পায়জামা খোলা এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ঘৃণা


কিছুদিন আগে একজন সাংবাদিক অভিযোগ করেছিল, হেফাযতের সদস্যরা নাকি তাকে কালেমা পড়ে মুসলিমানিত্বের প্রমাণ দিতে বলেছে। সেই বক্তব্যের জের ধরে অনেকগুলো সংবাদ প্রতিবেদন হয়েছে। দেশেবিদেশে ব্যাপকভাবে এই ঘটনা প্রচার করা হয়েছে। বাংলাদেশের সব রঙের সেক্যুলার সেলিব্রিটিরা সেই ঘটনা নিয়ে নানান তত্ত্ব আর বিশ্লেষণ লিখেছে।

আজ একজন হিন্দু ছাত্র অভিযোগ করছে পরনের পায়জামা-পাঞ্জাবী, গালের দাড়ি আর লম্বা চুলের কারণে রাস্তায় তাকে ‘হেফাযত কর্মী’ বলে সন্দেহ করা হয়েছে। সে যখন হিন্দু পরিচয়ের কথা বলেছে, তখন পায়জামা খুলে নিজের যৌনাঙ্গ দেখিয়ে ‘মুসলিম না’ হবার প্রমাণ দিতে বলা হয়েছে। প্রমাণ দিতে না পারলে তাকে ওখানেই অ্যারেস্ট করা হবে। শেষমেষ সেই ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডেন্টিটি কার্ড দেখিয়ে ছাড়া পেয়েছে। [ মূল পোস্ট সরিয়ে নেয়া হয়েছে, পোস্টে স্ক্রিনশট এবং আর্কাইভ লিঙ্ক কমেন্টে দেয়া হল]

দুটো ঘটনার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের মিল আছে। দুটো ঘটনার মধ্যে একটা দুর্বলতাও কমন-ঘটনার বর্ণনাসূত্র মাত্র একজন। তবে প্রথম গল্পের বর্ণনাকারী একজন সাংবাদিক, যারা জীবিকার জন্য পেশাদারীভাবে মিথ্যা বলে। তাছাড়া হেফাযত নিয়ে এই গল্প একটা পরিকল্পিত ন্যারেটিভের অংশ হিসেবে খুব সুন্দরভাবে খাপ খেয়ে যায়। অন্যদিকে দ্বিতীয় ঘটনার ক্ষেত্রে বর্ণনাকারীর পাবার তেমন কিছুই নেই। বরং ‘অনুমোদিত সত্য’-এর বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে তার ক্ষতির আশঙ্কা আছে। একারণে সহজ হিসেবে প্রথম গল্পের মিথ্যা হবার এবং দ্বিতীয় ঘটনা সত্য হবার সম্ভাবনা বেশি।

তবে ঘটনা আসলেই ঘটেছে কি না, সেটার চেয়ে বড় প্রমান হল ঘটনার প্রতিক্রিয়া। ধরে নিলাম কোন ঘটনাই ঘটেনি। তবু বাস্তবতা হল সিলেটের সেই সাংবাদিকের বক্তব্য নিয়ে অসংখ্য রিপোর্ট আর কমেন্টারি হয়েছে। কিন্তু MIST-এর এই ছাত্রের বক্তব্য নিয়ে কিন্তু কিছুই হবে না। পত্রিকা, টিভি চ্যানেলে কিংবা নিউস পোর্টালে প্রতিবেদন হবে না। কেউ ধিক্কার জানাবে না। বুদ্ধিজীবিরা আবেগে গদগদ হয়ে বিবৃতি কিংবা বিশ্লেষন দেবে না। সবাই দেখেও না দেখার ভান করে যাবে।

কারণ, বাংলাদেশের সমাজে; বিশেষ করে বাংলাদেশের শহুরে ‘শিক্ষিত’ সমাজে গভীরভাবে ইসলামবিদ্বেষ বিদ্যমান। কথাটা শুনতে একটু কাউন্টার ইন্টুইটিভ মনে হয়, কারণ এদের বড় একটা অংশ নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান এবং শিক্ষা নিয়ে এই মুসলিম নামধারী মানুষগুলোর তীব্র ঘৃণার প্রমাণ প্রতিনিয়ত পাওয়া যায়। দাড়ি, বোরকা, নিকাব, বিয়ে, বহুবিবাহসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে এরা নিয়মিত ঘৃণা প্রচার করে।

এই ঘৃণা সমাজে এতোটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে, যে এখন একজন মানুষকে গ্রেফতার করার জন্য-শুধু ‘হেফাযত ইসলামের সদস্য’ হওয়াটাই যথেষ্ট। কাউকে গুম করার জন্য শুধু শিবিরের সদস্য বলাটাই যথেষ্ট। কাউকে বিনা বিচারে, নিশ্চিন্তে মেরে ফেলার জন্য জঙ্গি বলাটাই যথেষ্ট। কোন অভিযোগ কিংবা অপরাধের প্রমাণ লাগবে না, কোন বিচার লাগবে না। অভিযোগ করাই যথেষ্ট। অভিযুক্তকে এখন প্যান্ট খুলে হলেও নিজেকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণ করতে হবে! আর এই সবকিছু নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না, কেউ টু শব্দ করবে না। বরং সমাজ বাহবা দেবে। সমাজ নিজ উদ্যোগে এই গ্রেফতারি, গুম কিংবা খুনের বৈধতা উৎপাদন করবে।

এই ঘৃণার কারণেই এতো সহজে কারো পায়জামা-পাঞ্জাবী নিয়ে কটাক্ষ করা যায়। বোরকা কিংবা নিক্বাবের জন্য কাউকে গালি দেয়া যায়। মুখে দাড়ি থাকার কারণে টিটকারী করা যায়, চাকরির বাজারে বৈষম্য করা যায়। এবং এই ব্যাপক ও বিস্তৃত ঘৃণার কারণেই মিডিয়া, বুদ্ধিজীবি, সেলিব্রিটি-কেউই অভিক শীলের অভিজ্ঞতা নিয়ে আওয়াজ করবে না, কিন্তু পেশাদার মিথ্যাবাদীদের বক্তব্য নিয়ে তুলকালাম করবে।

সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য এই ঘৃণা এবং এই ঘৃণার ফেরিওয়ালাদের মোকাবেলা করা ছাড়া বাংলাদেশে ইসলামের পরিচয় টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। ওরা চায় এই সত্যগুলো আড়াল করে রাখতে। ধামাচাপা দিতে। এই সত্যগুলো প্রকাশ করা, মুসলিমদের দায়িত্ব।

এপ্রিল ৮, ২০২১

#IslamophobiaBD


পোস্টের আর্কাইভ –https://archive.is/KaIY3


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *