‘মুসলিম ফেমিনিস্ট’ = মডার্নিস্ট


মানহাজের দিক থেকে ‘মুসলিম’ ফেমিনিস্ট-রা মডার্নিস্ট। কেউ বুঝে, বেশির ভাগ না বুঝে।

প্রথমে “ব্যক্তিস্বাধীনতা”,“ইন্ডিভিযুয়ালিসম”, “অধিকার”, “সমতা”র মতো ধারণাগুলোকে এবং নারীবাদের বেশ কিছু মৌলিক প্রস্তাবকে তারা গ্রহণ করে নেয় সত্য হিসেবে। অর্থাৎ তারা পথ চলা শুরু করে মডার্নিটির প্যারাডাইমকে সঠিক মনে করে।

তারপর এর ভেতরে বসাতে চায় ইসলামকে। তারা ইসলামের ‘সংস্কার’ চায় মডার্নিটির ছাঁচে।

একারণে ঘুরেফিরে তাদের মধ্যে কয়েকটা মডার্নিস্ট অবস্থান দেখবেন।

ক) তারা হাদীস শাস্ত্রকে অস্বীকার করবে।

কেউ সরাসরি অস্বীকার করবে, কেউ উলুমুল হাদীসকে ‘অনির্ভরযোগ্য’ বলবে, কেউবা তৈরি করে নেবে হাদীস গ্রহণবর্জনের মনমতো মাপকাঠি। ঘুরেফিরে মূল অবস্থান একই–নারীবাদ এবং মডার্নিটির লেন্সে যে হাদীসগুলো হাদীস অগ্রহণযোগ্য সেটা নাকচ করার একটা বৈধতা তৈরি করা।

খ) তারা ইসলামের ইলমী তুরাস বা সিলসিলাকে অস্বীকার করবে।

ফকীহ, মুহাদ্দিসিন, মুফাসসিরিন, সবার ক্ষেত্রে সত্য হলেও, বিশেষভাবে মুফাসসিরিনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ মুফাসসিরিনের কাছ থেকে আসা কুরআনের ব্যাখ্যা ধরে রাখলে বিভিন্ন আয়াতকে ইচ্ছেমতো ব্যাখ্যা করা যাবে না। একারণেই, ‘মুসলিম আলিমরা পুরষতান্ত্রিক ছিলেন’, ‘মুসলিম আলিমরা পুরুষতন্ত্রের লেন্সে কুরআনকে দেখেছেন, “পুরুষতন্ত্রের কাঠামোর ভেতর ফিকহ গড়ে উঠেছে’, এ জাতীয় কথাবার্তা দেখবেন।

গ) তারা সালাফুস সালিহিনের অবস্থানকে অগ্রাহ্য করবে।

হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে কিছু ঘটনাকে নিজেদের পক্ষে দলীল হিসেবে টানার চেষ্টা তারা করবে (“খাদিজা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা সিইও ছিলেন!”)। কিন্তু এটা অপুরটুনিস্টিক। একশোটা বিপরীত দৃষ্টান্ত বাদ দিয়ে নারীবাদের ফ্রেইমওয়ার্কের ভেতরে ব্যাখ্যা করা যায় এমন একটা অবস্থান খুঁজে খুঁজে বের করবে তারা। আর তখনও সেই ঘটনাকে উপস্থাপন করবে খুব ‘উদারভাবে’ কাটছাঁট করে। অন্যদিকে কুরআন-সুন্নাহ এবং দৈনন্দিন জীবনের আহকাম, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে ব্যাপারে সালাফুস সালিহিনের অবস্থানকে উপেক্ষা করবে ঢালাওভাবে।

ঘ) কুরআন-সুন্নাহর বক্তব্যকে হিস্টোরিসাইয (Historicize) করবে।

যেমন – কুরআনের আয়াত, হাদীসের বক্তব্য একটি নির্দিষ্ট স্থান-কাল-পাত্রের (ষষ্ঠ শতাব্দীর আরব মরুচারী বেদুইন সমাজ) ফলাফল ছিল। যার অর্থ হল, আধুনিক একবিংশ শতাব্দীতে এগুলো আক্ষরিকভাবে গ্রহণ করা যাবে না। যেহেতু স্থান-কাল-পাত্র বদলে গেছে। কুরআন-সুন্নাহর আক্ষরিক অনুসরণের মনোভাবের কারণে মূল শিক্ষা হারিয়ে গেছে। এখন মনোযোগ দিতে হবে অন্তর্নিহিত স্পিরিট পুনর্জীবিত করার দিকে – এ জাতীয় কথাবার্তা।

ঙ) নারীবাদের আলোকে কুরআন (ও সুন্নাহকে) ব্যাখ্যা করা অথবা কুরআন ও সুন্নাহর মধ্যে নারীবাদী চিন্তা আরোপ করে (back projecting)

আর নারীবাদ মডার্নিটির প্যারাডাইমের অংশ।

এসব কারণে, ‘মুসলিম ফেমিনিস্ট’রা তাই হাজির হয় বিচিত্র সব তাফসীর ও ব্যাখ্যা নিয়ে। যা অধিকাংশ মুসলিম (আলিম ও আওয়াম) প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিক্রিয়ায় বাড়তে থাকে ‘মুসলিম ফেমিনিস্ট’-দের ভেতরকার তিক্ততা। একসময় তা পরিণত হয় রাগ এবং অনেক সময় ঘৃণায়। এ ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু হয় আলিমগণ (কারন ‘তারা পুরুষতান্ত্রিক’), ইসলামী ইলমের ধারা এবং ঢালাওভাবে মুসলিম উম্মাহ। এই তিক্ততা এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার ছাপ দেখা যায় তাদের লেখা কিংবা বক্তব্যে।

কিন্তু সমস্যাটা আসলে বাইরে না। সমস্যাটা তাদের চিন্তার জগতে। দুটো সাংঘর্ষিক অবস্থানকে একইসাথে ধারণ করতে গিয়েই এতো ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। ইসলাম অথবা নারীবাদ – সমাধান চাইলে বেছে নিতে হবে যেকোন একটাকে। নিজেদের ধারণাগুলোকে মাপতে হবে ওয়াহির মানদণ্ডে, উল্টোটা না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *