‘ধর্মের অপব্যাখ্যা’ – ব্যাখ্যা দেবে কে?


সম্প্রীতি বাংলাদেশের কথা মনে আছে? ঐ যে, পত্রিকার প্রথম পাতায় বিজ্ঞাপন…জঙ্গি সনাক্তকরণে লিস্ট? আশা করি মনে পড়েছে। সেই বিখ্যাত বিজ্ঞাপনের একটা পয়েন্ট অনুযায়ী, জন্মদিন, গায়ে হলুদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন না করা, গানবাজনা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা জঙ্গি সদস্য হবার লক্ষন। একই ধরনের কথা, একই ধরনের রেটোরিক কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আওড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এবং সেক্যুলার ও প্রগতিবাদীরা। নির্বিঘ্নে, বুক ফুলিয়ে। ভ্যালেন্টাইন্স, পহেলা বৈশাখ, ২১শে ফেব্রুয়ারি কিংবা ১৬ই ডিসেম্বরে ফুল দেয়ার মতো ইভেন্টগুলোর ব্যাপারে ইসলামের জায়গা থেকে আপত্তি করা হলে সেক্যুলার-প্রগতিশীলরা হামলে পড়ে, বলে ধর্মের অপব্যাখ্যা হচ্ছে। উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা শেখানো হচ্ছে। অনেক বছর ধরেই এরা এমন বলে আসছে। তবে এরা সম্প্রীতির মতো অতোটা কালারড হয়নি।

সেক্যুলার-প্রগতিশীলদের এই আরগুমেন্টটার মূল অর্থের দিকে একটু তাকানো যাক।

সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত কোন আচার কিংবা প্রথার বিরুদ্ধে যদি ইসলামের জায়গা থেকে আপত্তি করা হয় তখন সেটাকে বলা হয় ধর্মের অপব্যাখ্যা।

কোন ধর্মের অপব্যাখ্যা? ইসলামের?

কিন্তু ইসলামের কোন ব্যাখ্যা সঠিক সেটা কে ঠিক করবে? অপব্যাখ্যা হচ্ছে, মুখস্থ বলে দিলেই তো হবে না। এখানে কিন্তু এক পক্ষ ধর্মের কথা বলছে না। দু পক্ষই ইসলামের ব্যাপারে একটা দাবি করছে।

এক পক্ষ বলছে কোন একটা কাজ করা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।

আরেকপক্ষ বলছে, না ঐ কাজ সাংঘর্ষিক তো না-ই, বরং সাংঘর্ষিক বলাটাই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা। এ দুই দাবির মধ্যে কোনটা ঠিক সেটা কে ঠিক করবে? কোন দাবি সঠিক সেটা কিসের ভিত্তিতে ঠিক করা হবে?

এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজায় সেক্যুলারদের আগ্রহ নেই। কারণ সহজ উত্তর হল এধরনের সব মতপার্থক্যের সমাধান করতে হবে কুরআন, সুন্নাহ এবং সালাফ আস-সালেহিনের অবস্থানের আলোকে। কিন্তু সেই সমাধানে সেক্যুলাররা সন্তুষ্ট না। সেই সমাধান মেনে নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই তারা এই আলোচনাতে যাবেই না। এ আলোচনাতে গেলেই তাদের মেনে নিতে হবে যে এই রাষ্ট্র এবং সমাজের অসংখ্য বিষয় ইসলামের সাথে, তাওহিদের সাথে সাংঘর্ষিক। আর সেটা মেনে নিলে তাদের ভাষ্যমতেই তারা রাতারাতি ‘জঙ্গি’ হয়ে যাবে।

তাই মুখে ‘ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা’ বললেও ওরা আসলে বোঝাতে চায় ইসলামের ভুল প্রয়োগ। কারণ ইসলামের প্রয়োগ কতোটুক পর্যন্ত জায়েজ হবে তার একটা ছক ঠিক করে রাখা আছে। সেই ছক ঠিক করে দিয়েছে সেক্যুলার রাষ্ট্র। এই ছক, এই সীমার বাইরে আসলেই সেটা ইসলামের ভুল প্রয়োগ। আমি যে পহেলা বৈশাখ কিংবা ভ্যালেন্টাইন্সের ব্যাপারে আপত্তি তুলছি, সেটা ইসলাম অনুযায়ী সঠিক কি না, সেটা তাদের কনসার্ন না। তাদের পয়েন্ট হল এটা সেক্যুলারিযম অনুযায়ী হালাল না। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রথা ও প্রচলনের ব্যাপারে ইসলামের জায়গা থেকে কথা বলা হারাম। এটা পাপ, সীমালঙ্ঘন। শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেক্যুলার রাষ্ট্র এই স্বাধীনতা মুসলিমদের দেবে না, দেয়নি।

কাজেই যখন বলা হয় ‘এগুলো ধর্মের অপব্যাখ্যা’ তখন আসলে ইসলামের জায়গা থেকে বলা হয় না, কথাটা বলা হয় সেক্যুলার ধর্মের জায়গা থেকে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *