আত্মসমর্পণের সূত্র


“আল-ক্বাদরের জ্ঞান আল্লাহ মানুষের কাছ থেকে দূরে রেখেছেন, এবং এ ব্যাপারে প্রশ্ন নিষিদ্ধ করে তাঁর কিতাবে বলেছেন, “তিনি যা করেন সে ব্যাপারে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না, বরং তারা জিজ্ঞাসিত হবে (তাদের কাজের ব্যাপারে)।” [আল-আম্বিয়া, ২৩]। সুতরাং যে এ ধরণের তর্ক করে যে “কেন আল্লাহ এটা করলেন, কেন আল্লাহ ওটা করলেন?” সে কিতাবুল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে গিয়েছে। আর যে কিতাবুল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধে গিয়েছে সে কাফির।
ইমাম আত্ব-ত্বাহাউয়ি, আল-আক্বিদা আত্ব-ত্বাহাউইইয়্যাহ

“অনেক সময় মুসলিমরা প্রশ্ন করে – কেন এটা ইসলামে হারাম, কেন ওটা ইসলামে হারাম? – আমাদের বোঝা উচিৎ যে আল্লাহ হলে আল-হাকিম (পরম প্রজ্ঞাময়)। তাই যা কিছুর তিনি নির্ধারণ করেছেন, যা কিছুর আদেশ তিনি দিয়েছেন, যা কিছু তিনি নিষিদ্ধ করেছেন অবশ্যই তার পেছনে উদ্দেশ্য আছে, আমরা সেটা অনুধাবন করি বা না করি। এটা বিশ্বাস করা আল্লাহর উপর বিশ্বাসের অংশ।
শায়খ আলি আত-তামিমি, শারহুল আক্বিদা আল-ওয়াসিতিয়্যাহ

অবশ্যই এমন অনেক বিষয় আছে যার আমাদের মানবিক বুদ্ধি, কল্পনা এবং চিন্তার অতীত। অবশ্যই এমন অনেক বিষয় আছে যা আমাদের কাছে অপন্দনীয়। অবশ্যই এমন অনেক বিষয় আছে যা যুগের সেন্সিবিলিটির সাথে খাপ খায় না, যুগের নির্ধারিত যুক্তি, বিজ্ঞান বা মানবতার সাথে মেলে না। কেন আল্লাহ ইসলামে দাসপ্রথা রাখলেন, কেন দাসীর সাথে সঙ্গমের বৈধতা দিলেন, কেন তাঁর ক্বুরআনে আল্লাহ শিরক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত ক্বিতালের নির্দেশ দিলেন, কেন আল্লাহ্‌র রাসূল সমকামিদের হত্যা করতে বললেন, কেন সমকামিদের উপর আল্লাহর লানত, কেন মুশরিক-কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না, কেন আল্লাহ জান্নাতে শুধু ছেলেদের জন্য হুরের ব্যবস্থা রাখলেন মেয়েদের জন্য না – এসব প্রশ্ন করা আপনার বা আমার দায়িত্ব না।

তিনি যা করেন সে ব্যাপারে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না, বরং তারা জিজ্ঞাসিত হবে (তাদের কাজের ব্যাপারে)।

আর এগুলোকে ইচ্ছেমতো ব্যাখ্যা করে মানুষের তৈরি করে মানদণ্ডে পাশ করানোও আমাদের দায়িত্ব না। সৃষ্টির প্রশ্নপত্রে স্রষ্টা পরীক্ষা দেন না। সমগ্র মানব ও জ্বিন জাতি, সমগ্র সৃষ্টি জগত একত্রিত হয়ে সবচেয়ে ভালো যে সিস্টেম তৈরি করতে পারে, যে নৈতিকতা বা চিন্তার কাঠামো তৈরি করতে পারে, আল্লাহ আযযা ওয়া জাল –এর দ্বীন তার চেয়ে অপরিসীম গুণে উত্তম। আমাদের দায়িত্ব শোনা ও মানা। আমার কাছে যৌক্তিক মনে হোক বা না হোক।

আল্লাহ দ্বীনের সমর্থনে কথা বলা খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু দ্বীন আপনার বা আমার সমর্থনের মুখাপেক্ষী না। দ্বীন কোন পশ্চিমা স্কলার বা সেলিব্রিটি দা’ঈর মুখাপেক্ষী না। দ্বীন পশ্চিমের অ্যাপ্রুভালের মুখাপেক্ষী না। তাই দ্বীনের সমর্থন করতে গিয়ে দ্বীনের বিকৃতি যেন আমরা করে না বসি। আর একথাগুলো দ্বীন ইসলামে খুব বেইসিক এবং বুনিয়াদি বিষয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এ বেইসিকগুলো আজ ভুলে যাচ্ছি। ইসলামকে আধুনিক, মানবিক, বৈজ্ঞানিক বা অন্য কোন কিছু প্রমাণ করা আমাদের দায়িত্ব না। আমাদের দায়িত্ব শোনা ও মানা। আর যদি কারো ভালো না লাগে তাহলে সে আল্লাহ্‌র সৃষ্টি জগতের বাইরে চলে যাক আর জান্নাতের পরিবর্তে অপর কোন চিরন্তন আবাস বেছে নিক।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *