ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল মিশনারী অ্যাক্টিভিটি। কোন জায়গায় ঘাঁটি গাড়ার সময় কলোনিয়ালরা সাথে করে মিশনারীদের নিয়ে যেতো। খাদ্য, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে সাহায্য দেয়ার নাম করে মিশনারীরা মূলত ক্রিশ্চিয়ানিটি প্রচার করতো। কলোনিয়াল জেনারেল আর ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা ধার্মিক ছিল না। কিন্তু তারা লক্ষ্য করেছিল, নেইটিভরা মিশনারীদের দাওয়াহ গ্রহণ করতে শুরু করলে তাদের নিয়ন্ত্রন করা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়।
এছাড়া ইউরোপীয় মনস্তত্ত্বের একটা ভূমিকাও এখানে ছিল। ইউরোপীয়রা তাদের কলোনিয়াল আগ্রাসনকে বৈধতা দিয়েছিল ‘সিভিলাইযিং মিশন’ এর নামে। অর্থাৎ নিছক লুটপাটের জন্য তারা বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে না। তারা যাচ্ছে এসব অঞ্চলের মানুষকে সভ্য করার তোলার জন্য। এনলাইটেনমেন্টের মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রাই মানবজাতির মধ্যে প্রথম জ্ঞানের আলো দেখেছে। এখন বাকি পৃথিবীর অসভ্য, অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষদের টেনেহিচড়ে আলোতে নিয়ে আসা সাদা মানুষের পবিত্র দায়িত্ব। মিশনারীদের সাথে রাখা এই ‘সভ্য করার অভিযান’ এর ন্যারেটিভকে শক্তিশালী করতো। .এই কলোনিয়াল-মিশনারী পার্টনারশিপ আজও আছে। শুধু ক্রিশ্চিয়ান মিশনারীর বদলে লিবারেল মিশনারী এসেছে। কারণ আজকের কলোনাইযারের ধর্ম হল লিবারেল-সেক্যুলারিসম, ক্রিশ্চিয়ানিটি না।
আজকের কলোনাইযারও তার বাপ-দাদার মতো লক্ষ্য করেছে কোন জনগোষ্ঠীর মধ্যে লিবারেল-সেক্যুলার ওয়ার্ল্ডভিউ প্রচলিত হয়ে গেলে সেই জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রন করা সহজ। তারা একই সাথে নিজেদের স্বাধীন মনে করে, এবং সব দিক থেকে কলোনাইযারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এর চেয়ে ভালো ফলাফল আসলে আশা করা যায় না। .আজকের উপনিবেশবাদ তাই বিশ্বজুড়ে এক বিশাল লিবারেল মিশনারী বাহিনী গড়ে তুলেছে-এনজিও, অ্যাকটিভিস্ট, কালচারাল আইকন, ইয়ুথ আইকন ইত্যাদি। এদের কাজ হল কলোনাইযারের ধর্মকে সুন্দরভাবে নেইটিভদের সামনে উপস্থাপন করা। দাসত্বকে স্বাধীনতা হিসেবে দেখানো। লিবারেল-সেক্যুলারিসমের দাওয়াহ করা। স্বাভাবিকভাবেই একাজের জন্য অ-সাদা অর্থাৎ হলুদ-বাদামী-কালো চামড়ার লোকদের (এই যে মালালা-শালালারা আর কি!) প্রাধান্য দেয়া হয়।
বাংলাদেশেও এমন লিবারেল মিশনারীরা কাজ করছে। অনেক দিন ধরে। আগেকার মিশনারীদের মতো এরাও নিজেদের মূল লক্ষ্যকে চ্যারিটি, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদির পেছনে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু সময়ে সময়ে বাস্তবতা প্রকাশ হয়ে যায়। যেমন এলএসডি ব্যবহারকে গ্ল্যামারাইয করতে গিয়ে এদের কেউ কেউ রিসালাত এবং ওয়াহিকে জঘন্যভাবে কটাক্ষ করে বসে।
বাংলাদেশের ইয়ুথ আইকন নামের লিবারেল মিশনারীদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা অধিকার, মানবতা, প্রগতির মতো বাযওয়ার্ডগুলোর আড়ালে যে বিষয়গুলোর স্বাভাবিকীকরনের প্রচারণা দেখেছি তার মধ্যে আছে – ড্রাগ ইউস, যিনা, সমকামীতা, ট্র্যান্সজেন্ডারিসম, ফেমিনিসম এবং তীব্র ইসলামবিদ্বেষ। নির্বিঘ্নে নানা ছুতোয় এরা এসব বমপ্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এবং প্রতি প্রজন্মে এ বিষয়গুলোর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। .ইউরোপীয় কলোনিয়ালদের সাফল্যের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন সহিংসতার সংগঠিত ব্যবহার এবং প্রতারণা ও মিথ্যাচারের ক্ষেত্রে চরম মুন্সিয়ানা। কিন্তু নেইটিভদেরও বেশ কিছু ভুল ছিল। তার মধ্যে অন্যতম হল উপনিবেশবাদের প্রকল্পের সাথে ব্যবসায়ী আর মিশনারীদের সম্পর্ককে দীর্ঘদিন বুঝতে না পারা। আর বুঝতে পারার পর যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া। আজও আমরা নেইটিভরা সেই একই ভুল করছি। লিবারেল মিশনারীদের তাদের সত্যিকার নাম ও পরিচয়ে ডাকার বদলে আইকন বানিয়ে মাথার ওপর তুলে রেখেছি।.#লিবারেল_মিশনারী
1.7KAbu Mus’ab, Omar Faroque and 1.7K others10 Comments163 SharesLikeCommentShare