেকে পাই ১২০০ টাকা। এবার আপনার কাছ থেকেই নগদ ১০০০ টাকায় বোতামটি কিনে নিলাম। বোতাম এখন আমার কাছে, আর আমার ১০০০ টাকা আপনার কাছে। আমি এখনো আপনার কাছে প্রথম লেনদেনের ১২০০ টাকা পাই, তাই আপনি ফেরত দেয়ার সময় আমাকে ১২০০ টাকা ফেরত দেবেন। ~অনুবাদক]
এভাবে ঘুরিয়ে সুদ খাওয়ার আরেকটি পদ্ধতি আবিস্কার করা হয় পার্টনারশিপ বা অংশীদারী চুক্তিকে ব্যবহার করে[14]।
কনট্র্যাক্টাম ট্রিনিয়াস (The Triple Contract)
মধ্যাযুগের প্রচলিত একটি চুক্তি ছিল কমেন্ডা চুক্তি (Commenda Contract). এই চুক্তি বিনিয়োগকারীদের অংশীদারী ব্যবসার ঋণের দায়ভার এড়ানোর সুযোগ দিতো। একইসাথে ব্যবসায় লস হলে এ চুক্তি অনুযায়ী বিনিয়োগকারীকে শুধু নিজের মূলধন বা বিনিয়োগের সমান লস নিতে হতো। কিন্তু কমেন্ডা চুক্তি বিনিয়োগকৃত মূলধনের নিরাপত্তা দিতে পারতো না। বিনিয়োগকৃত মূলধন হারানো ঝুঁকি কমেন্ডেটরকেই নিতে হতো এবং এই ঝুঁকি নেয়ার শর্তেই সে লাভের অংশীদার হতো[15]।
ঋণ আর অংশীদারীর পার্থক্যের ভিত্তি ছিল ব্যবসার ঝুঁকি গ্রহন করার ওপর। ঋণের ক্ষেত্রে মূলধন হারানো ঝুঁকি গ্রহন করতো ঋণদাতা, ব্যবসার ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি গ্রহন করতো অর্থ বিনিয়োগ করা পার্টনার[16]।
থমাস অ্যাকুইনাসের দেয়া ব্যাখ্যার পর, বিনিয়োগকারীর জন্য ব্যবসার পার্টনার হিসেবে ব্যবসার লভ্যাংশ নেয়ার ক্ষেত্রে গির্জার কোন আপত্তি ছিল না[17]। অংশীদারী চুক্তির মাধ্যমে অর্থ বিনিয়োগ করা এবং এ থেকে হওয়া লাভের অংশ নেয়াকে বৈধ মনে করা হতো। তবে এই শর্তে যে বিনিয়োগকারী যেমন লাভের অংশ নেবে তেমনি লস হলে তাকে সেটার অংশও নিতে হবে। যদি ব্যবসায় লস হয় তাহলে যে পরিমাণ অর্থ সে বিনিয়োগ করেছিল, সেটা আর সে ফেরত পাবে না। অর্থাৎ কমেন্ডা চুক্তির ফলে বিনিয়োগকারীর মূলধন ঝুঁকিমুক্ত ছিল না[18]।
ব্যবসার লাভের পাশপাশি ঝুকির অংশীদার হবার এই আবশ্যিক শর্তের কারনে এই পদ্ধতি ঐ সব সুদী মহাজনদের জন্য উপযুক্ত ছিল না যাদের আগ্রহ ছিল প্রথমত মূলধনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সেইসাথে মূলধনের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে প্রাপ্তি (return) নিশ্চিত করায়[19]। এই ধরনের লোকের জন্য মূলধন ও নির্দিষ্ট হারে রিটার্ন না পাওয়াটা অগ্রহনযোগ্য তো ছিলই, পাশাপাশি অংশীদারী ব্যবসার ঋণ ও দায়িত্বের দায়ভার নেয়াও (liability in solidum) তাদের কাছে অগ্রহনযোগ্য ছিল।
কমেন্ডা চুক্তির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল, কিন্তু এটুকু যথেষ্ট ছিল না। প্রয়োজন ছিল নতুন কোন সমাধানের। এমন অবস্থায় বলা হল যে সম্ভাব্য যেকোন লসের মোকাবেলায় মূলধনের ওপর বীমা করার মাধ্যমে একজন পার্টনার আইনী ভাবে তার বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে (insuring the principal against loss)। বলা হল – যেহেতু অংশীদারি চুক্তি এবং বীমা চুক্তি, দুটোই পৃথকভাবে বৈধ, তাই দুজন ব্যক্তির একই সাথে এ দুটি চুক্তি করা অবৈধ হবার কোন কারণ নেই।
প্রাথমিকভাবে Azo ও Accursius এর মতো রিভাইভড রোমান ল’য়ের ব্যাখ্যাকাররা এই ধরনে দ্বৈত চুক্তিকে আখ্যায়িত করে societas leonine নামে[20]। দীর্ঘ ও তীব্র বিতর্কে পর এই ধরনের চুক্তিকে পোপ পঞ্চম সিক্সটাস এর সুদ বিরোধী আইনের লঙ্ঘন ঘোষণা করা হয়[21],[22]।
কিন্তু এ অবস্থান সেই সময়কার দৈনন্দিন বানিজ্যিক কর্মকান্ডের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। রিভাইভড রোমান ল’ইয়ের কিছু ইটালিয়ান ব্যাখ্যাকার, বিশেষ করে Scaccia and Raphael, এমন চুক্তির বৈধতার ব্যাপারে বলতে শুরু করেন যেখানে ব্যবসার একজন অংশীদার নির্দিষ্ট বিনিময় নিয়ে অপর অংশীদারের মূলধনের নিশ্চয়তা দেবে। অর্থাৎ নিজের মূলধনের ওপর বীমা করার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীকে আর ব্যাবসার কোন লসের কারনে নিজের মূলধন হারানোর ঝুঁকি নিতে হবে না। ব্যবসায় লাভ-লস যাই হোক তার মূলধন নিরাপদ থাকবে।
প্রাথমিকভবে তীব্র সমালোচনা হলেও ধীরে ধীরে এই অবস্থান গ্রহনযোগ্যতা পেতে শুরু করে, এর ব্যাপক প্রচলন ঘটে এবং পরবর্তীতে ইউরোপের সিভিলিয়ান লিগ্যাল সিস্টেম এবং কমন ল অনুযায়ী এধরনের চুক্তি বৈধতা অর্জন করে[23]।
একবার এ অবস্থান মেনে নেয়ার পর পরের ধাপ ছিল স্পষ্ট। যদি ব্যবসার একজন পার্টনার সম্ভাব্য লসের আশংকায় তার মূলধনের ওপর বীমা করতে পারে, তাহলে একইভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফার নিশ্চয়তা পাবার অধিকারও তার আছে[24]। এই বোঝাপড়া কন্ট্র্যাক্টাম ট্রিনিয়াস (তিন চুক্তি/Triple Contract) নামে পরিচিত লাভ করে।
এই চুক্তির দ্বারা প্রথমে একটি অংশীদারী চুক্তি করা হয়, যা বৈধ।
তারপর বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর বীমা করানোর মাধ্যমে নিজের মূলধনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, যা বৈধ।
তারপর সম্ভাব্য অনিশ্চিত মুনাফাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ নিশ্চিত প্রাপ্তি বা রিটার্নের (return) বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে মুনাফা নিশ্চিত করা হয়, যা বৈধ।
যুক্তি দেয়া হয় – অংশীদারি চুক্তি, মূলধনের ওপর বীমার চুক্তি এবং সম্ভাব্য অনিশ্চিত মুনাফাকে বিক্রি করার চুক্তি তিনটির প্রত্যেকটি যেহেতু আলাদা আলাদাভাবে বৈধ, তাই দুজন ব্যাক্তির নিজেদের মধ্যে এই তিনটি চুক্তি করাকে অবৈধ বলার কোন কারণ নেই[25]।
অন্য ভাবে বলা যায় এই চুক্তি হল তিনটি আলাদা আলাদা চুক্তির সম্মেলন। এই তিনটি চুক্তি আলাদা আলাদাভাবে বৈধ, কিন্তু যখন একসাথে করা হয় তখন এর ফলাফল হল মূলধনের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে লাভ পাওয়া। যেমন ধরুন –
- প্রথমে ধাপে, যাইদ ও নাসিরের মধ্যে একটি অংশীদারি ব্যবসার জন্য যাইদ এক বছরের জন্য নাসিরকে ১০০ টাকা ঋণ দেবে।
- দ্বিতীয় ধাপে, ব্যবসায় ৩০ টাকার ওপর হওয়া লাভের অধিকার নাসিরের কাছে যাইদ বিক্রি করে দেবে ১৫ টাকা ফি-র বিনিময়ে। অর্থাৎ ব্যবসায় ৩০টাকার ওপরে সব লাভের অধিকার যাইদ ছেড়ে দেবে, তবে এজন্য তাকে ১৫ টাকা দিতে হবে।
- তৃতীয় ও শেষ ধাপে, ৫ টাকা বীমার বিনিময়ে যাইদ তার মূলধনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। অর্থাৎ সম্ভাব্য লসের মোকাবেলায় নিজের মূলধনকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য যাইদ বীমা হিসেবে নাসিরকে ৫ টাকা দেবে।
একইসাথে এ তিনটি চুক্তি করার ফলাফল হল, ১০০ টাকা ঋণের বিনিময়ে যাইদ ১০ টাকা সুদ পাবে[26]।
এই পদ্ধতিতে পার্টনারশীপের আবশ্যিক উপাদান, ব্যবসার ঝুঁকির অংশীদার হবার ব্যাপারটি চুক্তির মাধ্যমে বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে কন্ট্র্যাক্টাম ট্রিনিয়াসের ব্যাপক প্রচলন ঘটে[27] এবং এক পর্যায়ে একে আইনত বৈধ পার্টনারশিপ হিসেবেও মেনে নেয়া হয়[28], কিন্তু আসলে এটি ছিল এমন একটি চুক্তি যার সাথে আধুনিক ব্যাংক লোনের মৌলিক কোন পার্থক্য নেই[29]।
ফ্রেঞ্চ জুরিস্ট Pothier ১৭৬৫ সালে প্রকাশিত অংশীদারির ওপর লেখা তার বিখ্যাত গ্রন্থ Traité du Contrat de Société তে একই মত ব্যাক্ত করেন। ট্রিপল কন্ট্রাক্ট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর উপংহারে তিনি বলেন[30],
এ ধরনের চুক্তি যে আসলে সুদী লোন ছাড়া আর কিছু না, এবং এধরনের লোনকে যে সুদী বলে ঘোষনা করা উচিৎ এটা অনুধাবন করার জন্য অনেক সুক্ষদর্শী হবার প্রয়োজন হয় না। এটা স্পষ্ট যে ৩টি চুক্তির ভান করার উদ্দেশ্য হল সুদযুক্ত ঋণের আসল চেহারা আড়াল করা। আর এক্ষেত্রে ব্যাবসার পার্টনার হবার কোন ইচ্ছায় ব্যক্তির থাকে না, বরং তার উদ্দেশ্য থাকে মূলধনের ওপর সুদ খাওয়া। আর কোন ভ্রান্তির কারনে যদি ব্যক্তি নিজেকে এমন বুঝিয়েও থাকে যে সে আসলে ব্যবসার জন্যই পরপর এ তিনটি চুক্তিতে ঢুকেছে তবে সেই ভ্রান্তি ব্যাক্তির লোভ থেকে সৃষ্ট, যার উদ্দেশ্য হল চুক্তির ছদ্মবেশে নিজের কাছে সুদের মতো অনৈতিক কাজকে আড়াল করা। আর এই পুরো লেনদেন সবশেষে সুদেই পর্যবসিত হয়[31]।
পুঁজিবাদী অগ্রগতির প্রভাবে সুদের ব্যাপারে মধ্যযুগীয় ধারণা আড়ালে চলে যায়। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে অর্থনৈতিক লিবারেলিযমের বা উদারনৈতিকতাঁর অগ্রগতির প্রভাবে অধিকাংশ দেশের আইন থেকে সুদ বিরোধী বিধানগুলো মুছে যায়। ১৫৪৫ সালে ইংল্যান্ড আইনগতভাবে নির্ধারিত সুদের হার প্রতিষ্ঠা করে[32]। মূলধনের ওপর সুদ নেয়া বৈধ কি না – এই প্রশ্নের জায়গা দখল করে নেয় – সুদের কোন হারকে অতিরিক্ত ধরা হবে এবং usuary বলা হবে[33]।
এভাবে সুদের ওপর থাকা কঠোর নিষেধাজ্ঞার ইতি ঘটে। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে মুনাফা নেয়ার উদ্দেশ্য কোন ব্যবসায় টাকা বিনিয়োগ করা ব্যাক্তিকে ঋণদাতা না বলে, ব্যবসার অংশীদার হিসেবে ধরে নেয়ার বিতর্কিত ধারণা, যা এরইমধ্যে ইউরোপের অন্যান্য অংশে সমালোচিত হয়ে পড়েছিল, ব্রিটেনের জুরিসপ্রুডেন্সে গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে পড়ে এবং পরবর্তী প্রভাবিত করে remedial partnership legislation-কে । এই নিয়মকে অযৌক্তিক, অন্যায্য এবং ব্যাপক বিভ্রান্তির কারণ হিসেবে পরে চিহ্নিত করা হয়[34]।
[জে জে হেনিং এর উদ্ধৃতি সমাপ্ত]
লক্ষণীয় বিষয় হল –
- রিবার শার’ঈ ধারণার সাথে usury এর আদি ধারণার সাদৃশ্য চোখে পড়ার মতো। দুটোই মুদ্রার পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং দুটোই ঋনের ওপর বাড়তি পরিমাণকে বোঝায়[1]।
- প্রাথমিকভাবে ঋন নেয়া হতো অভাবী ব্যক্তির প্রয়োজন মেটানো এবং ভোগ্যপন্যের জন্য।এক্ষেত্রেও আমাদের ও ইহুদী-খ্রিস্টানদের অবস্থান কাছাকাছি। সুদী ঋণকে পাপ, নৈতিকভাবে অগ্রহনযোগ্য এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর গণ্য করা হতো। টাকা থেকে টাকা বানানোকে মনে করা হতো প্রাকৃতিক আইন বিরোধী।
- মুসা আলাইহিস সালাম এবং ঈসা আলাইহিস সালাম, দুজনের দ্বীনেই রিবা ছিল হারাম। তাঁদের আলাইহিমুস সালাম ওপর অবতীর্ণ কিতাবের যে অংশ আজো পৃথিবীতে আছে, বিকৃতির পরও সেখানে সুদের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা পাওয়া যায়।
- সুদের ওপর নিষেধাজ্ঞা একসময় ব্রিটেন ও ইউরোপের আইনেরও অংশ ছিল, এবং এ আইন দীর্ঘদিন যাবত কার্যকর ছিল। মূল ঋণের চেয়ে বাড়তি পরিমাণকে সুদ মনে করা হতো, সেটা পরিমানে যতো অল্পই হোক না কেন। এই অবস্থান রিবার ব্যাপারে ইসলামী শারীয়াহর অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- এ নিষেধাজ্ঞাকে এড়ানোর জন্য ব্যবসায়ী ও মহাজনের নতুন নতুন বিভিন্ন কৌশল বের করতে শুরু করে। যেমন কোন কাল্পনিক বা তুচ্ছ জিনিষ বাকিতে চড়া দামে বিক্রি করে সাথেসাথে নগদে কমদামে পুনঃবিক্রি করা।
- সুদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর আরেকটি উপায় ছিল ঝুকিহীন ‘অংশীদারী’ বা পার্টনারশিপ চুক্তি – কমেন্ডা চুক্তি। যদিও এখানে উল্লেখ করা হয়নি তবে এ কমেন্ডা চুক্তিই ছিল আধুনিক লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানি আর শেয়ারের আদর্শিক পূর্বসুরী।
- হুবহু রিবার মতো ফলাফল পাওয়ার জন্য কমেন্ডাকে আরো পরিবর্তন করে ‘তিন চুক্তি’ বা কন্ট্র্যাক্টাম ট্রিনিয়াস এর ধারণা তৈরি করা হয়। এমন তিনটি আলাদা আলাদা চুক্তিকে একত্রিত করা হয় যেগুলোকে স্বতন্ত্রভাবে সেইসময়কার সমাজে বৈধ মনে করা হতো। স্বতন্ত্র একাধিক চুক্তিকে একত্রিত করার এই ধারণাকে কেন্দ্র করেই আমাদের পরবর্তী অংশের আলোচনা করা হবে।
- ঘুরিয়ে সুদ খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যাপক প্রচললের সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে সুদের ওপর নিষেধাজ্ঞা অর্থহীন হয়ে দাড়ালো। শেষ পর্যন্ত ষোলশ শতাব্দীতে ইউরোপের আইন থেকে রিবার ওপর নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে দেয়া হল। আর এভাবেই সূচনা হল আধুনিক সুদ-ভিত্তিক পুঁজিবাদের।
শিক্ষণীয় বিষয়
বারবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটা সত্ত্বেও মূর্খ মানুষ অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে না। এব্যাপারে জর্জ হেগেল বলেছিলেন –
আমরা ইতিহাস থেকে এ শিক্ষাই পাই যে মানুষ ইতিহাস থেকে শেখে না।
ওপরে বর্ণিত হাদীসগুলোর আলোকে বোঝা যায় এ উম্মাহর মাঝেও রিবাকে বৈধতা দেয়া হবে। স্বাভাবিকভাবেই এটুকুও অনুমান করা যায় যে সুদকে বৈধতা দেয়ার ব্যাপারটা হঠাৎ করে ঘটবে না। প্রথমে রিবার প্রতি অভ্যস্ত হয়ে ওঠার একটা পর্যায় থাকবে, তারপর একসময় রিবার ওপর নিষেধাজ্ঞা অর্থহীন মনে হবে। ইহুদী ও খ্রিস্টানদের ক্ষেত্রে এটা ঘটেছিল বৈধ লেনদেনের আড়ালে রিবা চালু করার মাধ্যমে। স্বতন্ত্রভাবে বৈধ একাধিক চুক্তিকে একত্রিত করার দ্বারা সুদ নিশ্চিত করা ছিল এমনই এক কৌশল। এমনটা বলা সম্পূর্ণ অনুমাননির্ভর হবে না যে, এ উম্মাহর ক্ষেত্রেও এমন ঘটতে পারে। আর দুঃখজনক এবং রূঢ় বাস্তবতা হল এ প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
[লেখাটি দক্ষিন আফ্রিকার মাদ্রাসা ইনামিয়্যাহ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রবন্ধ ‘Riba in new getup’ এর প্রথম অংশ থেকে অনূদিত]
[1] শাব্দিকভাবে রিবা অর্থ বাড়তি, বৃদ্ধি/ Extra., to increase
[1] Domat The Civil Law in its Natural Order (1722) 606
[2] Eg Felicius Tractatus de Societate (1666) 3 21: ”Usurae prohibitae sub omni jure.” See also Bates (n 6) 20-21; Blitz & Long “The economics of usury regulation” 1965 J of Political Economy 608-609.
[3][3] Although clerics had been prohibited from lending at interest at least since the fourth century, the ban was not extended to laymen until much later. In 1139, the Second Lateran Council denied all sacraments to unrepentant usurers and, in an 1142 decree, condemned any payment greater than the capital that was lent. Jews and Moors (being “strangers” in Christian lands) were initially exempt from the ban, but the Fourth Lateran Council (1215) issued an admonition prohibiting non- Christians from charging excessive usury. In 1311, Clement V at the Council of Vienna prohibited usury outright and condemned as heretical any secular legislation that tolerated it. See Anon “The ancients and scholastics” http://cepa.newschool.edu/het/schools/ancients.htm (10 July 2006).
[4] Salin (n 2) 193; Gamoran “The Biblical law against loan on interest” 1971 J of Near Eastern Studies 127-128.
[5] Salin (n 2) 193-194
[6] Idem 194.
[7] Wikipedia sv “Usury” (10 July 2006).
[8] Robinson, Fergus & Gordon European Legal History (1985) 100. See also Felicius (n 32) 8 21, 16 23.
[9] Salin (n 2) 194.
[10] Idem 195; Holdsworth (n 4) 101-102.
[11] Endemann (n 8) 399-423.
[12] Benfield “Money mortgages and migraine – The usury headache” 1968 Case Western LR 823.
[13] Salin (n 2) 195; Holdsworth (n 4) 103.
[14] Endemann (n 8) 360-363.
[15] Idem 361; Goldschmidt (n 2) 254; Bates (n 6) 20-21.
[16] Salin (n 2) 195; Endemann (n 8) 364; Nelson (n 30) 233-234.
[17] Robinson, Fergus & Gordon (n 40) 106-107.
[18] Salin (n 2) 195.
[19] Ibid.
[20] Robinson, Fergus & Gordon (n 40) 65-74; Henning “Die leeuevennootskap” 1980 Moderne Besigheidsreg 143.
[21] Endemann (n 8) 369; Felicius (n 32) 17 20, 18 3.
[22] Lat. An attempted partnership, in which one party was to bear all the losses, and have no share in the profits. This was a void partnership in Roman law; and, apparently, it would also be void as a partnership in English law. as being inherently inconsistent with the notion of partnership. (Dig. 17, 2, 29, 2.) Brown.
[23] Endemann (n 8) 369-370.
[24] Heaton Economic History of Europe (1948) 201; Ashley An Introduction to English Economic History and Theory (1931) 441.
[25] Salin (n 2) 196; Endemann (n 8) 384-385.
[26] See Ackerman “Interest rates and the law: A history of usury” 1981 Arizona LJ 61 77; Noonan The Scholastic Analysis of Usury (1957) 202-248; Berger “The inequitable results of New York’s usury remedies” 2002 Fordham Urban LJ 2202; Wikipedia sv “Contractum trinius” (10 July 2006). See also Anon “Islamic banking isn’t Islamic” at http://islamicfinance.com/item100-f.htm (10 July 2006).
[27] The idea quickly spread to merchants and bankers across Christendom. It helped in part to improve public perception of the practice of usury by moneylenders, and ultimately the doctrine was rewritten by the School of Salamanca, and the ban overturned in many Protestant countries, starting with England by Henry VIII. See Wikipedia sv “Contractum trinius” http://e.wikipedia.org/wiki/Contractum-trinius (10 July 2006).
[28] There is a minority view that the present practice of Islamic banking relies on devices similar to the contractum trinius as a means of working around a ban of Ribā (usury) in religious scripture. See Wikipedia sv “Contractum trinius” at http://e.wikipedia.org/wiki/Contractum-trinius. See, too, Anon (n 57).
[29] Salin (n 2) 196; Endemann (n 8) 376-378, 384-385.
[30] Par 22 as trl by Tudor A Treatise on the Contract of Partnership (1845). Pothier Contrat de Société (1765) par 22: “Engénéral toutes les fois qu’un particulier fait un prétendu contrat de société avec un marchand qui l’associe a son commerce pour une certaine somme d’argent qu’il apporte a ce marchand, lequel s’oblige de la lui rendre à la fin de la société, sans que ce particulier supporte aucune part dans la perte si la société ne reussit pas, et à la charge qu’il aura une certaine part dans Ie gain; quelque modique que soit cette part dans Ie gain, en consequence de ce qu’il ne porte rien de la perte, et soit que cette part soit assurée a une certaine somme par chacun, ou soit qu’elle ne Ie soit pas, un tel contrat doit passer pour un contrat de société simule, qui n’a été fait que pour déguiser un prêt usuraire que ce particulier vouloit faire au marchand de la somme d’argent qu’il lui a remise.”
[31] See also Felicius (n 32) 17 20-22, 18 3-4.
[32] A Bill Against Usury 1545 (37 Hen VIII c 9). See Bender “Rate regulation at the crossroads” 1994 Houston LR 725.
[33] Salin (n 2) 196.
[34] Lindley (n 6) 99.