ঘরের শত্রু


ক্রুসেইডের সময় ফাতিমী শিয়াদের ভূমিকা কী ছিল? তাদের আকিদাহ কী ছিল?

ফাতিমিদের ব্যাপারে, ইমাম আবু বাকর আন-নাবলুসি রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন কারো কাছে ১০টা তীর থাকলে নয়টা ফাতিমীদের (শিয়া) দিকে তাক করা ওয়াজিব , আর তারপর শেষেরটাও ছোড়া উচিৎ তাদের দিকেই। কারণ তারা দ্বীনকে বদলে ফেলেছে, সালেহিনদের হত্যা করেছে এবং নিজেদের ওপর মহান আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার বৈশিষ্ট্য আরোপ করেছে।

তাঁর কী দ্বীনের ইলম ছিল না? হিকমাহ ছিল না? বুঝ ছিল না?

কেন শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন, ‘রাফিদ্বারা হল ইহুদীদের গাধা, সব ফিতনায় ইহুদীরা তাদের ঘাড়ে চেপে হাজির হয়?’

ইবনু তাইমিয়্যাহ কি ফিতনাহ দেখেননি? তাতারীদের ফিতনাহর সামনে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে যাওয়া শাইখুল ইসলাম কি উম্মাহর পুনরুত্থানের গুরুত্ব, প্র্যাগম্যাটিযম, কিংবা ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা বুঝতেন না?

ইরানে একসময়ে মেজরিটি ছিল সুন্নীরা। ইন ফ্যাক্ট ইরান ছিল আহলুস সুন্নাহর দুর্গ। উম্মাহর অনেক বড় বড় উলামা এসেছেন ইরান থেকে। কিন্তু আজ সেখানে সুন্নীরা শুধু মাইনরিটি না বরং, ব্যাপকভাবে নির্যাতিত। মেজরিটি সুন্নি থেকে ইরান মেজরটি শিয়া-তে পরিণত হয় সাফাউয়ীদের সময়। কিভাবে এ পরিবর্তনটা হল? সেটার প্রসেসটা কেমন ছিল? ইউরোপের ক্রুসেডারদের সাথে এই সাফাউয়ীদের সম্পর্ক কেমন ছিল?

শিয়ারা যখনই, যেখানে সুন্নীদের ওপর কর্তৃত্ব পেয়েছে, তখন তাদের কেমন আচরণ কেমন ছিল?

আমরা জানি না।

এ ইতিহাসগুলো যদি আমরা জানতাম তাহলে আফগানিস্তানে অ্যামেরিকাকে কারা সাহায্য করেছিল, ইরাকে কারা অ্যামেরিকাকে সাহায্য করেছিল, সিরিয়াতে আজ প্রায় ১০ বছর ধরে কারা মুশরিক নুসাইরিদের সাহায্য করছে সুন্নিদের ওপর গণহত্যা চালাতে – সেটা বুঝতে আমাদের কষ্ট হতো না। কিন্তু এ ইতিহাসগুলো আমরা জানি না। আমরা জানার চেষ্টা করি না, জানানোরও চেষ্টা করি না। আমরা আক্বিদাহকে অবহেলা করি-ই সেই সাথে অবহেলা করি ইতিহাসের এ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো। ইতিহাস নিয়ে আমাদের ফ্যাসিনেশন সুলেতান টাইপের টিভি সিরিয়ালে (অথবা বইয়ে) সীমাবদ্ধ।

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ এর সাথে শিয়াদের দ্বন্দ্ব নিছক কোন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব না। এটা নতুন সৃষ্টি হওয়া কোন সংঘাত না। এ দ্বন্দ্ব, এ সংঘাত চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। আল-জাযিরার শিয়া সাংবাদিক মেহেদি হাসানের কয়েক মিনিটের ক্লিপ কিংবা রাজনীতি খেলতে চাওয়া কনফিউযড ও অজ্ঞ ইসলামিস্টদের উইশফুল থিংকিং কিংবা ডিনায়ালের কারণে এ সত্য বদলাবে না।

শিয়াদের পুরো প্রোপাগ্যান্ডা, তাদের তাকিয়্যাহ, তাদের অতি যত্নে তৈরি করা ভিকটিমহুডের ন্যারেটিভ টিকে আছে আমাদের এই অজ্ঞতা ও ইচ্ছা-অন্ধত্বের কারণে। এবং এই মিথ্যাচারের শুরুটা অনেক, অনেক পেছনে। শিয়াদের প্রপাগ্যান্ডার ভিত দাঁড়িয়ে আছে ৬১ হিজরিতে কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে তাদের মিথ্যাচারের ওপর। পুরো উম্মাহর মাঝে এমন কাউকে পাওয়া মুশকিল যে আহলুল বাইত এবং আল-হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-কে ভালোবাসে না। তাই উম্মাহর আবেগকে ব্যবহার করে উম্মাহকে বিভ্রান্ত করার জন্য কারবালার চেয়ে ভালো কোন চয়েস পাওয়া খুবই কঠিন। আর এ সুযোগ পুরোপুরি ব্যবহার করেছে রাফিদ্বিরা।

কারবালা নিয়ে এতো মিথ্যাচার হয়েছে যে আজ সত্যটা খুঁজে বের করা সাধারন মানুষের কাছে কঠিন মনে হয়। স্কুলের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে, পত্রিকার বিশেষ কলামে স্থান পায় শিয়া প্রপাগ্যান্ডা, আর নির্জলা বানোয়াট কল্পকাহিনী। তাই শিয়াদের মিথ্যাচারের ইতিহাস এবং কিভাবে আবেগকে ম্যানিপুলেট করে তারা নিজেদের ভিকটিমহুডের ন্যারেটিভ তৈরি করে আর সাধারন মূর্খ শিয়াদের বিভ্রান্ত করে সেটা বোঝার জন্য কারবালার সত্য ইতিহাস এবং এ নিয়ে তাদের মিথ্যাচারগুলো বোঝা জরুরী।

গত কয়েকদিনে আমাকে বেশ কয়েকজন বলেছেন শিয়াদের ব্যাপারে লিখতে বা এই ব্যাপারে ম্যাটেরিয়াল সাজেস্ট করতে। আপাতত হয়তো এদিকে খুব একটা সময় দেয়ার সুযোগ আমার হবে না, তবে কিছু সোর্স তুলে ধরার চেষ্টা করবো, যেখান থেকে আগ্রহীরা বিষয়গুলো জানতে পারবেন বিইযনিল্লাহ। শিয়াদের ব্যাপারে বাস্তবতা জানার জন্যে, আমার মতে প্রথম ধাপ হল কারবালা নিয়ে সঠিক ইতিহাস জানা। তা নাহলে বিষাদসিন্ধু টাইপ রূপকথা পড়ার কারণে তৈরি হওয়া ইমোশানাল ব্ল্যাকমেইলের প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল। কারবালা নিয়ে জানার জন্য আমার পারসোনাল সাজেশান হবে ‘কারবালা : বাস্তবতা বনাম কল্পকথা’ (Ilmhouse Publication, প্রকাশ ২০১৯)।

ছোট বই, টু দা পয়েন্ট, এবং সহজবোধ্য। বইতে ধারাবাহিক সাজানো হয়েছে কারবালার ব্যাপারে সহিহ বর্ণনাগুলো। রেওয়াতের পাশাপাশি পাঠকের বোঝার সুবিধার জন্য ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে সহজ ভাষায়। সেই সাথে চিহ্নিত করা হয়েছে বহুল প্রচলিত বেশ কিছু জাল বর্ণনা। সঠিক বর্ণনাগুলোর সাথে কিভাবে বানোয়াট কেচ্ছাকাহিনী যুক্ত করা হয়েছে সেটাও দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। হাইলি রেকোমেন্ডেড। অল্প সময়ে কারবালা নিয়ে সঠিক ইতিহাস জানার জন্য বাংলায় সম্ভবত এটা বেস্ট অপশান। সাধারন পাঠক, বোদ্ধা এবং গবেষক সবার জন্যই ইন শা আল্লাহ্‌ বইটা উপকারী হবে। যারা বই কিনতে পারবেন না, তারা মূল বইয়ের লেখকের নিচের আলোচনাটা শুনতে পারেন –
https://www.youtube.com/watch?v=FLJXM5W6IQo

ধারাবাহিকভাবে আরো কিছু বই/ভিডিও/লেকচারের আমি ইন শা আল্লাহ্‌ সাজেস্ট করার চেষ্টা করবো। সেই সাথে আমি অনুরোধ করবো, যারা দাওয়াহর কাজ করেন, সেটা যেই ফর্মেই হোক, তারা যেন এ বিষয়গুলো স্পষ্ট করার জন্য চেষ্টা করেন। সহজ সহজ অনেক বিষয় আমাদের অজানা থেকে যাচ্ছে, এবং আমরা সেইসব বিষয় বিভ্রান্ত হচ্ছি। এর কারণ হল, সাধারন মানুষের সামনে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে না। ফিকহী ইখতিলাফ নিয়ে যেভাবে সময় দেয়া হচ্ছে, তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় আক্বিদাহর বিষয়গুলো নিয়ে দেয়ায় প্রয়োজন। তা নাহলে প্রত্যেকে প্রতারণায় আমরা বিভ্রান্ত হতেই থাকবো।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *