অনুসরণ করে বিজয়ী হওয়া যায় না


আসুন একটা অঙ্ক মেলানো যাক।

আফ্রিকার দেশগুলোতে অপুষ্টির হার অনেক বেশি।

ইউরোপের দেশগুলোতে অপুষ্টির হার অনেক কম।

আফ্রিকার দেশগুলো গরিব আর ইউরোপের দেশগুলো ধনী।

আফ্রিকার দেশগুলো জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সুশাসন ও দুর্নীতি দমনের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে, ইউরোপের দেশগুলো এগিয়ে আছে।

অতএব, আফ্রিকার দেশগুলো গরিব হবার কারণ তাদের জনগণের অপুষ্টির হার বেশি হওয়া।

অন্যদিকে অপুষ্টির হার কম হবার কারণে ইউরোপের এত উন্নতি।

সুতরাং যদি আফ্রিকার দেশগুলো তাদের অবস্থার উন্নতি করতে চায়, তবে তাদের উচিত আগে অপুষ্টির হার কমানো। (প্রমাণিত)

তাই কি?

ওপরের ‘অঙ্কের’ সমীকরণ যে ভুল, সেটা মোটামুটি সবার বুঝতে পারার কথা। এখানে ভুলটা হলো কার্যকরণের দিক উল্টে ফেলা। ইউরোপের অপুষ্টির হার কম হওয়া তাদের ধনী হবার কারণ না; বরং ধনী হবার কারণে তাদের দেশগুলোতে অপুষ্টির হার কম। কিন্তু ওপরে অঙ্কে ফলাফলকে মনে করা হচ্ছে কারণ, আর কারণকে মনে করা হচ্ছে ফলাফল। সবাই হয়তো একবাক্যে ভুলটা কোন জায়গায় সেটা বলতে পারবেন না, কিন্তু সহজাতভাবে আমরা সবাই এ ভুল ধরতে পারি। মনের ভেতর খচখচ করে। কিন্তু অন্য অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা এ ধরনের অনেকগুলো ভুলকে আঁকড়ে ধরে সেই ভিত্তির ওপর ভুলের অট্টালিকা বানাই। ওপরের উদাহরণের লজিকাল ফ্যালাসি ধরতে পারলেও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ফ্যালাসির ওপর ভর দিয়ে আমরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করি।

এ সবকিছুর মূল কারণ হলো এ ধরনের মানুষগুলো একটি উপসংহারকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন। তারপর এ উপসংহারের সাথে মেলানোর জন্য বদলে নিচ্ছেন বাকি সবকিছু। ব্যাপারটা অঙ্কের মুখস্থ উত্তর লিখে তারপর উল্টো হিসেবে মেলাবার মতো। পশ্চিমা সভ্যতার মোকাবেলার বদলে তারা বেছে নিয়েছেন পশ্চিমের অনুসরণকে। আর যতক্ষণ উম্মাহ পশ্চিমের অনুসরণ করে যাবে উম্মাহ ততক্ষণ মানসিক দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারবে না। এ মানসিক দাসত্ব কেবল পরাজয়ের ফলাফল না; বরং আমাদের জন্য এখন এটা পরিণত হয়েছে শারীরিক দাসত্বের প্রধান কারণে। পশ্চিমাদের কাছে ইসলামকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করার বদলে প্রয়োজন পশ্চিমের বাস্তব অবস্থা মুসলিম উম্মাহর সামনে তুলে ধরা । গণতন্ত্র, পশ্চিমা মানবাধিকার, সেক্যুলার হিউম্যানিযম, ফেমিনিযম, পশ্চিমের সিস্টেম্যাটিক যৌনবিকৃতি, ট্রান্সজেন্ডার মুভমেন্ট, ব্যাংকিং সিস্টেম, পশ্চিমা সংস্কৃতির বিকৃতি, পশ্চিমা সমাজ ও রাষ্ট্রের ভাঙন–মানসিক দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসার জন্য পশ্চিমা সভ্যতার এসব ধারণার বাস্তবতা উম্মাহর সামনে বোধগম্য করে তুলে ধরা প্রয়োজন। উল্টোটা না।

কিন্তু যদি আমরা গোঁ ধরি অন্ধভাবে অনুসরণের, তাহলে শুধু আমাদের পরাজয়ের অধ্যায় দীর্ঘায়িতই হবে না; বরং যে অন্ধকার গহ্বরের কিনারে পশ্চিমা সভ্যতা পৌঁছে গেছে তাদের সাথে সাথে আমাদেরও জায়গা হবে তার তলদেশে।

বিজিত সব সময় বিজয়ীর অনুসরণ করে। অনুসরণ করে বিজয়ী হওয়া যায় না।


চিন্তাপরাধ। অডিও বুক । পর্ব ৩। চিন্তার জট

ইউটিউব লিঙ্ক – https://youtu.be/Br2VJkNov6Q
অডিওম্যাক – https://bit.ly/2MlSwpc
ডাউনলোড লিঙ্ক – https://bit.ly/2Iu9Qao

#চিন্তাপরাধ #সভ্যতার_সংঘাত #চিন্তার_জট


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *