এক বিকট, কান ফাটানো শব্দ…
চোখের পাতায় ধুলোর আস্তরণ
ধুলো মুছতে মুছতে আপনি উঠে বসলেন
নিজেকে সামলে নিয়ে চারপাশে তাকালেন
টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়ে…
ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন
চারপাশে যতোদূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ
আদিগন্ত বিস্তৃত…
সবাই দলবেঁধে ছুটছে একই দিকে
আপনিও তাদের সাথে ছোটা শুরু করলেন
কেউ কোন কথা বলছে না
শুধু পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে
সবাই শব্দ লক্ষ্য করে ছুটে চলছে অবিরাম
আপনার শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে
প্রতি মুহূর্তে বুকের ভেতরের ভয়টা বেড়েই চলছে।
হঠাৎ আবিষ্কার করলেন শুধু মানুষ না
বিভিন্ন জন্তুও ছুটে চলছে…বন্য এবং গৃহপালিত,
হিংস্র ও গর্বিত…
আগে হয়তো আপনি এদের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করতেন
কিন্তু প্রচণ্ড ভয় এখন আপনাকে নড়তে দিচ্ছে না।
চারপাশের মানুষগুলোর উপস্থিতির দিকে কোন ভ্রূক্ষেপ ছাড়াই
জন্তুগুলো এগিয়ে যাচ্ছে নতমস্তকে, নতদৃষ্টিতে।
এক জনসমুদ্রের মাঝে নগ্ন দেহগুলো
একে অপরের সাথে লেপ্টে আছে
সবাই হাসফাঁস করছে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম,
কারো সময় নেই সৌজন্যতার কিংবা দুঃখ প্রকাশ করার
কারো সময় নেই অন্য কারো দিকে তাকাবার
আজ সবাই নেশাগ্রস্তের ন্যায়,
আতংকে ও উৎকন্ঠায় নিশ্চল…
আজ এক ভারী বোঝা আপনার উপর চেপে বসেছে,
যা বইবার সামর্থ্য আপনার নেই।
নতুন এক দলের আগমন ঘটছে
তাদের মতো কিছুই এর আগে দেখেন নি
চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত ওদের অবয়ব বীভৎস, ভয়ংকর!
জ্বীন…
কুৎসিত, অপার্থিব!
বিভিন্ন আকারের
বাকিদের মতোই তারা দাঁড়িয়ে…ভীতসন্ত্রস্ত ও কম্পমান
ওদের মাথার ওপর দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন…
একটি তারা খসে পড়ছে
তারপর আরেকটা, তারপর আরও একটা
তীব্র আতঙ্ক নিয়ে আপনি উপলব্ধি করলেন
আকাশ থেকে নক্ষত্ররাজি খুলে পড়ছে!
আপনার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে,
স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে
বহু আগেই হয়তো আপনার হৃৎস্পন্দন থেমে যেত।
অসংখ্য মানুষগুলো একসাথে আর্তচিৎকার করছে,
কোথাও আর পালাবার রাস্তা নেই,
আজ আর কোন সাহায্যকারী নেই।
চির পরিচিত আকাশ আর পৃথিবী আজ অপরিচিত।
শুধুমাত্র আলো বিলিয়ে চলা
মাথার ওপরের চাঁদ আর সূর্যটাই চেনা।
যেন যুগ যুগ ধরে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন
সমস্ত শরীর জুড়ে ব্যাথা,
ক্ষুধা-তৃষ্ণায় আপনি কাতর
এই যন্ত্রণা আপনাকে অবসন্ন, নিস্তেজ করে ফেলতো
যদি সর্বগ্রাসী এ আতংক আপনাকে ঘিরে না রাখতো
এক মূহুর্তের জন্য এ ভয় আপনাকে ছেড়ে যায় নি
আর ক্রমশই তা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
আর তারপর
এক নিমেষে
মূহুর্তের মধ্যে
সূর্য আর চাঁদের আলো নিভে গেল।
পুরো পৃথিবী গভীর অন্ধকারে ডুবে গেল।
মাথার ওপরের আকাশটাও এখন বদলাতে শুরু করেছে
সবকিছু ছাপিয়ে অসহায়ত্বের অনুভুতি আপনাকে গ্রাস করছে
“হায় ! কখনো যদি এ ঘুম না ভাঙ্গতো!”
ভাবতে না ভাবতেই…
তীব্র গর্জনে পৃথিবী প্রকম্পিত হয়ে উঠলো
কিন্তু না, পৃথিবী না
আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে
টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে
আর রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।
মানুষের আর্তচিৎকারে চারপাশ ভারী হয়ে উঠছে, সবাই ভয়ে উন্মত্ত প্রায়…
আকাশের প্রান্তসীমায় দেখা গেল নতুন একশ্রেণীর প্রানী
মালাইকা…
অতিকায়, প্রকান্ড
সকল কল্পনাকে হার মানানো
তাঁরা একে একে যমীনে অবতরণ করলেন ।
প্রবল, রাজকীয়, ভীতিকর, ভয়ঙ্কর
তারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তাদের রবের প্রশংসায়
ভীড়ের মধ্য থেকে
নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে একটি প্রশ্ন ভেসে এল
যা মালাইকাদেরও ভীতসন্ত্রস্ত করে তুললো
“তোমাদের মাঝে কি আমাদের রব আছেন?”
ত্রস্তস্বরে তারা জবাব দিলেন “মহিমান্বিত আমাদের রব!”
“না, তিনি আমাদের মাঝে নেই।
তবে…
তিনি আসছেন…”
সেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।
সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে।
এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে।
সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোন কিছু গোপন থাকবে না।
[সূরা আল-হাক্বা, ১৫-১৮]